উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
প্রয়াস পুলিশের
অঙ্কুরেই সংশোধন
পরাধ বাড়ছে। কিন্তু কমছে অপরাধীর বয়স। উদ্বিগ্ন পুলিশ। তাই শিশুদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কমাতে উদ্যোগী হল ব্যারাকপুর কমিশনারেট।
গত বছরের ২০ জানুয়ারি ব্যারাকপুরে পুলিশ কমিশনারেট গঠিত হয়। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এর পরে শিল্পাঞ্চলে ৫৫টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। খুন হয়েছে ৪২টি। দেখা গিয়েছে, এ সব ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের অধিকাংশের বয়স ১৫ থেকে ২২-এর মধ্যে। পুলিশকর্তাদের মতে, এ অঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের অনেক শিশু ছোটবেলা থেকে অপরাধ ঘটতে দেখছে। অপরাধের মধ্যে বড় হচ্ছে। ফলে খুব কম বয়স থেকেই তারা অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। নানা অপরাধে ধরা পড়ার পরে তাদের জুভেনাইল কোর্টে পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে কোনও হোমে। কিন্তু সমস্যা তাতে কমছে না। ছাড়া পাওয়ার পরে তারা আবার অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে।
তাই অঙ্কুরেই অপরাধের বীজ নষ্ট করতে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের নতুন উদ্যোগ ‘সংকল্প’। এর উদ্যোগে সম্প্রতি গঙ্গার ধারে আড়িয়াদহ ফাঁড়িতে শুরু হয়েছে শিশুদের অন্য ধরনের স্কুল। মূলত চুরি ও ডাকাতির ঘটনায় অভিযুক্ত কচিকাঁচাদের শোধরাতেই এই স্কুলের ভাবনা। এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন ব্যারাকপুরের গোয়েন্দাপ্রধান তথা ডিসি ট্র্যাফিক কল্যাণ মুখোপাধ্যায়। মাস দেড়েক আগে বেলঘরিয়াতে ডাকাতির ঘটনায় ধরা পড়ে এক কাগজকুড়ানি পথশিশু। এ রকম কিছু পথশিশুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এদের শোধরানোর কোনও সরকারি ব্যবস্থা নেই। এখান থেকেই শুরু ‘সংকল্প’র প্রস্তুতি। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘‘আমরা কাজটিকে অপরাধ দমনের অঙ্গ হিসাবেই দেখছি। শুধু শাসন করে অপরাধ দমন করা যায় না। ছোটবেলা থেকেই এ ধরনের শিশুদের সাহায্য করতে পারলে একটি সুস্থ সমাজ গড়া যাবে।’’
‘সংকল্প’-এ এখন পড়ুয়ার সংখ্যা ১৫। জয়, সঞ্জীব, রাজা, খুশি, মনীষারা ওই ফাঁড়ির আশপাশেই থাকে। ‘পুলিশকাকু’রাই তাদের শিক্ষক। প্রথম পাঠ হাতেখড়ি। তার পরে ছবির বই দেখিয়ে বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্কের সহজ পাঠ দেওয়া। আপাতত ট্র্যাফিক পুলিশ ও সিভিল পুলিশের কর্মীরাই ডিউটির পরে এই স্কুল চালান।
আড়িয়াদহ ফাঁড়ির একটি ঘরে ক্লাস চালু হলেও ছাত্র সংখ্যা বাড়লে ঘর বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন কল্যাণবাবু। একটি ঘরে ছোটদের নানা বইয়ের লাইব্রেরি থাকছে। থাকছে একটি কম্পিউটার ও ছোটদের সিনেমার সিডি। বছরে দু’-এক বার বিড়লা তারামণ্ডল, জাদুঘর বা সায়েন্স সিটির মতো জায়গায় পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে পুলিশকর্তাদের। কিন্তু এই স্কুল শুধু শিশুদের। বয়স বাড়ার পরে কী হবে? কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘আমরা আপাতত প্রাথমিক কাজটুকু করছি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এই ধরনের উদ্যোগ। খুশির কথা, এখন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এতে সামিল হতে চাইছেন। ব্যারাকপুরে যাঁরা এই ধরনের শিশুদের নিয়ে কাজ করেন তাঁদেরও পরামর্শ নিচ্ছি। পরে এদের জন্য ভোকেশনাল কোর্সের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে।’’




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.