|
|
|
|
অলৌকিক পুনর্মিলনে মেয়ে পেল মা, পরিবার বৃদ্ধের |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
তিন মাসে, দু’বার প্রায় অসম্ভব ‘পুনর্মিলন’-এর ঘটনা ঘটল মিজোরামে। প্রথম বার, ভুতুরে কন্যার গল্পের সূত্র ধরে ৩৪ বছর পরে মা-মেয়ের মিলন। আর এ বার ‘ফেসবুক’-এর হাত ধরে, ছ’দশক পর পরিবারে ফিরলেন ৮২ বছরের এক বৃদ্ধ। আজ আইজল থেকে এক কিলোমিটার দূরে, মুয়ালফাং গ্রামে নাতি-নাতনির সঙ্গে মিলিত হলেন প্রাক্তন বর্মি সেনা কাপথাংগা।
২২ বছর বয়সে ভাগ্যাণ্বেষণে বেরিয়ে পড়েছিলেন কাপথাংগা। কাজ নেন বর্মার সেনাবাহিনীতে। ১৯৮৩ সালে অবসর নিয়ে ইয়াঙ্গনেই থাকতেন। কিন্তু বয়স যত বাড়তে থাকে, ততই বাড়তে থাকে শিকড়ের টান। কিন্তু আত্মীয়দের কোনও খোঁজই ছিল না তাঁর কাছে। কপালঠুকে খুলে ফেলেন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। নিজের পরিচয় লিখে মিজোরামের মানুষজনের কাছে পৌঁছনো শুরু। তাঁর একটি পোস্ট চোখে পড়ে রেমফেলার। কাঠমাণ্ডুতে কর্মরত রেমফেলা ছোট থেকে ‘হারানো কাকা’-র কথা শুনেছেন। দুয়ে দুয়ে চার করে, আইজলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সব জানান তিনি। এরপর মায়ানমারবাসী মিজোদের হয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে ইয়াঙ্গনের ভাড়া বাড়িতে ‘হারিয়ে যাওয়া’ কাপথাংগার সঙ্গে আইজলবাসী পরিবারের সদস্যদের ফের যোগাযোগ হয়। ইয়াঙ্গনের মিজোরা অর্থ সংগ্রাহ করে তাঁকে, মিজো সীমান্তবর্তী চিন রাজ্যের টাহানে পাঠান। সেখান থেকে সীমান্ত চৌকি পার হয়ে মিজোরামের চাম্পাইতে ঢোকেন কাপথাংগা। ছয় দশক পরে ফের স্বভূমিতে পা দেন তিনি। খওজোয়ালে রাত কাটিয়ে আজ আইজল এসে পৌঁছন কাপথাংগা। পরিবারের সব সদস্য একজোট হয়ে মহা সমারোহে কিংবদন্তী বনে যাওয়া কাপথাংগাকে ঘরে তোলেন। গত সেপ্টেম্বরে, অনেকটা দৈবাৎই, ৩৮ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মেয়ের সন্ধান পেয়েছিলেন সাইহার বাসিন্দা নগোলা। ঝুম চাষের সময় ১০ সন্তানের মধ্যে এক মেয়ে সাইহার অরণ্যে হারিয়ে গিয়েছিল। কী ভাবে যেন ঘন অরণ্যেও বেঁচে ছিল সে। জঙ্গলের পথেই সীমান্ত পার হয়ে চলে যায় মায়ানমারে। সেখানেই উলঙ্গ অবস্থায় অরণ্যের মধ্যে বেড়ে ওঠে সে মেয়ে। মাঝে মধ্যে খাদ্যের জন্য হানা দিত লাগোয়া কবরখানায়। মায়ানমারের বাসিন্দাদের মুখে সেই ‘কবরখানার পেত্নি’-র গল্প ছড়িয়ে পড়ে। খাইলা নামে স্থানীয় এক কৃষক সাইহায় আত্মীয়ের বাড়ি এসে সেই পেত্নির গল্প করেন। তার চেহারার বর্ণনা শুনে নগোলার মনে হয় সে তার হারানো মেয়ে হলেও হতে পারে। এর পর যা হল, তা রূপকথারই মতো। খাইলার সঙ্গে সীমান্ত পার হয়ে ভূতের জঙ্গলে পেত্নীর মুখোমুখি হন মা, নগোলা। উলঙ্গ মেয়ের শরীরের জন্মের দাগ আর বাঁ হাতি হওয়ার অকাট্য প্রমাণ পেয়ে কেঁদে ফেলেন নগোলা। কিন্তু বনবাসী মেয়েকে ধরে আনলেও সে কিছুই মনে করতে পারছিল না। আশ্চর্যজনক ভাবে পরের দিন নগোলাকে দেখে সে হঠাৎই ‘ইপ্পা’ বা ‘মা’ বলে জড়িয়ে ধরে। প্রশাসনের সাহায্যে মেয়েকে ঘরে আনেন মা। উৎসব করেই মা-মেয়েকে বরণ করে নেয় সাইহা। ৪২ বছরের সেই মেয়ে ছাইদি আপাতত ইনা ও ইপা অর্থাৎ বাবা-মা বলতে শিখেছে। চিরুনি, নেলপালিশ, লিপস্টিক মেখে সাজগোজও করছে।
|
|
|
|
|
|