সিঙ্গুর নিয়ে আক্রমণাত্মক সিপিএম
অন্যত্র কেনা হোক ১৩৫ একর, বললেন বিমান
সিঙ্গুর-সমাধান যতই পিছিয়ে যাচ্ছে, ততই আক্রমণাত্মক হচ্ছে সিপিএম।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার সিঙ্গুরে গিয়েও সাধারণ মানুষের মুখোমুখি না হওয়ায় সিপিএম যে আরও কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় চলে গেল, শনিবার দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর কথায় তা স্পষ্ট। সিঙ্গুরের চাষিদের অন্যত্র ১৩৫ একর জমি কিনে দিয়ে সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন বিমানবাবু। বস্তুত, সিপিএমের বর্তমান নীতি হচ্ছে, ক্রমেই মমতার উপরে চাপ বাড়ানো। যাতে তিনি ৪০০ একরের দাবি থেকে সরে আসেন। পাশপাশি সিঙ্গুরে শিল্প গড়ার দাবিও সিপিএম ছাড়ছে না।
শনিবার বীরভূমে আদিবাসী মঞ্চের এক অনুষ্ঠানে বিমানবাবু বলেন, “তৃণমূলের প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের কথাতেই পরিষ্কার, সিঙ্গুরে ৪০০ একর নয়, ১৩৫ একর জমি নিয়েই সমস্যা। কিন্তু ওখানকার জমি এখন বিচারাধীন। তাই তা নিয়ে কেউ চূড়ান্ত কথা বলতে পারেন না।” মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গুরের জমি ফেরত দেওয়ার কথা বহু বার বলেও তা ফেরত দিতে পারেননি, তা জানিয়ে বিমানবাবু বলেন, “মাঝখান থেকে চাষিদের যন্ত্রণা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশপাশের ১৩৫ একর জমি কিনে দিয়ে দিলেই ল্যাঠ্যা চুকে যায়। তখন জমি দিয়ে দিলাম, এ কথাও উনি জোর গলায় বলতে পারবেন।” বাম আমলে সিঙ্গুরের জমি-জট কাটাতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-মমতাকে বৈঠকে বসিয়েছিলেন সিপিএম নেতা গৌতম দেব। বিমানবাবুর কথা সমর্থন করে তিনি বলেন, “রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থেই মমতাকে ৪০০ একরের দাবি ছাড়তে হবে। উনি নিজেও জানেন চাষিদের দেওয়ার মতো ৪০০ একর জমি নেই।”
তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সিপিএম মমতার উপরে চাপ সৃষ্টি করছে বুঝতে পেরেই তৃণমূল নেতারা তাঁদের পুরনো অবস্থানকেই আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরতে চাইছেন। কৃষিমন্ত্রী বেচারাম মান্নার কথায়, “সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক এবং বর্গাদার মিলিয়ে জমি ফিরিয়ে দিতে গেলে ৪০০ একর জমিই লাগবে।” বেচারামের বিশ্বাস, আদালতের রায় চাষিদের বিপক্ষে যাবে না। বিমানবাবুর প্রস্তাবকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “জমি চাষিদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলেই আমাদের কথার সত্যতার প্রমাণ দেব। মুখে অনেকেই অনেক কিছু বলতে পারেন।”
‘পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী অধিকার মঞ্চ’-এর রাজ্য কমিটির অধিবেশনে
বিমান বসু। বীরভূমের পাড়ুইয়ে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
কেবল সিপিএম নয়, কংগ্রেসও সিঙ্গুর নিয়ে তৃণমূলের উপরে চাপ বাড়াচ্ছে। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি এ দিন বলেন, “শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান প্রমাণ করে দিয়েছে, সিঙ্গুরের মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর দলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।” বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গুরে গিয়েও কেন জনসভা করলেন না, তা নিয়ে নানা মহলে কথা উঠছে। অস্বস্তি এড়াতে এ দিন দীপার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “যারা সব বিষয়েই সরকারকে বাধা দিচ্ছে, সমালোচনা করছে এবং তা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে, তাদের কথার উত্তর আমি দিই না।’’ খাদ্যমন্ত্রী জানান, সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক ৩৭৪৪ জন চাষি নিয়মিত সরকারি সাহায্যের চাল পাচ্ছেন। আরও ছ’ মাস বাড়িয়ে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত তাঁদের চাল দেওয়া হবে। কেন সিঙ্গুরে গিয়েও মমতা সভা করলেন না? মুখ্যমন্ত্রীর কাছে খবর ছিল, তাঁকে কালো পতাকা দেখানো হতে পারে। এ ব্যাপারে তাঁকে সতর্ক করেছিল রাজ্য গোয়েন্দা শাখা (ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ)। বুধবার আইবি-র ওই রিপোর্ট পরের দিন সকালে পৌঁছয় মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। রিপোর্টে বলা হয়েছিল, সিঙ্গুরের মানুষের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ জমা হয়েছে। ফলে মুখ্যমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখানো হতে পারে। এমনকী, তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগানও উঠতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচিতে গণ্ডগোলের আশঙ্কার কথাও জানায় আইবি।
বৃহস্পতিবার সকালেই মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে ওই রিপোর্ট জেলায় যায়। ওই দিন বিকেলেই হুগলি জেলা প্রশাসন ঘোষণা করে, বিডিও অফিস চত্বরে মুখ্যমন্ত্রীর যে এক হাজার সাইকেল বিলির কর্মসূচি ছিল, তা বাতিল করা হচ্ছে। আইবি-র রিপোর্ট ছিল, একটি বামপন্থী ও একটি অতি বামপন্থী দল মুখ্যমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল। সিপিএমও মনে করছে, গণ্ডগোলের ভয়েই সিঙ্গুরে মানুষের মুখোমুখি হননি মমতা। গৌতমবাবুর মন্তব্য, “মমতা কত দিন এ ভাবে মানুষকে এড়িয়ে চলবেন? ওঁকে দ্রুত সমাধানের পথ বার করতেই হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.