হাতিয়ার পেয়েই পথে বাম, আসরে কংগ্রেসও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিধানসভার ভিতরে বিধায়কেরাই যখন আক্রান্ত, সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তার হাল তখন সহজেই অনুমেয়! বিধানসভার কক্ষে শাসক তৃণমূলের হাতে নিগৃহীত আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এক মহিলা বিধায়ক। সাসপেন্ড তিন বিধায়কের মধ্যে দু’জন সংখ্যালঘু, এক জন খাস জঙ্গলমহলের প্রতিনিধি! এবং তদুপরি শাসক দলের আক্রমণে আহত হয়ে দুই বিধায়ক হাসপাতালে!
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ব্যবহার করার জন্য একগুচ্ছ হাতিয়ার মঙ্গলবারের বিধানসভা থেকে হাতে পেয়ে গেল বিরোধী বামফ্রন্ট। এবং তার প্রয়োগও শুরু হল রাতারাতি। দিনভর বিধানসভা চত্বরে ধর্না দিয়ে বামফ্রন্ট পরিষদীয় দলের ব্যানার-সমেত মিছিল করে রাজভবনে গেলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে বাম বিধায়কেরা। তৃণমূলের দেড় বছরের জমানায় বাম বিধায়কদের এমন দলবদ্ধ ভাবে শহরের রাজপথে নামার দৃশ্য এই প্রথম। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ন্যক্কারজনক আক্রমণে’র প্রতিবাদে আজ, বুধবার বিকালে রাজ্যের সর্বত্র বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা হবে। |
দেবলীনা হেমব্রম এসএসকেএম-এ। —নিজস্ব চিত্র |
কাউন্সিল হাউস স্ট্রিট ধরে বৃষ্টির মধ্যে মিছিল করে যখন রাজভবনের দিকে এগোচ্ছেন সূর্যবাবু, আনিসুর রহমান, পরেশ অধিকারী, সুভাষ নস্কর, প্রবোধ সিংহেরা, উল্টো দিক থেকে ফিরছেন কংগ্রেসের কিছু বিধায়ক। রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে এ দিনের ঘটনা নিয়েই প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলেন তাঁরা। বামেদের আগেই! সারা দিনে বিধানসভার ভিতরে-বাইরে এ দিন বারবারই মিলে গেল বাম ও কংগ্রেসের পথ। অধিবেশনের মধ্যে দেবলীনা হেমব্রম, গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়েরা শাসক দলের হাতে আক্রান্ত দেখে কংগ্রেসই আগে ওয়াকআউট করেছিলেন। পরে বামেরা এ দিনের মতো অধিবেশন বয়কট করে বেরিয়ে আসার পরে বাইরে দু’দলের দেখা হয়ে গিয়েছে!
রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানিয়ে এসে কংগ্রেস ঠিক করেছে, আজ, বুধবার তাদের বিধায়কেরা হেলমেট পরে বিধানসভায় ঢুকবেন! সভায় থাকার মতো পরিস্থিতি আছে কি না, তা অবশ্য ঠিক হবে আজ সকালেই। একই ভাবে সূর্যবাবুও জানান, পরিস্থিতি দেখে তাঁরা সকালে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আরও কিছু মুলতবি প্রস্তাব এনে সরকারকে চেপে ধরার কৌশল তাঁদের তৈরি। এ বারের সংক্ষিপ্ত অধিবেশনে কংগ্রেস-বাম যুগলবন্দি সামলাতে শাসক শিবিরকে যে যথেষ্ট কসরত করতে হবে, তার ছবি প্রতিদিনই স্পষ্ট।
রাজভবন থেকে বেরিয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু বলেছেন, “সংসদীয় গণতন্ত্র এখানে আক্রান্ত। আমরা প্রথম থেকেই বলছি। রাজ্যপালই সংবিধান অনুসারে বিধানসভার অধিবেশন ডাকেন। তাঁকে গোটা ঘটনা জানিয়েছি। হয়তো তিনি সরকারকে কোনও বার্তা দেবেন।” সূর্যবাবুর অভিযোগ, “চাবিকাঠি আছে মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই। তিনি চাবি ঘোরালে যা যা হয়, তা-ই হচ্ছে! ওঁর অঙ্গুলি হেলন ছাড়া এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করি না!” বিধানসভার মধ্যে শাসক ও বিরোধী পক্ষের জন্য আলাদা নিয়ম হবে কেন, বাম বিধায়কদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না-গিয়ে একতরফা শাস্তি ঘোষণা করা হবে কেন প্রশ্ন তুলেছেন সূর্যবাবু।
কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়ার দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভার নেত্রী। তাঁর কাছে অনুরোধ, সংসদীয় গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষা করতে তিনি সভায় আসুন। স্পিকার এবং বিরোধী দুই দলের কাছ থেকে ঘটনা জানুন। শাসক দলেরও যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নিলে বিধানসভা কলঙ্কমুক্ত হবে না!” শাসক দলের মন্ত্রী এবং বিধায়কেরা কী ভাবে বিধানসভায় বিরোধীদের উপরে আক্রমণে জড়িয়ে পড়েছেন, লিখিত ভাবেই রাজ্যপালকে সে সব জানিয়ে এসেছেন কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব।
ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবাবু বিবৃতিতে বলেন, ‘বর্তমান শাসক দল যে গণতন্ত্রকে গুরুত্ব দিতে চায় না, তার নজির ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ প্ররোচনায় ব্যাপক ভাবে বিধানসভা ভাঙচুরের ঘটনাতেই পাওয়া গিয়েছিল। বর্তমান সরকার রাজ্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই গণতান্ত্রিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করার পদক্ষেপ করে চলেছে’। সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার বলেছেন, “বিধানসভায় যা হয়েছে, তার নজির এ রাজ্যের ইতিহাসে নেই! এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলবে।”
চলবেই! রাখে তৃণমূল, মারে কে! |