|
|
|
|
|
|
|
বিশ্বভারতীর ইতিহাসে চিত্র-সফর |
তিন আচার্য |
একটি ছবি এবং একটি বইয়ের জন্মকথা। গল্পটার শিরোনাম এমনটাই হতে পারে। চল্লিশ দশকের গোড়ায় (ডান দিকের ছবি) শান্তিনিকেতন উদয়ন বাড়ির দরজার সামনে জওহরলাল নেহরু ও ইন্দিরা গাঁধী, নেহরুর কোলে রাজীব, নিতান্তই শিশু। বিশ্বভারতী-র আচার্য ও দুই সম্ভাব্য আচার্যের এই ছবিটি থেকেই একটি বইয়ের পরিকল্পনা মাথায় আসে নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিন আচার্যের ছবি, সংশ্লিষ্ট নথি আর চিঠি সংকলন করে এ বার প্রকাশিত হল সেই থ্রি চ্যান্সেলর্স: জওহরলাল ইন্দিরা রাজীব (নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত, টাইমলেস বুকস)। দীর্ঘ গবেষণার সেই ফসল নিয়েই এখন এই শহরে নীলাঞ্জন। নিছক তথ্য সংকলন নয়, বিশ্বভারতীর সঙ্গে তার তিন আচার্যের আন্তরিক সম্পর্কটাই তুলে ধরেছে এ বই। পদাধিকারের আনুষ্ঠানিকতার বাইরে তৈরি হয়েছিল সেই যোগাযোগ। যেমন ১৯৬২-তে লিখছেন জওহরলাল: প্রতি বছর বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে আসার জন্য তিনি অপেক্ষা করে থাকেন, এটি তাঁর কাছে ‘অ্যানুয়াল পিলগ্রিমেজ’। আটটি মূল অধ্যায়ে বিভক্ত বইয়ে বিশ্বভারতী-র প্রতিষ্ঠা, বিকাশ, শান্তিনিকেতন-বিশ্বভারতীর সঙ্গে জওহরলাল-ইন্দিরা-রাজীবের সম্পর্কের নানা দুর্লভ নথি ও ছবি সযত্নে সংকলিত। |
|
আছে জওহরলাল-রবীন্দ্রনাথ পত্রাবলিও। কিন্তু ছবিগুলি এর সবচেয়ে বড় সম্পদ। বিশ্বভারতী রবীন্দ্রভবন, দিল্লির নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি এবং ইন্দিরা গাঁধী মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সংগ্রহ থেকে নেওয়া ছবিগুলিতে শান্তিনিকেতনে নেহরু-ইন্দিরা-রাজীবের নানা ঘরোয়া মুহূর্ত। বিশ্বভারতীর পিকনিকে কোমরবেঁধে পরিবেশন করছেন ইন্দিরা, পাঠভবনের ছাত্রদের সঙ্গে এক টেবিলে ‘রাজীবদা’র মধ্যাহ্নভোজ, মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালা-র পড়ুয়াদের সঙ্গে খোশমেজাজে চাচা নেহরু, ইন্দিরার ব্যক্তিগত অ্যালবাম থেকে ১৯৩৪-৩৫-এ নৌকো করে শান্তিনিকেতন থেকে বেড়াতে যাওয়ার ছবি সব মিলিয়ে এ বই বিশ্বভারতীর ইতিহাসে এক আশ্চর্য চিত্র-সফর। সঙ্গে দেবলীনা মজুমদারের তোলা বাঁ দিকের ছবিতে সম্ভবত সেরা মজার মুহূর্তটি, পৌষমেলায় নাগরদোলায় জওহরলাল-ইন্দিরা।
|
শিল্পীর কাজ |
অসমের করিমগঞ্জে জন্ম খালেদ চৌধুরীর, ১৯১৯-এর ২০ ডিসেম্বর। ছবি আঁকা, মূর্তি গড়া আর লোকগানের সঙ্গে পরিচয় শৈশবেই। হেমাঙ্গ বিশ্বাস আনেন আইপিটিএ-তে। ১৯৪৪-এ কলকাতায় এসে শুরু করলেন বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকা-- যার সংখ্যা এখন প্রায় পনেরো হাজার। সঙ্গে শুরু ছায়ানাটিকার কোরিয়োগ্রাফি। নাট্যসূত্রেই পরিচয় শম্ভু মিত্রের সঙ্গে, বহুরূপী-র মঞ্চসজ্জা আবহ প্রচারচিত্রের দায়িত্বে এলেন। রক্তকরবী-র মঞ্চরচনার পর একে একে ডাকঘর, পুতুলখেলা, পাগলা ঘোড়া। শ্যামানন্দ জালানের আধে আধুরে, বল্লভপুর কি রূপকথা এমন আরও কত। ১৯৮৬-তে সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার আর এ বার পদ্মভূষণ। এই উপলক্ষে রংরূপ-এর উদ্যোগে এবং পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের সহায়তায় গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় প্রদর্শিত হচ্ছে তাঁর ছবি, মঞ্চের সেট-মডেল ও কাজের নানা সামগ্রী। শেষ হচ্ছে আগামিকাল।
|
নাট্য উৎসব |
বঙ্গে সুনাট্য রঙ্গ। শুরু হতে চলেছে নান্দীকার জাতীয় নাট্য উৎসব। আজও দিনমণির উদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই এর একটি টিকিটের জন্য কলকাতা লাইন দেয়। অ্যাকাডেমির মূল ফটক থেকে প্রেক্ষাগৃহের দরজা পর্যন্ত আলো করে থাকে উজ্জ্বল নাট্যব্যক্তিত্বের ছবি। আর দর্শকের স্মৃতিতে থাকে গত ২৮টা নান্দীকার-ফেস্টিভ্যালের অভিজ্ঞতা। ১৬-২৫ ডিসেম্বর অ্যাকাডেমিতে উৎসব, উদ্বোধন করবেন শঙ্খ ঘোষ। মোট ২০টি-র মধ্যে অসম, চণ্ডিগড়, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, ওড়িশা, বাংলাদেশ থেকে আসছে নতুন নাটক, স্বাদবদলের নাটক। প্রথম দিন, চণ্ডিগড়ের নাটক ‘রোমিয়ো জুলিয়েট অ্যান্ড সেভেন ক্লাউনস’। না, হুবহু শেক্সপিয়র নয়। আছে ‘রাম সজিভন কি প্রেমকথা’, ‘আত্মকথা’ (মহেশ এলকুঞ্চওয়ার), ‘অ্যাক্রস দ্য সি’, ‘দ্য টেম্পেস্ট’, ‘চরণদাস চোর’, ‘দ্য গ্রিন সার্পেন্ট’... কত কী। থাকছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নাটক, মোহিত চট্টোপাধ্যায় ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রদর্শনীও।
|
সংরক্ষণ |
এ বঙ্গে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা সংগ্রহ নেহাত কম নয়! সংগৃহীত হয়েছে পট-পাটা চিত্র, পাণ্ডুলিপি, ধাতু ভাস্কর্য, পোড়ামাটির শিল্প। সকলেই সরকারি সাহায্য পায় না, সীমিত সাধ্যে সংরক্ষণ তাই বড় সমস্যা। সমাধানে এগিয়ে এসেছে জোকার গুরুসদয় সংগ্রহশালা। ১৩ ডিসেম্বর সেখানে শুরু হচ্ছে ‘কনজার্ভেশন অব কালচারাল হেরিটেজ’ কর্মশিবির, চলবে ১৫ পর্যন্ত। উপস্থিত থাকবেন ভারতীয় সংগ্রহালয় অধিকর্তা অনুপ মতিলাল, লখনউয়ের ন্যাশনাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ফর কনজার্ভেশন-এর নির্দেশক বি ভি খাড়বাড়ে, এবং অন্য বিশেষজ্ঞরা।
|
মউমিতা-র ছবি |
কংক্রিটের জঙ্গলে আটকে থাকা এক বালকের উড়তে চাওয়া নিয়ে ছবি করেছিলেন মউমিতা ভট্টাচার্য ‘উড়ুক্কু’। ছোট হলে কী হবে, সে ছবি করে, কল্পনায় ভর দিয়ে ছবি বানানোতেই মন দিয়ে ফেললেন তিনি, ছেড়ে দিলেন শিক্ষকতার চাকরি। ছেলেবেলা থেকেই অভিনয় করতেন নিয়মিত, পরে সাহিত্যের বিশ্বস্ত অনুবাদক ইয়েটস থেকে হানিফ কুরেশি। ইতিমধ্যেই তাঁর ঝুলিতে আরও দু’টি প্রশংসিত ছোট ছবি, ‘হে প্রেম’ ও ‘বাবা মা অ্যান্ড আই’। হালের ছবিটি ‘আহাম্মক’, এক আশঙ্কিত মানুষের সাহসে ফিরে আসার কাহিনি। অর্জুন শর্মার সঙ্গে তাঁর তৈরি এ-ছবি দেখানো হবে ১১ ডিসেম্বর নন্দনে, বিকেল সাড়ে তিনটেয়, চিত্রবাণী ও নন্দনের যৌথ উদ্যোগে নবম কলকাতা শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে।
|
স্মরণ |
১৯২০-তে ঢাকা-য় জন্ম, ১৯৪০-এ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বেআইনি অবস্থায় সদস্যপদ অর্জন। ইতোমধ্যে সিনেমাটোগ্রাফির চর্চা ও অর্থনীতির পাঠ। ‘জনযুদ্ধ’-র সম্পাদকীয় বিভাগ হয়ে সোমনাথ লাহিড়ীর নেতৃত্বে দৈনিক ‘স্বাধীনতা’-য় সাংবাদিকতা বিভাগে, পরে ‘স্বাধীনতা’-র সম্পাদকমণ্ডলীতেও জায়গা করে নেন অজিত রায়। চিরকাল নিজের বৌদ্ধিক বিবেককে জাগরুক রাখার চেষ্টা করেছেন তিনি। পার্টিভাঙন যখন ঠেকানো গেল না, তখন গড়লেন ‘কমিউনিস্ট ইউনিটি কমিটি’ (১৯৬৪)। প্রথমে সান্ধ্য দৈনিক ‘প্রতিদিন’ ও মে ১৯৬৬ থেকে মাসিক ‘দ্য মার্কসিস্ট রিভিউ’ প্রকাশ করেন। তাঁর প্রয়াণের (২০১১) বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ১৫ ডিসেম্বর সাড়ে পাঁচটায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতী সভাগৃহে একটি স্মারক সংকলন প্রকাশ করবেন অশোক মিত্র। এতে থাকছে অজিত রায়ের নানা লেখা। সে দিনই প্রথম ‘অজিত রায় স্মারক বক্তৃতা’ দেবেন শোভনলাল দত্তগুপ্ত, বিষয়: ঐতিহ্য, আধুনিকতা এবং ভারতীয় বামপন্থা।
|
আত্মপ্রকাশ |
দ্বন্দ্ব-জর্জরিত এক সংবেদনশীল নারীকে নিয়ে কুশীলব-এক নতুন উত্তরাধুনিক প্রযোজনা ‘নাটকের মতো দেখতে’। পতিদেব বলেন, তিনি চিরকালীন, আর তরুণ প্রেমিকের সবেতেই চটজলদি। এই দোটানায় নারীর পরিচয় যায় হারিয়ে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় কিছু মানুষের আদিম প্রবৃত্তির তাড়না আর এক অদ্ভুত ষড়যন্ত্র। পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ গ্রুপ থিয়েটারের অনেক দিনের কর্মী বৈশাখী মার্জিতের। নাটকটির নান্দনিক নির্মাণে সহায়তায় শিল্পী শুভাপ্রসন্ন এবং ভূমি-খ্যাত সৌমিত্র রায়। আবহসঙ্গীতে মিঠুন। উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের এই নাটক হবে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ ১৫ ডিসেম্বর সন্ধে সাড়ে ছ’টায়।
|
রাই-কৃষ্ণ পদাবলি |
ভানুসিংহ ঠাকুর আর বিদ্যাপতি দুইয়ের মিশেলে তৈরি হয়েছে ‘রাই-কৃষ্ণ পদাবলি’। বাংলাদেশের লেখক শেখ হাফিজুর রহমানের এই নিরীক্ষা এ বার নাচের মঞ্চে। ঠিক প্রথাগত নৃত্যশৈলী নয়, মাল্টিমিডিয়া অপেরার মাধ্যমে ‘প্রেমহীন এই সময়ে’ ‘রাই-কৃষ্ণ পদাবলি’ উপস্থাপন করবেন কোরিয়োগ্রাফার সুকল্যাণ ভট্টাচার্য। ১১ ডিসেম্বর সন্ধে সাড়ে ছ’টায় জি ডি বিড়লা সভাগারে, ‘সাতকাহন’, ‘সুকল্যাণ ডি এনট্যুরেজ’ আর ‘নৃত্যাঞ্চল’-এর আয়োজনে। ভাষ্যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেবাশিস বসু। গানে হৈমন্তী শুক্ল, অন্তরা চৌধুরী, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোময়, স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, ইন্দ্রাণী সেন এবং জয়তী চক্রবর্তী। সুকল্যাণ নিজে ‘ভানুসিংহ’-র ভূমিকায়।
|
কবির সম্মানে |
মধ্যরাতের কলকাতা শাসন করতেন কৃত্তিবাস-গোষ্ঠী, আর তারই এক কবির গৃহিণী-কবি সটান লিখেছিলেন: ‘কৃত্তিবাস/ তুই কী চাস/ ঘর গেরস্ত/ চিবিয়ে খাস... কৃত্তিবাস/ রেশমি ফাঁস/ ভেট নিয়ে যা/ আমার লাশ।’ উচ্চকিত, চিৎকৃত প্রতিবাদ নয়, এমন অমোঘ উচ্চারণই যাঁর কবিতার বৈশিষ্ট্য সেই বিজয়া মুখোপাধ্যায় পঁচাত্তর পেরিয়েছেন। ১১ মার্চ ১৯৩৭-এ জন্ম ঢাকা বিক্রমপুরে। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে প্রথাগত পড়াশোনা ও অধ্যাপনা। তবু কবি হিসেবেই তাঁর সব থেকে বড় পরিচয়। ১৯৬৭-তে কৃত্তিবাস প্রকাশনী থেকে প্রথম বই, আমার প্রভুর জন্য, বিজয়া দাশগুপ্ত নামে, তখনও বিয়ে হয়নি শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। মোট বইয়ের সংখ্যা এ পর্যন্ত ২১। লিখে চলেছেন এখনও। দীর্ঘ এই সৃজন-জীবনকে সম্মান জানাতে তাঁর চিঠি, নতুন কবিতা, বইয়ের প্রচ্ছদ-সহ সেজে উঠেছে ‘অহর্নিশ’ পত্রিকা। ১৫ ডিসেম্বর বাংলা আকাদেমি সভাঘরে এটি প্রকাশ করবেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কবির সংবর্ধনা ও কবিতাপাঠও থাকছে। সঙ্গে নাট্যগবেষক জগন্নাথ ঘোষের ৭৫ বছর উপলক্ষে তাঁর নামাঙ্কিত স্মারক বক্তৃতা ‘থিয়েটারে নতুন ভাষার খোঁজে’, বলবেন দেবেশ চট্টোপাধ্যায়।
|
সেই বাড়ি |
পঞ্চাননতলা মোড় থেকে ব্রিজে উঠলে অজান্তেই চোখ টানে বাঁ দিকের নিস্তব্ধ বাড়িটি। অন্ধকারে ঠাওর হয় না। ভাল করে বোঝার আগেই চোখের আড়াল। মুহূর্ত পরে সব আবার স্বাভাবিক। স্বাভাবিক দিনের আলোতেও। পাশের প্রেক্ষাগৃহে কচিকাঁচাদের আনাগোনা, রাস্তায় ব্যাডমিন্টন। সামনের গলির বাসিন্দাদের জীবনও আগের মতোই। এই বাড়ি থেকেই হারিয়ে গিয়েছিল ৯৩টি প্রাণ। বীভৎস অগ্নিকাণ্ডের পর ৩৬৬ দিন অতিক্রান্ত। থানা, পুলিশ, আদালত, হাসপাতাল, মর্গ পেরিয়ে কলকাতা পুরনো চেহারায়। প্রায় আগের মতো। শুধু সেই বাড়ি ফারাক গড়ে তোলে কিছু পরিবারের কাছে। হয়তো বা পথচলতি কিছু মানুষকেও মুহূর্তে মনে করিয়ে দেয় ২০১১-এর ৯ ডিসেম্বর। বেলঘরিয়ার অলক চৌধুরীর স্ত্রীর কথায়, ‘মেয়ে ওই রাস্তা দিয়ে যেতে পারে না। কখনও দরকার পড়লে ঘুরপথে যায়। কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে করে ভোরবেলা উঠে বাড়িটা এক বার দেখে আসব, যদি মানুষটাকে খুঁজে পাওয়া যায়।’
|
নির্যাতনের বিরুদ্ধে |
২৫ নভেম্বর ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন বিরোধী দিবস’ ও ১০ ডিসেম্বর ‘বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’। বিশ্বজুড়ে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে এই পক্ষকালে দেখা গেল নানা উদ্যোগ। ২০১১-য় নারী নির্যাতনে এ দেশে শীর্ষস্থানে পশ্চিমবঙ্গ। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বয়ম এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ায় শামিল গত ১৭ বছর। এ বারও পণপ্রথা, নাবালিকা বিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়তে বা যৌন হেনস্থা রুখতে ছিল নানা কর্মসূচি। দৃষ্টান্ত গড়ে তুলতে মেটিয়াবুরুজে বস্তিবাসীদের মধ্যে যে পরিবারের কেউ পণ ছাড়া বিয়ে করেছে এবং মেয়েটি সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারছে, এমন দুটি পরিবারকে বেছে নিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। পণ না নিয়ে বিয়ে করার শপথ নিয়েছেন ৫০ জন তরুণ।
|
অনু থেকে অপালা |
বিয়ে। মেয়েদের জীবনে সবচেয়ে বড় লটারি। ক্লিক করলে বেঁচে গেলে, নইলে বিচ্ছেদ বা বয়ে নিয়ে চলা। ষাটের দশকে যেমনটা বয়েছিল অপালা। ফুলশয্যার রাতে প্রথম স্বামীকে দেখে জানতে পারে স্বামী রাধাভাবে মগ্ন। মেনে নিতে হয় তাকে। স্বামীর সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে মা হলেও আতঙ্কে থাকে সে। মা হওয়ার রহস্য যেন ফাঁস না হয়ে যায়। এই অপালাই শাশুড়ির ভূমিকায় অন্য মেয়ে। ছেলে বিদেশিনীকে বিয়ে করতে চায়। অপালা নারাজ। মেয়েদের বঞ্চনা, সমাজের বিধিনিষেধ... এই গল্প বলতেই শতরূপা স্যানাল আবার ক্যামেরার পেছনে। ‘হঠাৎই গল্পটা হাতে আসে। মনে হল বড় ছবির বীজ লুকনো।’ ‘অপালা’র চরিত্রে দেখা যাবে মেয়ে ঋতাভরী ও রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে। ঋতাভরীর জন্যই কি এই ফিরে আসা? ‘একদমই না। মনে হল, অপালার কমবয়সি চরিত্রে ওকে মানাবে। যেমন রূপার ব্যক্তিত্ব আর চোখের বিষণ্ণতা মধ্যবয়সি ‘অপালা’র সঙ্গে মানানসই’। শতরূপা জানালেন, ‘সোজাসাপ্টা ভাবে গল্প বলব।’ ছবিতে ব্যবহার করেছেন কীর্তন। তরুণ স্কুল শিক্ষক রাজীব দাসের গল্প, প্রযোজক সুদীপ্ত রায়চৌধুরী, সঙ্গীত পরিচালক অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় এক ঝাঁক তরুণ প্রতিভাকে নিয়ে ‘অনু’ থেকে ‘অপালা’য় শতরূপা। শুটিং শুরু ডিসেম্বরের শেষে।
|
|
|
|
|
বিপ্লবী |
মাত্র সতেরো বছর বয়সে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের অনুপ্রেরণায় যুগান্তর দলের সঙ্গে যুক্ত হন। একমাত্র লক্ষ্য পরাধীন দেশকে সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করা। চট্টগ্রামে ১৯১১-র ১০ জানুয়ারি জন্ম বিনোদবিহারীর। বাবা কামিনী চৌধুরী ছিলেন ব্যস্ত আইনজীবী, মা বামাদেবী। মেধাবী ছাত্রটি স্থানীয় স্কুল ও কলেজে পড়া শেষ করে বিপ্লবী দলে যুক্ত হওয়ায় বাবা অখুশি। বাবার ইচ্ছে ছেলে এম এ পাশ করে ভাল চাকরিতে ঢুকবে। কিন্তু ছেলে ক্রমশই যুগান্তর গোষ্ঠীর তারকেশ্বর দস্তিদার, অরুণ গুপ্তর সাহচর্যে জড়িয়ে পড়লেন বিপ্লবী আন্দোলনে। ১৯৩৩-এ গ্রেফতার হয়ে চট্টগ্রাম জেলে। সহবন্দি ছিলেন মাষ্টারদা সূর্য সেন। টানা পাঁচ বছর ছিলেন চট্টগ্রাম, আলিপুর, বহরমপুর আর দেউলি জেলে। ’৩৮-এ চট্টগ্রাম জেল থেকে মুক্ত হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম এ করেন। বেলাদেবীকে বিয়ে করার কিছু দিনের মধ্যে ফের গ্রেফতার হন ১৯৪০-এ। পাঁচ বছর পর মুক্তি পান। ইতিমধ্যে বেলাদেবী গাঁধীজির নোয়াখালি পদযাত্রায় সঙ্গী হন। স্বাধীনতার পরেও গ্রামের বন্ধুদের কথা দেওয়ায় ভিটে ছেড়ে আসেননি বিনোদবিহারী। সম্প্রতি কনিষ্ঠ পুত্রের মৃত্যুর পর ঘুরে গেলেন কলকাতায়।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের এই একমাত্র জীবিত বিপ্লবীর শতবর্ষ উপলক্ষে ২০১০-এ চট্টগ্রামে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর স্মৃতিগ্রন্থ অগ্নিঝরা দিনগুলি ও তপতী রায়ের লেখা জীবনীগ্রন্থ বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী। তিনি সংবর্ধিত হয়েছেন বাংলাদেশের নানা প্রান্তে, এ দেশেও। |
|
|
|
|
|
|