হায়দরাবাদ থেকে তিনি ফোনে কথা বলছিলেন আমদাবাদ প্রেসবক্সে বসা আনন্দবাজার প্রতিনিধির সঙ্গে। রঞ্জি ম্যাচটা খেলতে পারছেন না পুরনো পিঠের যন্ত্রণা আবার চাগাড় দেওয়ায়। কিন্তু ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচটা টিভিতে বসে দেখতে দেখতে দারুণ সুখের অনুভূতি হচ্ছে তাঁর চেতেশ্বর পূজারার জন্য। এক-এক সময় মনে হচ্ছে পূজারা বুঝি তাঁরই উত্তরাধিকার। ভিভিএস লক্ষ্মণ এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দিলেন ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর বংশের নতুন সন্তান সম্পর্কে...।
প্রথমেই বলি, পূজারাকে কিন্তু সে ভাবে চিনিই না। এনসিএ-তে ট্রেনিং করতে গিয়ে অনেক সময়ই উঠতি ছেলেপিলের সঙ্গে দেখা হয়েছে। অনেকের হয়তো খেলাও দেখিনি। কিন্তু আলাপ হয়ে গিয়েছে। পূজারার সঙ্গে একটা সফরে গেছি। দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১১। একসঙ্গেও ব্যাট করেছি। অথচ সে ভাবে আলাপ হয়নি কখনও। কাল থেকে আমি অনেক মেসেজ পাচ্ছি। অনেকের মনে হয়েছে চেতেশ্বর পূজারা যদিও তিন নম্বর খেলে। ওর হাঁটাচলা, নড়াচড়া, বডি ল্যাঙ্গোয়েজ সব কিছুতে আমার সঙ্গে মিল আছে। |
আমার কাছে মিল আছে কি নেই, তার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হল তিন নম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ভারতীয় ক্রিকেট এমন কাউকে পেয়ে গেল যে লোকটা ক্ষুধার্ত। যার সেঞ্চুরিতে আশ ভরে না। যে সেঞ্চুরি পেলে ডাবলের কথা ভাবে। ডাবল পেলে ট্রিপল। সেটাই তো দারুণ খবর!
পূজারার ইনিংসটা টিভিতে দেখতে দেখতে কাল আমি নিজেরও খানিকটা পিঠ চাপড়াচ্ছিলাম। বেচারি আমি টিমে থাকলে চান্স পেত কি না কে জানে। হয়তো যুবরাজ ঢুকে গিয়ে ও বাইরে থাকত। আমি নিউজিল্যান্ডের জন্য টেস্টে নির্বাচিত হয়েও ঠিক এই কারণে চলে যেতে চেয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, ইংল্যান্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিরিজে দুম করে তরুণদের ফেলে দেওয়াটা ঠিক হবে না। তার চেয়ে নিউজিল্যান্ড খেলে ওরা ইংল্যান্ডের জন্য তৈরি থাক। ঠিক তাই হল। দেখে অসম্ভব তৃপ্ত লাগছে যে, ঠিক সময়েই চলে গিয়েছিলাম। পরম্পরা তৈরিটা সহজ হল।
পূজারার খিদে ছাড়াও দুটো দারুণ গুণ আছে। টেম্পারামেন্ট আর সাহস। ডারবানে গত বছর সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে আমি আর ও একসঙ্গে ব্যাট করেছিলাম। যত দূর মনে পড়ে পূজারা করেছিল ২২ (রানটা হবে ১৯)। ডেল স্টেইন আর মর্কেল তখন আগুন ছোটাচ্ছে। সেই পেস দু’ঘণ্টা ধরে ও সামলেছিল। সেই সাহসটা দেখে আমার দারুণ লেগেছিল। আমদাবাদ পিচে ও রকম সাহস দেখাবার কোনও প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু আমি জানি সেই গুণটা ওর ভেতর আছে। পূজারা কোনও মূল্যেই উইকেট ছাড়নেওয়ালা নয়।
আমি ওকে কোনও পরামর্শই দিতে রাজি নই। আমার চোখে পূজারা প্রায় কমপ্লিট একজন প্লেয়ার। যত এগোবে, তত বাকিটাও নিজেই ভরাট করে নিতে পারবে। আমি শুধু সদ্য প্রাক্তন হিসেবে ওকে বলতে পারি, টেম্পোটা রেখে যাও। পিছনে ফিরে দেখার দরকারই নেই। তোমার মধ্যে সব আছে। |