পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
ট্রেকার-রাজ
ঝুঁকির যাত্রা
দ্রুত গতিতে ছুটছে ট্রেকার। ছাদে, গাড়ির পিছনে ও দু’পাশে ঝুলতে ঝুলতে যাচ্ছেন যাত্রীরা। অবস্থা এমনই যে পাশ কাটাতেও ভয় পাচ্ছেন অন্যান্য বাস ও ট্রাকের চালকেরা। টাকি রোড ও যশোহর রোডে এটাই রোজকার ছবি। অভিযোগ উঠেছে, যান চলাচলের নিয়মকে রীতিমতো বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিনের পর দিন ব্যস্ত রাস্তায় বেনিয়মের রাজত্ব চালাচ্ছে এক শ্রেণির ট্রেকার ও ম্যাজিক ভ্যান। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে যাত্রী-সুরক্ষা।
বারাসতের চাঁপাডালি মোড়ে টাকি রোড থেকে বেড়াচাঁপা, কদম্বগাছি, দেগঙ্গা, খড়িবাড়ি ও ধর্মতলা যাওয়ার ট্রেকার ছাড়ে। যাত্রীদের অভিযোগ, ১২ জনের বসার জায়গা, অথচ ২৫-৩০ জন যাত্রী না হওয়া পর্যন্ত গাড়ি ছাড়ে না। একই ছবি দেখা যায় বারাসত-দত্তপুকুর-বিড়া রুটে এবং ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে বারাসত-সন্তোষপুর রুটে। যাত্রীদের গাড়ির ছাদে, পিছনের রডে তুলে এবং দু’পাশে দাঁড় করিয়ে তবে গাড়ি ছাড়ে। বাসচালক সন্তু দে-র কথায়: “ট্রেকার ও ম্যাজিক ভ্যানগুলো ২৫-৩০ জন যাত্রী নিয়ে যে রকম বেপরোয়া ভাবে যাতায়াত করে, তাতে বড় গাড়ির চালকেরাও পাশ কাটাতে ভয় পান। কারণ যে কোনও সময়ে ট্রেকারের যাত্রীরা বড় গাড়িতে ধাক্কা খেয়ে যেতে পারেন।” তাঁর মতো অন্যান্য বাস ও গাড়ির চালকদেরও অভিমত, এমনিতেই গত দেড় দশকে যানবাহনের সংখ্যা সমানে বেড়ে চললেও যশোহর রোড, টাকি রোড এবং ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সে ভাবে চওড়া হয়নি। তার উপরে ট্রেকারদের এই বেপরোয়া চলাচলে বিপদে পড়েন যাত্রীরাই।
টাকি রোড, যশোহর রোড ও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে কলকাতা থেকে টাকি, হাসনাবাদ, বসিরহাট, বনগাঁ, হাবড়া, অশোকনগর, আমডাঙা, জাগুলিয়া, কল্যাণী ছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুটের গাড়ি চলে। স্বাভবিক ভাবে সারা দিনই খুব ব্যস্ত থাকে গুরুত্বপূর্ণ এই তিন সড়ক। পাশাপাশি, এই সব রাস্তা দিয়ে পণ্যবাহী ভারি ট্রাক চলে। যান চলাচল প্রতিনিয়তই বাড়ছে। তার মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই ঝুঁকির যাতায়াত করছে ট্রেকারগুলি। নিত্যযাত্রী অরুণ ঘোষ জানান, ট্রেকার চালকেরা অনেক সময় শিশু ও বয়স্কদেরও গাড়ির ছাদে বসিয়ে নিয়ে যান।
শুধু তাই নয়, নিজস্ব গ্যারাজ না থাকলেও অনেক ট্রেকার রুট পারমিট পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে ফুটপাথেই তৈরি হচ্ছে গ্যারাজ। রাস্তার উপরেই দীর্ঘ সময় গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো চলছে। ফলে রাস্তা আরও সঙ্কীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। বারাসতের টাকি এবং যশোহর রোডের ফুটপাথও দোকান ও গ্যারাজের দখলে। এক ট্রেকার চালকের সাফাই: কোনও যানই নিয়ম মেনে চলে না। তাই ট্রেকার আর অটোও বেশি যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করছে। সরকারি তরফেও কোনও বিধিনিষেধ নেই। বেশি যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করার জন্য জরিমানাও হয় না।
উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল অবশ্য বলেন, “ট্রেকার এবং ম্যাজিক ভ্যানের অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিভাগীয় পরিবহণ আধিকারিককে শীঘ্রই অভিযান চালানোর নির্দেশ দেব। যাত্রী বহনের পারমিট পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।”
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা আইএনটিটিউসি-র সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “বাড়তি যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করা পশ্চিমবঙ্গের যানবাহনের একটা বদভ্যাস। পরিস্থিতিতে বদল আনতে অটো দিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। আগামী দিনে ট্রেকারের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনও গাড়ি যদি যাতায়াতের সময় যাত্রী-সুরক্ষা নষ্ট করে, সরকার কোনও ভাবেই তার পাশে দাঁড়াবে না।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.