সমুদ্র-দানবী সুনামির প্রতাপে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছিল জাপানের ফুকুশিমা পরমাণু চুল্লিতে। তবে ভারতের পরমাণু চুল্লিতে তেমন কোনও বিপদের আশঙ্কা নেই বলে আশ্বস্ত করলেন পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবিবার সায়েন্স সিটিতে আইআইটি-র প্রাক্তনীদের সম্মেলনে শ্রীকুমারবাবু জানান, ফুকুশিমায় সুনামির পরে দুর্ঘটনা ঘটেছিল পরমাণু চুল্লিতে হঠাৎ উৎপাদিত প্রচণ্ড তাপ নিষ্কাশনের উপায় না-থাকায়। ভারতের পরমাণু চুল্লিতে সেই দুর্বলতা নেই। কোনও কারণে হঠাৎ প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন হলে তা নিষ্কাশনের জন্য এখানকার চুল্লিতে রয়েছে ‘থার্মো সাইফন’ বা দ্রুত তাপ নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। এবং নিষ্কাশনের এই প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়। কাউকে দাঁড়িয়ে থেকে এটা পরিচালনা করতে হয় না। |
|
|
শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় |
বিকাশ সিংহ |
|
আলোচনাচক্রের শিরোনাম ছিল ‘বিকল্প শক্তি ফুকুশিমা-উত্তর পরিস্থিতিতে ভারতের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার সমাধান কি পরমাণু জ্বালানি?’ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রাক্তন প্রধান জোর সওয়াল করলেন পরমাণু জ্বালানির পক্ষেই। এ ব্যাপারে জনমানসে সব চেয়ে বড় ভয় যে-বিষয়টি ঘিরে, সেই তেজস্ক্রিয়তার অভিযোগও উড়িয়ে দিলেন তিনি। আইআইটি-র প্রাক্তনীদের উদ্দেশে শ্রীকুমারবাবু বললেন, “আপনারা অনেকেই এসেছেন বিমানে। জানেন কি, এই বিমানযাত্রায় আপনারা শিকার হয়েছেন মহাবিশ্ব থেকে আসা রশ্মির তেজস্ক্রিয়তার।” শ্রীকুমারবাবুর মতে, নানা কারণে প্রকৃতিতে আপনা-আপনি যে-পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে রয়েছে, পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে সেই তেজস্ক্রিয়তা বাড়ে ১৪০০ ভাগের এক ভাগ মাত্র।
শ্রীকুমারবাবু জানান, ভারতকে পশ্চিমের উন্নত দেশগুলির পাশাপাশি দাঁড়াতে হলে মাথাপিছু যে-মাত্রায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করা দরকার, পরমাণু বিদ্যুৎ ছাড়া তাতে পৌঁছনোর উপায় নেই। বিকল্প শক্তি হিসেবে সূর্যের তাপ ব্যবহারের কথা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে সেটা অসুবিধাজনক। অসুবিধার মূল কারণ, সূর্যের তাপ সব সময় সব জায়গায় নিরবচ্ছিন্ন ভাবে মেলে না। তাই সৌর বিদ্যুতের প্ল্যান্ট থেকে লাগাতার বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। প্ল্যান্টের নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা এবং বাস্তবে উৎপাদনের পরিমাণের মধ্যে ফারাক থেকেই যায়।
আলোচনাচক্রের দ্বিতীয় বক্তা বিকাশ সিংহ অনেক ছবি দেখিয়ে বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপদের কথা তুলে ধরেন। এবং সেই সূত্রে বিশুদ্ধ জ্বালানি হিসেবে পরমাণু বিদ্যুতের প্রয়োজনের কথা বলেন। তিনি জানান, এক সময় ভারতে কয়লা খনির ৮০০ কিলোমিটারের মধ্যে পরমাণু চুল্লি বসানো হত না। কারণ মনে করা হত, খনির অত কাছে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে সেটা পরমাণু বিদ্যুতের থেকে সস্তা হবে। কিন্তু এ দেশে কয়লার মানের ক্রমাবনতি এবং অন্য কিছু কারণে খনির ৮০০ কিলোমিটারের মধ্যেও পরমাণু বিদ্যুৎ হয়ে দাঁড়িয়েছে কয়লা থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের চেয়ে সস্তা। বিকাশবাবুর খেদ, ‘‘হরিপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু কাজ তেমন ভাবে এগোচ্ছেই না।’’ ভবিষ্যতের পরিবেশ-সমস্যার দিক থেকেও পরমাণু বিদ্যুৎ শ্রেয় বলে মন্তব্য করেন বিকাশবাবু।
আলোচনাচক্রের সভাপতি, বিজ্ঞানী পার্থ ঘোষ স্মরণ করিয়ে দেন, সত্যিকারের বিশুদ্ধ জ্বালানি হল ‘ফিউশন’ প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত তাপ। যা প্রতি মুহূর্তে তৈরি হচ্ছে সূর্যের মতো নক্ষত্রে। দুঃখের বিষয়, বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা ফিউশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা চালালেও ব্যবহারিক সাফল্য এখনও মেলেনি। |