শীত পড়লেই, বছরের শেষ মাসে সরগরম থাকে বহরমপুরের রবীন্দ্রভবন। ঢুকলেই সুন্দর বাগান। চারপাশেই রয়েছে বেশ গাছপালা। পিছনে রয়েছে বড় চাতাল। শহরের কেন্দ্রস্থলে, প্রশাসনিক ভবনের সামনে রবীন্দ্রসদনের কাছাকাছিই জাতীয় সড়ক, স্টেশন এবং বাসস্ট্যান্ড। পিছনেই গার্লস কলেজের ভবন। একদিকে শিক্ষাভবন। পাশেই লালদিঘি।
এই পরিবেশটাই যেন পুজোর পর থেকে চলে যায় নাটকের হাতে। একের পর এক নাট্যমেলা। কলকাতা বা বিদেশ থেকে আসা প্রযোজনা, নিজেদের নাটক, সব মিলিয়ে ভরা উৎসব। তবে বহরমপুর একা নয়, মুর্শিদাবাদ জুড়েই চলবে নাট্যোৎসব। ১২ ডিসেম্বর বুধবার থেকে বহরমপুরে ঋত্বিকের ১৩ দিনের নাট্যোৎসব চলবে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। রঘুনাথগঞ্জের ‘নাট্যম্ বলাকা’ নাট্যদল ১৮-২২ ডিসেম্বর নিজস্ব প্রযোজনা-সহ পাঁচটি নাটক নিয়ে ২৬ তম নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছে। তার রেশ কাটতে না কাটতেই ২২-২৬ ডিসেম্বর কান্দি মহকুমার পাঁচথুপি উদয়ন নাট্যগোষ্ঠীর ত্রয়োদশ নাট্যোৎসব শুরু হবে। ফলে বড়দিন উৎসবের পাশাপাশি ডিসেম্বর নাট্যোৎসবের মাসও। |
নাট্যমেলার জন্য মঞ্চ সাজানো হচ্ছে বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে। —নিজস্ব চিত্র। |
পরপর এই নাট্যোৎসবে প্রতিদিন দর্শকের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। কী করে হয়? ঋত্বিকের মোহিতবন্ধু অধিকারীর বক্তব্য, “আমাদের নাট্যমেলা এখন বহরমপুরেরই নাট্যোৎসব। শহরের উৎসাহী মানুষেরা নিজেরাই এগিয়ে আসেন সফল করতে। তা ছাড়া, আমাদের বন্ধু সদস্যের সংখ্যাই প্রায় শ’চারেক।” উদয়নের বাসুদেব ঘোষের বক্তব্য, “আমাদের প্রস্তাবিত নাট্যমঞ্চ সেখানে অস্থায়ী মণ্ডপ বেঁধে নাটক করি। তাতে প্রতিদিনই বহু মানুষ আসেন। নানা পেশা তাঁদের। কিন্তু নাটকের উৎসাহে কোনও ঘাটতি নেই।” ভাল নাটক দেখার চোখ তৈরি হয়ে গিয়েছে দর্শকের। সারা বছর তো ভাল নাটক দেখা যায় না। তাই মানুষ অপেক্ষা করেন এই নাট্যোৎসবের জন্য।
নিহারুল ইসলামের কথায়, “এই নাট্যমেলাগুলি যেন মিলন মেলাও। লালগোলা থেকে রোজ বহরমপুরে গিয়ে নাটক দেখতে যাই এই সময়টা। দেখা হয়ে যায় অনেক বন্ধুর সঙ্গে। ভাল নাটক যেমন দেখতে পাচ্ছি, তেমনই অনেক ভুলে যাওয়া মুখকেও দেখতে পাচ্ছি। অপরিচিতদের সঙ্গে চা খেতে খেতেও দেখেছি নাট্যমেলার নতুন রূপ। আত্মীয়তায় জড়িয়ে পড়েছি।” আর এক দশর্ক সৌরভ চক্রবর্তীর কথায়, “আমার অফিসের এমন অনেকে দেখা পেয়েছি নাট্যোৎসবে, যাঁদের মনে হয়েছিল একেবারেই অন্য জগতের মানুষ।”
নাটকের হাত ধরে দেশের সীমানা মুছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২০০১ সালে বহরমপুরের ঋত্বিক নাট্যগোষ্ঠী আয়োজন করে ‘দেশবিদেশের নাট্যমেলা’। ঋত্বিক যেমন তাদের দেশবিদেশের নাট্যোৎসবে প্রতি বছর বাংলাদেশের নাটক মঞ্চস্থ করে থাকে, তেমনি বহরমপুরের যুগাগ্নি ও রঙ্গাশ্রম, রঘুনাথগঞ্জের নাট্যম্ বলাকা, পাঁচথুপির উদয়ন আয়োজিত নাট্যোৎসবেও দেশের সঙ্গে দেশের মৈত্রী বন্ধন গড়ে তোলার চেষ্টা দেখা যায়। |