|
|
|
|
খুন চা-বাগান মালিক, ফিরছে কি নয়ের দশক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
যেন নব্বইয়ের দশক ফিরে এল অসমে। জঙ্গিদের হাতে নতুন করে এক চা-বাগান মালিকের হত্যার ঘটনায় আবারও আতঙ্কের আবহ।
সে বার ছিল আলফা। এ বার সন্দেহের তির বড়ো জঙ্গি সংস্থা এনডিএফবি-র একটি গোষ্ঠীর দিকে। যাদের সঙ্গে আলফার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তবে বুধবার পর্যন্ত কোনও সংস্থাই হত্যাকাণ্ডের দায় নেয়নি।
১৯৯০ সালের এপ্রিলে উজানি অসমের তিনিসুকিয়ায় আলফা জঙ্গিদের হাতে খুন হয়েছিলেন অসম ফ্রন্টিয়র টি লিমিটেডের চেয়ারম্যান সুরেন্দ্র পল। অনাবাসী ভারতীয় শিল্পপতি স্বরাজ পলের ভাই। মঙ্গলবার সেই উজানি অসমেরই শোণিতপুরে জঙ্গি হামলায় প্রাণ দিলেন মহালক্ষ্মী এবং তেজেলাপট্টি চা-বাগানের মালিক আদিলুর রহমান।
গত ২২ বছরে চা-বাগান থেকে জঙ্গিরা নিয়মিত তোলা আদায় করেছে। জঙ্গিদের হুমকি না শোনার খেয়ারত দিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন চা-বাগানের বিভিন্ন স্তরের অন্তত তিন জন অফিসার। এক বাগানমালিক-সহ অপহৃত অন্তত চার জন চা-বাগান ম্যানেজারকে মোটা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে সুরেন্দ্র পলের পর এই প্রথম সরাসরি কোনও চা-বাগান মালিককে খুন করা হল। আলফা এবং এনডিএফবি-র বিভিন্ন স্তরের শীর্ষ নেতারা এখন জেলে বন্দি। অন্য নেতারা রাজ্যের বাইরে আত্মগোপন করে রয়েছেন। জঙ্গি সংস্থাগুলির সক্রিয়তা কমছে দিনকে দিন। এই অবস্থায় মঙ্গলবার আদিলুরের মৃত্যু নিরাপত্তা বাহিনীকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। |
|
জঙ্গিদের হাতে আদিলুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় গুয়াহাটিতে ধর্না-বিক্ষোভ। ছবি: উজ্জ্বল দেব |
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই চা-বাগান মালিককে বেশ কিছু দিন ধরে তোলা চেয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তাঁর জন্য কমান্ডো পাহারার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। গুয়াহাটিতে তাঁর বাড়িতে অসামরিক বাহিনীর নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন ছিল। মঙ্গলবার শোণিতপুরের মহালক্ষ্মী চা-বাগান থেকে তেজেলাপট্টি চা-বাগানে যাওয়ার পথে আক্রান্ত হন আদিলুর। তিনি নিজেই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তবে তাঁর নিরাপত্তায় থাকা কমান্ডো বাহিনী কোথায় ছিল, তা অবশ্য জানা যায়নি। জঙ্গিদের ফোনে আড়ি পেতে পুলিশ জেনেছে, আদিলুরকে মারাটা জঙ্গিদের উদ্দেশ্য ছিল না। তাদের লক্ষ্য ছিল দেহরক্ষীর কার্বাইনটি। কিন্তু আদিলুর নিজে চালকের আসনে বসে থাকায় তিনি প্রাণ হারান। জখম হয়েও পাল্টা গুলি চালান দেহরক্ষী মতিলাল তির্কে। ফলে জঙ্গিরা কার্বাইন নিতে পারেনি।
অসমের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, চা-বাগানের উপরে হানাদারির সূত্রপাত ১৯৯০ সালের মার্চে। আলফার গুলিতে নগাঁওতে নিহত হন টাটা টি-র উচ্চপদস্থ কর্মী পি সি স্কারিয়া। সেই বছরই এপ্রিল মাসে আলফার শিকার হন সুরেন্দ্র পল। এর পরেই টাটা, উইলিয়ামসন ম্যাগর, ওয়ারেন, গুডরিক-সহ চা সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করে আলফা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, টাকার দাবি না মানলে হত্যা চলতে থাকবে। বাধ্য হয়ে মালিক পক্ষ রাজি হন। ওই বছরই নভেম্বরে এইচএলএল সংস্থার কাছে ৩৫ লক্ষ টাকা দাবি করে আলফা। সেই সঙ্গে ব্রুক বণ্ড ও লিপটন-এর মুনাফার ৫ শতাংশ চাওয়া হয়। টাকা দিতে অস্বীকার করে সেনা ও বিমানবাহিনীর সাহায্যে সব অফিসারকে সরিয়ে নিয়ে যায় ওই দুই সংস্থা। বন্ধ করে দেয় কাজকর্ম। ১৯৯০ সালের শেষে প্রফুল্ল মহন্ত সরকারকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে কেন্দ্র। কিছুদিনের জন্য চা-বাগানগুলিতে স্বস্তি ফিরলেও ১৯৯৬ সালে অসমে সরকার বদলের সঙ্গে ফের বাগানগুলি জঙ্গিদের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। টাটা টি-র মতো সংস্থা অসম ছাড়ে।
আদিলুরের হত্যা সেই সব দিনের স্মৃতিই উস্কে দিয়েছে নতুন করে। এ দিন অসম টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (এটিপিএ) জানায়, এনডিএফবি-র দাপটে দরং, শোণিতপুর, শিবসাগর, যোরহাট, ডিব্রুগড়, তিনিসুকিয়া জুড়ে চা-বাগানের কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে। আদিলুরের স্ত্রী আফরুজা বলেন, “মৃত্যুর আধ ঘণ্টা আগেও ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। জঙ্গি হুমকি বা প্রাণনাশের আশঙ্কার ব্যাপারে আমি কিছুই শুনিনি। বাগানে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতে হবে, জঙ্গিরা টাকা চেয়েছিল কি না।”
|
চা বাগানের উপরে আক্রমণ |
সাল |
মৃত |
পরিচয় |
হামলাকারী |
• মার্চ, ১৯৯০ |
পি সি স্কারিয়র |
ম্যানেজার, টাটা টি |
আলফা |
• এপ্রিল, ১৯৯০ |
সুরেন্দ্র পল |
চেয়ারম্যান, অসম ফ্রন্টিয়র টি লিঃ |
আলফা |
• নভেম্বর, ২০০০ |
জে বসুমাতারি |
সহকারী ম্যানেজার, ফেতেমাবাদ টি |
আলফা |
• সেপ্টেম্বর, ২০০৬ |
হরিধন দাস |
ম্যানেজার, হুলুংঘাবি টি |
আলফা |
• নভেম্বর, ২০১২ |
আদিলুর রহমান |
চেয়ারম্যান, মহালক্ষ্মী টি |
এনডিএফবি |
|
|
|
|
|
|