|
|
|
|
আমাদের চিঠি |
|
‘জাহানকোষা’কে ঘিরে গড়ে উঠুক পর্যটন
|
কবি নবীনচন্দ্র সেন তাঁর বিখ্যাত “পলাশীর যুদ্ধ” কাব্যে লিখেছিলেন,
“আবার, আবার সেই কামান গর্জন!
কাঁপাইয়া ধরাতল,
বিদারিয়া রণস্থল,
উঠিল যে ভীম রব, ফাটিল গগন।”
আজ কবি কথিত সেই সকল কামান অব্যবহার্য হয়ে পড়লেও তাদের আকর্ষণ বিন্দুমাত্রও কমেনি। পশ্চিমবঙ্গের যে দু’টি বিখ্যাত কামানের নাম সর্বজনবিদিত, সেগুলি হল বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের দলমাদল এবং মুর্শিদাবাদের জাহানকোষা। প্রথমটি প্রচারের আলোয় অনেকটা বেশি আলোকিত হলেও জাহানকোষার মাহাত্ম্যও কম নয়। ১৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে অথবা ১০৪৭ হিজরি সনের ১১ জমদিয়সমানি মাসে এটি বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাজধানী ঢাকায় নির্মিত হয়েছিল। সেই সময় ঢাকার নাম ছিল জাহাঙ্গীর নগর। মুঘল সম্রাট শাজাহানের রাজত্বকালে (১৬২৭-৫৮ খ্রিস্টাব্দ) বাংলার সুবাদার ছিলেন ইসলাম খাঁ। তাঁর অধীনস্থ দারোগা শের মহম্মদের অধীনে হরবল্লভ দাসের তত্ত্বাবধানে জনার্দন কর্মকার এই বিশাল জাহানকোষা নির্মাণ করেছিলেন। |
|
—নিজস্ব চিত্র। |
১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলি খাঁ বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মুখসুমাবাদে (বর্তমান মুর্শিদাবাদ) স্থানান্তরিত করার সময় সম্ভবত এই কামানটি নিয়ে আসেন। অপর দিকে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দেই রাজা বীর হাম্বিরের রাজত্বকালে জগন্নাথ কর্মকার বানিয়েছিলেন দলমাদল কামান। জাহানকোষার অর্থ হল বিশ্বধ্বংসী বা মতান্তরে বিশ্বজয়ী। দলমাদল শব্দের অর্থ নিয়ে বহু মতান্তর থাকলেও অধিকাংশের মত, এর অর্থ হল শত্রুধ্বংসী। জাহানকোষার দৈর্ঘ্য সাড়ে সতেরো ফুট, যেখানে দলমাদলের দৈর্ঘ্য সাড়ে বারো ফুট। কিন্তু দলমাদলের পরিধি সামান্য বেশি হওয়ায় এর ওজন বেশি২৯৬ মন, যেখানে জাহানকোষার ওজন ২১২ মন। দলমাদল মূলত লৌহ নির্মিত হলেও জাহানকোষায় লোহা-সহ আরও সাতটি ধাতু ব্যবহৃত হয়েছিল। জাহানকোষার দু’দিকে তিনটি করে মোট ছয়টি বলয়, সামনে ও পিছনের অংশে সুন্দর অলঙ্করণ চোখে পড়ে। কামানের গায়ে ফার্সি ভাষায় লিখিত মোট ন’টি পিতলের ফলকে কামান নির্মাণের কাহিনি, রাজন্যবর্গের প্রশস্তি বর্ণিত হয়েছে। এতে একবার গোলা নিক্ষেপ করতে আঠাশ সের বারুদ ব্যবহৃত হত। বর্তমানে কামানটির অবস্থান মুর্শিদাবাদ শহরের গোবরানালার নিকটবর্তী তোপখানা গ্রামে। যে লোহার চাকাযুক্ত গাড়িতে কামানটি স্থাপিত ছিল তা বহু বছর আগেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এক সময় কামানটিকে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে স্থানান্তরের পরিকল্পনা হয়। বর্তমানে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ কর্তৃক এ কামান সুরক্ষিত। ঐতিহাসিক এই কামানকে কেন্দ্র করে এলাকায় পর্যটন শিল্পের প্রসারে সরকার নজর দিক, জেলাবাসীরূপে এই আমাদের একান্ত প্রার্থনা। |
সায়ন্তন মজুমদার। বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
|
এই বিভাগে চিঠি পাঠান সম্পূর্ণ নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে।
আমাদের চিঠি,
সম্পাদকীয় বিভাগ,
আনন্দবাজার পত্রিকা প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১ |
|
|
|
|
|
|