গণশৌচাগার
শুধু স্রোতে ভাসা
ভাব সাধারণ শৌচালয়ের। অভাব সচেতনতারও। ফলে হাওড়া শহর জুড়ে বাড়ছে উন্মুক্ত প্রস্রাবাগার। দুর্গন্ধ ও দূষণে নাকাল হচ্ছেন শহরবাসী। অভিযোগ, এই সমস্যা সমাধান পুরসভার তরফ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
হাওড়া ব্রিজের নীচের সাবওয়ে, বঙ্কিম সেতু, বিজয়কৃষ্ণ গার্লস কলেজ, হাওড়া হাসপাতাল চত্বর সর্বত্রই একই চিত্র। যেমন, হাওড়া রেল স্টেশনের সাবওয়ের ৭ নম্বর গেট থেকে বেরিয়েই এস-৩২ রুটের বাসস্ট্যান্ড। তার বাঁ দিকেই ১৫টি খোপ। দু’পাশে শুধু ৪ ফুট পাঁচিল দিয়ে ঘেরা।
নেই কোনও জলের ব্যবস্থা। নোংরা হয়ে রয়েছে সামনের নর্দমা। যার উপরেই চলছে ফল ও খাবারের দোকান। ৪৪এ, ১২সি/২, এল ২৩৮-সহ কয়েকটি বাসস্ট্যান্ডে খোলা জায়গাতেই অনেকে প্রস্রাব করেন। তা ছাড়া এই বাসস্ট্যান্ড চত্বরে মহিলাদের জন্য কোনও শৌচালয় নেই। করুণ অবস্থা বঙ্কিম সেতুতে ওঠার রাস্তার ফুটপাথ। এখানে অনেকেই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেন। এ ছাড়াও মাছবাজার, সব্জিবাজার এলাকায়ও অনেক উন্মুক্ত প্রস্রাবাগার রয়েছে।
বঙ্কিম সেতুর ফুটপাথে অনেকে প্রস্রাব করেন। পথচারী রিঙ্কি ঘোষ বলেন, “বঙ্কিম সেতু থেকে হাওড়া স্টেশনে যেতে হলে যে ফুটপাথ পড়ে সেখান দিয়ে যাওয়া যায় না। প্রস্রাবে পুরো জায়গাটা সব সময়ে ভিজে থাকে। বিশ্রি গন্ধ। বাধ্য হয়েই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। উল্টো দিক থেকে যে ভাবে বাস, অটো আসে ভয় লাগে।
বেশ কয়েক বার ধাক্কা লাগতে লাগতে বেঁচে গেছি।” শিবপুরের বাজার এলাকার হেল্থ সেন্টারের পাশের খোলা অংশে অনেকে প্রস্রাব করেন। প্রচণ্ড দুর্গন্ধ হয়। নতুন কালেক্টরেট ভবনের উল্টো দিকের ফুটপাথও গণপ্রস্রাবাগারে পরিণত হয়েছে। এর কাছেই রয়েছে হাওড়া আদালত ও মহকুমাশাসকের আবাস।
শুধু দৃশ্যদূষণই নয়, প্রস্রাব থেকে ছড়াতে পারে নানা রোগও। হাওড়ার ডেপুটি সিএমওএইচ-২ প্রসূন দাস বলেন, “উন্মুক্ত প্রস্রাবগার ও শৌচালয় থেকে মশা বা মাছির মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে। প্রস্রাবের ঝাঁঝালো গন্ধেও শরীর খারাপ হতে পারে।” অভিযোগ, পর্যাপ্ত সুলভ শৌচালয়ের অভাবেই এই অবস্থা। এর ফলে সাধারণ মানুষ অসুবিধায় পড়েন, বিশেষত মহিলারা। পথচারী গৌরী সেনের কথায়: “কিছু দিন আগে মল্লিক ফটকে এসেছিলাম। শৌচালয় খুঁজতেই ৩০ মিনিট লেগে যায়। ভীষণ কষ্ট হয়েছিল।”
হাওড়া পুরসভার বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের অরুণ রায়চৌধুরী বলেন, “পুর-এলাকায় সাধারণ শৌচালয় পর্যাপ্ত নয়। মন্দিরতলা ও কদমতলা বাসস্ট্যান্ড, সালকিয়া, হরগঞ্জবাজার, মল্লিক ফটক এলাকায় সাধারণ শৌচালয় থাকাটা জরুরি। কিন্তু পুরসভা কোনও ব্যবস্থাই নেয় না।” পুরসভার মেয়র সিপিএমের মমতা জয়সোয়াল বলেন, “সাধারণ শৌচালয়ের অভাব রয়েছে। বেশ কিছু সাধারণ শৌচালয় গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.