অন্তত ২৫টি ব্যাটারি দিয়ে গোবর, সোডার মধ্য দিয়ে সংযোগ ঘটিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করে আলো জ্বালানো যায়। এমনটা তারা মডেল তৈরি করে হাতে কলমে দেখিয়েছে। তারই স্বীকৃতি পেতে চলেছে জলপাইগুড়ি জেলার স্কুল পড়ুয়ারা। গত মাসে জেলার নানা স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে জেলাভিত্তিক শিশুবিজ্ঞান কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের একশোটিরও বেশি দলের মডেল থেকে বাছাই ১১টি দল যায় রাজ্য স্তরে। রাজ্যে চূড়ান্ত বাছাইয়ের পরে ৪টি দল ডিসেম্বর মাসে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় শিশু বিজ্ঞান কংগ্রেসে যোগ দিতে যাচ্ছে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং বিজ্ঞানীরা। জেলাস্তরে শিশু বিজ্ঞান কংগ্রেস আয়োজনের দায়িত্বে থাকা আকাশ চৌধুরী বলেন, “প্রতিদিনের জীবনে প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে স্বতন্ত্র এবং মৌলিক ভাবনাকে স্বীকৃতি দেয় শিশু বিজ্ঞান কংগ্রেস। শিশুদের মাথায় যে ভাবনা এসেছে, সেগুলি ওরা হাতে কলমে করে দেখিয়েছে। আরও একটু প্রযুক্তিগত সাহায্য দিয়ে সেগুলিকে ব্যবহারিক প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।” মালবাজার সিজার স্কুলের দ্বাদশের ছাত্ররা দেখিয়েছে, কোনও এলাকার কয়েকটি বাড়ির সদস্যরা এলাকার নর্দমার জলে সাইকেলের চাকা ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে প্রতিটি বাড়িতে একটি করে আলো জ্বালাতে পারবেন। বিদ্যুৎ সঞ্চয়ের উপরও জোর দিয়েছে ছাত্ররা। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্ররা নিজেদের স্কুলেই প্রতিদিন জলের ব্যবহার নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করেছে, সেই রিপোর্টে দেখানো হয়েছে মাসে প্রায় তিন হাজার লিটার জল অপচয় হয়। এই পরিমাণ জল অপচয়ের জন্য বছরে পাঁচ হাজার টাকার অপব্যায় হয়। স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সৌম্যজিত বণিক বলে, “পাম্পের সাহায্যে পানীয় জল তোলা হয়, তাই যত পরিমাণ পানীয় জল অপচয় হচ্ছে সেই পরিমাণ জল তোলার বিদ্যুতের খরচ কোনও কাজে লাগছে না। আমরা একটু সংযত হলেই এই পরিমাণ বিদ্যুত বাঁচাতে পারি।” ময়নাগুড়ির ভোটপট্টি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্ররা ফেলে দেওয়া ব্যাটারির সঙ্গে সোডা মাধ্যমে সংযোগ ঘটিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আলো পাখা জ্বালিয়েছে। তাদের দাবি, এলাকার সব বাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া ব্যাটারি সংগ্রহ করে বিদ্যুৎ তৈরি করে ব্যবহার করা যেতে পারে। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির আর একটি দল দেখিয়েছে কোনও শহরের উচ্চবিত্ত পরিবারে মাসে ৩৫ শতাংশ বিদ্যুৎ অপচয় হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্ষেত্রে অপচয়ের হার ২৩ এবং নিম্নবিত্ত পরিবারে ১১ শতাংশ। জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাব কংগ্রেস আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে। ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক রাজা রাউতের কথায়, “ছোট ছেলেমেয়েরা যা ভেবেছে তা মৌলিক এবং বিজ্ঞানমনস্ক। বিদ্যুৎ সংরক্ষণ নিয়ে ওরা যা করছে তা শিক্ষণীয়।”
|