প্রিয় মমতাজি,

সম্প্রতি বাল ঠাকরের মৃত্যুতে মুম্বই স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় এক তরুণী ফেসবুকে তাঁর আপত্তি জানিয়েছিলেন। তাঁকে গ্রেফতার হতে হয়। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় জড়িত পুলিশ অফিসারদের সাসপেন্ড করতে বলেছেন।

আমার অনুরোধ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মহাপাত্র এবং শিলাদিত্য চৌধুরীর গ্রেফতারে জড়িত অফিসারদের বিরুদ্ধেও আপনি একই ব্যবস্থা নিন। আপনার উচিত অবিলম্বে যাবতীয় মামলা তুলে নিয়ে ওঁদের কাছে ক্ষমা চাওয়া। দময়ন্তী সেনের মতো নির্ভীক পুলিশ অফিসারকেও ফিরিয়ে আনা উচিত। তাঁকেও আপনি অন্যায় ভাবে পরিস্থিতির শিকার বানিয়েছেন। তার জন্য তাঁর কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমরা সবাই মানুষ, সবারই ভুলভ্রান্তি হয়। কিন্তু ভুল বুঝতে পারা এবং তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নেওয়াটাই ভদ্রতা। সিএনএন-আইবিএন চ্যানেলের শো-এ আপনি তানিয়া ভরদ্বাজকে অপমান করেছিলেন। তাঁর কাছেও ক্ষমা চাওয়া উচিত।

জোর দিয়ে বলছি, এটা করতে পারলে পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশের কাছে আপনি অনেক উঁচু আসন পাবেন।

কলকাতায় গিয়ে জেনেছি, মন্ত্রী-আমলারা আপনার সামনে মন খুলে কথা বলতে পারেন না। আপনার অনিশ্চিত এবং খামখেয়ালি আচরণে তটস্থ থাকেন। খুব কম করে বললেও, রাজ্য প্রশাসনে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর অবস্থা এটা। নিজেকে না বদলালে, সহিষ্ণু না হলে আপনি বেশি দিন মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারবেন না।

কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে বলেছেন, দক্ষ শাসক ভাল উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। তাঁদের কথা শোনেন। অবশ্যই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার আপনিই নেবেন। কিন্তু উপদেষ্টারা যেন নির্ভয়ে কথা বলার সুযোগ পান। এখানে দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার পটেলের কথা বলি। তিনি তাঁর সচিবদের স্পষ্ট মত দিতে বলতেন। তা তাঁর নিজের ভাবনার বিরোধী হলেও কিছু মনে করতেন না। পটেলের বক্তব্য ছিল, আমলারা খোলাখুলি কথা না বললে তাঁদের কার্যকারিতা নেই। আপনারও সেই পথ নেওয়া উচিত।

এখনও সময় যায়নি। আমার কথা শুনে নিজেকে বদলাতে পারেন। আমি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী। আপনার মনে থাকতে পারে, আমি আগে আপনার প্রশংসাও করেছি। কিন্তু ইদানীং আপনি ক্রমশ অসহিষ্ণু আর খামখেয়ালি হয়ে যাচ্ছেন। নিজের বড় বিপদ ডেকে আনছেন।

ধন্যবাদান্তে
বিচারপতি কাটজু