কাটোয়ার মোটরবাইক ছুটল রেশমপথ
ঘোরার নেশাটা বাঙালির মজ্জাগত।
ভাতের সঙ্গে মাছ না হলে বাঙালির যেমন চলে না, এ-ও তেমনই। আমি তার ব্যতিক্রম নই।
আমি মামুলি প্রাথমিক শিক্ষক। কাজের চাপ, অতিরিক্ত ডিও, বিএলও ডিউটি, বাড়ির ঝামেলা, ১৪০/৯০ রক্তচাপ। সব রকম টেনশন ঝেড়ে ফেলে শেষে বেরিয়ে পড়লাম বন্ধু অভীকের সঙ্গে। তবে একটু অন্য ভাবে।
গন্তব্য অতি চেনা। পুবের পাহাড়ে দার্জিলিংয়ের পরে আপাতত বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় গ্যাংটক। সিকিমের রাজধানী, সিকিম ভ্রমণের সিংহদ্বারও বটে। কিন্তু আমরা ট্রেনের টিকিট কাটতে গেলাম না। বাসের খোঁজও নিলাম না। তার বদলে চেপে বসলাম মোটরবাইকে।
দিনটা ছিল পঞ্চমী, ১৯ অক্টোবর। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দু’টো বাইক কাটোয়া থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে উত্তরের দিকে রওনা দিল। সারা রাত চলা। রাস্তা ৫৭৫ কিমি। মাঝে অবশ্য খাওয়া এবং কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম ছিল। পরের দিন দুপুর ৩টে নাগাদ পৌঁছে গেলাম গ্যাংটক।
ইচ্ছে ছিল, উত্তর সিকিমের গুরুদংমার লেক দেখতে যাওয়ার। কিন্তু দুর্ভাগ্য! ‘পারমিশন অফিস’ তত দিনে ছুটি হয়ে গিয়েছে। পুজোর গোটা সপ্তাহই বন্ধ। পর্যটন দফতরের অফিস পরামর্শ দিল, রংলি চলে যান। সেখান থেকে না কি সহজেই লিংতাম, জুলুক, কুপুপ যাওয়ার অনুমতি মেলে।
রাতটা গ্যাংটকের হোটেলে কাটিয়ে পরের দিন, ২১ অক্টোবর চলে গেলাম রংলি। কিন্তু তারাও অনুমতি দিতে নারাজ। শেষে অবশ্য অনেক কাকুতি-মিনতিতে এবং অনেক দূর থেকে মোটরবাইক নিয়ে এসেছি জেনে তারা সদয় হয়ে অনুমতি দিল। এর জন্য সিকিমের প্রশাসনকে ধন্যবাদ।

জুলুকের ভুলভুলাইয়ায়।
সে দিন বিকেলে ঘুরে নিলাম অ্যারিটার লেক। পরের দিন, ২২ অক্টোবর বেরিয়ে পড়লাম সকাল ৬টায়। প্রথম লিংতাম, তার পরে পদমচেন। এখানে আমাদের অনুমতিপত্র পরীক্ষা করা হল। তার পরেই জুলুকে রেশমপথের ভুলভুলাইয়ার অসাধারণ সৌন্দর্য। প্রতিটি বাঁকে লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছিল। এই ভাবে একটানা চলতে চলতে চলতে লুংথু এবং নাথাং ভ্যালি। সেই ভ্যালি থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলল। ফের বেরোলাম। প্রকৃতির অসাধারণ সৃষ্টি উপভোগ করতে করতে টুকলায় পৌঁছে দেখলাম আসল বাবা মন্দির (পুরাতন)। সেখানে কিছু সময় কাটল। মোমো খাওয়া হল।
বাইক ধরল কুপুপের রাস্তা। পথে কুপুপ লেক, অসাধারণ সুন্দর। আবার অনুমতিপত্র দেখা হল। অনেকটা সময় কাটিয়ে, কিছু কেনাকাটা করে ফেরার রাস্তা ধরলাম। ফিরে এলাম সেই পথেই, যদিও আসতে ইচ্ছে করছিল না। রংলি ফিরে সেই সন্ধ্যাতেই নেমে এলাম শিলিগুড়িতে। রাতের বিশ্রাম। পরের সারাটা দিন বাইক চালিয়ে ফিরে এলাম বাড়ি।
এখনও পর্যন্ত এটাই আমার জীবনের সেরা অ্যাডভেঞ্চার। ধরে রাখার চেষ্টা করেছি ক্যামেরায়। মোট ১৪০০ কিমি মোটরবাইক চালানো, ১৪২০০ ফুটের বেশি উচ্চতা আমাদের প্রাণ ভরিয়ে দিয়েছে।
এই রোমাঞ্চ ও আনন্দে ভরা স্মৃতি আমার মস্তিস্কে চির-খোদাই হয়ে থাকল।

দুই বাহন।: ক’জন আর সাহস করে এমন পাহাড়ি পথে দু’চাকা ছোটানোর?
তবু দুরন্তকেও মাঝে-মাঝে জিরিয়ে নিতে হয়।

(ছবিগুলি লেখকের পাঠানো)

লেখা নির্বাচনে সম্পাদকীয় বিভাগের বিবেচনাই চূড়ান্ত। লিখুন অনধিক ৫০০ শব্দে।
খামে ‘পুজো এক্সপ্রেস’ লিখে পাঠিয়ে দিন:
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ ১০, ডক্টরস কলোনি, সিটি সেন্টার,
দুর্গাপুর - ৭১৩২১৬।

অবশ্যই দেবেন ছবি (নিজেদের বাদে)।
ছবি মেল করতে চাইলে:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.