ভারতীয় সংগ্রহালয়ে নতুন সংগ্রহ
যদুভট্টের তানপুরা
বাংলা ধ্রুপদ গানের চর্চার সঙ্গেই উজ্জ্বল হয়ে আছে যদুভট্টের নাম। ১৮৪০-এ বিষ্ণুপুরের ভট্টপাড়া (বর্তমান বৈদিকপাড়া) অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন যদুনাথ ভট্টাচার্য। সুগায়ক পিতা মধুসূদন রাজা নীলমণি সিংহের সভাগায়ক হয়েছিলেন। শৈশবেই যদুভট্টের সঙ্গীতপ্রীতি পারিবারিক সূত্রে। দশ-এগারো বছর বয়সে তিনি তালিম নিতে শুরু করেন বিষ্ণুপুর ঘরানার আদি ধ্রুপদিয়া রামশঙ্কর ভট্টাচার্যের কাছে। গুরু প্রয়াত হলে, ১৮৫৫-তে বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতায় চলে আসেন। শোনা যায়, গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য এ সময় এক ধনীগৃহে পাচকের কাজ করতেন। সে বাড়িতেই যাতায়াত ছিল সে কালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ধ্রুপদিয়া গঙ্গানারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের। কিশোর যদুভট্টের কণ্ঠস্বরে মুগ্ধ হয়ে গঙ্গানারায়ণ তাকে স্বগৃহে নিয়ে এসে তালিম দেওয়া শুরু করলেন খাণ্ডারবনি রীতির ধ্রুপদ গানে। জোড়াসাঁকোর ৫৯ বলরাম দে স্ট্রিটের এই বাড়িতেই ষোলো বছর সঙ্গীত শিক্ষা করেন যদুভট্ট। তিরিশ বছর বয়সেই ছড়িয়ে পড়ে তাঁর খ্যাতি। পঞ্চকোট ও ত্রিপুরার রাজদরবারে মহারাজা বীরচন্দ্র মাণিক্যের সভাগায়ক নিযুক্ত হন অল্প বয়সেই। এঁদের কাছ থেকেই পরে পেয়েছিলেন যথাক্রমে ‘রঙ্গনাথ’ ও ‘তানরাজ’ উপাধি। দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন মৃদঙ্গ, সেতার ও সুরবাহারে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লিখছেন, বঙ্কিমচন্দ্র ‘কয়েক বৎসর ধরিয়া যদুভট্টের নিকট গান শিখিতেন। একটি হারমোনিয়াম কিনিয়াছিলেন।’ গোপালচন্দ্র রায় জানিয়েছেন, ‘যদুভট্টই প্রথম বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দেমাতরম্ সংগীতে সুর দিয়ে তাঁকে শুনিয়েছিলেন।’ যদুভট্ট যুক্ত ছিলেন আদি ব্রাহ্মসমাজ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের সঙ্গেও।
সম্ভবত সেই সময়েই রবীন্দ্রনাথ কিছু কাল তাঁর কাছে সঙ্গীত শিক্ষা করেন। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ১৮৮৩-তে তিনি প্রয়াত হন। গুরুভ্রাতা হরপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে সঙ্গীতচর্চার সময় যদুভট্ট যে তানপুরাটি ব্যবহার করেছেন দীর্ঘ কাল ধরে, সেটি হরপ্রসাদের পৌত্র কালীপ্রসাদের সময় পর্যন্ত ছিল পাথুরিয়াঘাটার হরকুটির-এ। কালীপ্রসাদ সেটি দিয়ে যান তাঁদেরই ঘরানার সমসাময়িক ধ্রুপদীয়া উদয় ভট্টাচার্যকে। উদয়বাবুর পুত্র ধ্রুপদীয়া অরুণ ভট্টাচার্য সম্প্রতি যদুভট্টের স্মৃতি বিজড়িত এই তানপুরাটি (সঙ্গের ছবি) দান করেছেন ভারতীয় সংগ্রহালয়ে। অমূল্য এই ঐতিহাসিক সঙ্গীত-সহায়ক একক যন্ত্রটি নিয়ে ইন্ডিয়ান মিউজিয়ম ডিসেম্বরের প্রথম দিকে আয়োজন করছে একটি বিশেষ প্রদর্শনীর। ‘যদুভট্টের জীবন ও সময়’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী এই প্রদর্শনীর সঙ্গে থাকবে ধ্রুপদ গানের আসর। প্রদর্শিত হবে পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র প্রযোজিত ও অশোক বিশ্বনাথন পরিচালিত ‘বিষ্ণুপুর ঘরানা’ শীর্ষক তথ্যচিত্রটি। সঙ্গে সেই তানপুরার ছবি।

কলতান
রাজনীতি আর অর্থনীতির তুমুল কলরবে যখন নরম, অনুচ্চ কোনও স্বরই শোনা যাচ্ছে না, তখন দু’দু’টো প্রকৃতি বিষয়ক পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যা ঘরে এল এক-ঝাঁক পাখির কলতানের মতো। ‘বন’ (মুখ্য সম্পা. বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য) ও ‘বন্যপ্রাণী’ (সম্পা. হিরণ্ময় মাইতি) ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে মুদ্রণ-পারিপাট্যের কারণে। ‘বন্যপ্রাণ’-এর এই বিশেষ পাখি সংখ্যায় পক্ষিজগতের নানা সদস্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী সহ আরও অনেকে। নজর কাড়ল কিশোর পরিবেশবিদের নোটবুক। ‘বন’ পত্রিকায় আছে বেশ ক’টি অরণ্য পর্যটন-বৃত্তান্ত, সঙ্গে জয়দীপ, সুচন্দ্রা কুণ্ডুর লেখায়-ছবিতে পর্যটকদের নোংরামি। প্রবাদপ্রতিম গোরিলা-গবেষক, চোরাশিকারিদের হাতে অকালে নিহত ডায়ান ফসি-র চরিত্রের এক উল্লেখনীয় দিক উন্মোচন করেছেন রতনলাল ব্রহ্মচারী। একাধিক রচনা আছে বোর্নিয়োর ওরাংওটাং নিয়ে, নিবেদিতা ও সুবীর ঘোষ এবং অর্পিতা চক্রবর্তীর কলমে। সুবীর ঘোষ লিখেছেন অস্ট্রেলিয়ার পাখি ও ক্যাঙারু নিয়েও। তবে মুদ্রণপ্রমাদ আর ভুল পরিচিতি দু’টি পত্রিকাতেই গর্জনশীল।

উপাশ্রয়
সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত তাঁর অসুস্থতাকে তুচ্ছ করে আবার উপস্থিত রঙ-তুলি নিয়ে। এ বারও কৃষ্ণ তাঁর প্রেক্ষাপট। উদয়গিরি ও খণ্ডগিরি’র কাছেই বৌদ্ধস্তূপ, সেখানে বয়ে চলেছে ‘দয়া’ নদী, যা কলিঙ্গ যুদ্ধের নীরব সাক্ষী। এই স্তূপ যেন সিদ্ধার্থ সেনগুপ্তের ‘কৃষ্ণ’। এর আগেও শিল্পীর কাছ থেকে পেয়েছি ‘কৃষ্ণ কথা’, ‘কৃষ্ণ যাপন’ সিরিজের চিত্রকলা। ১৩ নভেম্বর দীপাবলির সন্ধ্যায় বিড়লা অ্যাকাডেমিতে রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ও নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি সিদ্ধার্থের এ বারের প্রদর্শনী ‘উপাশ্রয়’ উদ্বোধন করবেন। থাকছে মীরা গোপালকৃষ্ণণের রবীন্দ্রসঙ্গীত।

জগৎ শেঠ
জগৎ শেঠদের নিয়ে অনির্বাণ ঘোষ ও অঞ্জন ভট্টাচার্য তৈরি করেছেন একটি তথ্যচিত্র, দ্য ‘লিগ্যাসি অফ জগৎ শেঠ’, প্রযোজনা মানস বিশ্বাস। তাজুদ্দিন আহমেদের গবেষণায় এসেছে মহিমাপুরের জগৎ শেঠ মহাতপ রায় আর পলাশির যুদ্ধ, মারোয়াড়িদের দেশছাড়া হওয়ার যন্ত্রণা, বঙ্গে বাণিজ্যলক্ষ্মী লাভের কাহিনি। আর্কাইভাল ফুটেজ-এর ব্যবহার, চিত্রভাষায় রাজস্থানের মরুভূমি থেকে বড়বাজারের গলি অব্দি ছড়িয়ে-পড়া এক জাতির ইতিহাস। প্রচলিত অনেক ভুল ধারণা ভাঙতে সাহায্য করে এই ছবি। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তথ্যচিত্রটি দেখা যাবে ১৩ নভেম্বর সাড়ে তিনটেয় বাংলা আকাদেমি সভাঘরে।

সুনীল
‘কোথায় চললেন, ও সুনীলদা?/ কে বলছ?/ আগে কখনও তো জিজ্ঞেস করনি ভাই!/ নাহ্, আপনার চারপাশে যে বড্ড ভীড়.../ এখন ঠোঙার মধ্য থেকে হাউয়ের মতো কেমন হুস করে উঠে গেলেন,/ ঠিক সন্ধিপুজোর সময়টায়, দীপাবলির আগে!.. ’ বাণী বসুর লেখনীতে উঠে এলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। সাহিত্য অকাদেমি আয়োজন করেছিল আলোচনাচক্র ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়’। ‘দেশ’ পত্রিকায় সুনীলের প্রথম কবিতা লেখা এবং সেই সূত্রেই চিঠির মাধ্যমে তাঁকে ডেকে পাঠানো নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর স্মৃতিতে সুনীলের সঙ্গে প্রথম আলাপ। সেই ‘দেশ’ পত্রিকার কবিতা-সম্পাদক সুনীলই ডেকে পাঠিয়েছিলেন নবীন কবি পিনাকী ঠাকুরকে। আরও অকপট শ্রীজাত স্কুলজীবনে বান্ধবীকে প্রভাবিত করতে সুনীলের কবিতা টুকে নিজের বলে চালান এবং ধরা পড়ে যাওয়া! উৎপলকুমার বসু, দিব্যেন্দু পালিত, নবনীতা দেবসেনদেরও স্মৃতি আর আলোচনা। দেখানো হল কবির জীবন ও কাজ নিয়ে সাহিত্য অকাদেমির তৈরি তথ্যচিত্র।

আলোর মেলা
সে সময় লোকালয় তেমন ছিল না। আশপাশে জলাজমি আর জঙ্গল। কয়েক ঘর লোকের বাস। এঁরাই নিজেদের মতো করে যাদবপুরের কালীবাড়ি লেন-এ শুরু করেছিলেন শ্রীশ্রী আদি সর্বজনীন কালীপুজো। সঙ্গে বাজি। নিজেরাই বানাতেন। কার তুবড়ি ভাল, প্রতিযোগিতা শুরু হল। ’৭৮-এ পুজো চলে আসে যাদবপুর ৮-বি স্ট্যান্ড সংলগ্ন সুপারমার্কেটের সামনে। দায়িত্বে যাত্রিক ক্লাব। শুরু হল ‘সারা বাংলা বসনতুবড়ি প্রতিযোগিতা’। ফি-বছর কালীপুজোর সন্ধেয় বসে এর আসর। চার তলা বাড়ি সমান বাঁশ বেঁধে করা হয় মাপকাঠি। উঁচু বাড়ির ছাদে বিচারকরা। কৃষ্ণনগর, হাওড়া, ডায়মন্ডহারবার সহ সারা বাংলা থেকে আসেন একশো প্রতিযোগী।

মিষ্টি ষড়যন্ত্রী
‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা’ সুস্থ শরীর ও দীর্ঘায়ু কামনায় ভাইফোঁটায় বোনের মঙ্গলকামনা। শেষে থালা ভরে মিষ্টিমুখ। অথচ মিষ্টিই গভীর ষড়যন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে অবশ্য পরিস্থিতির শিকার নিরীহ মিষ্টিকুল। সকলের অজান্তে! ধরুন মাছওয়ালার থেকে পাওয়া নোটটি দিলেন মিষ্টি বিক্রেতাকে। সেই হাতেই মিষ্টি লেনদেন! অপরিষ্কার নোটে বাড়বাড়ন্ত জীবাণু ও সংক্রামক ব্যাকটেরিয়ার। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পরিচ্ছন্নতার সহজ পাঠ মানলেই জীবাণুদের ঠেকানো সম্ভব। কিছু দোকানে অবশ্য গ্লাভস ব্যবহার করা হয়, বা ক্যাশ কাউন্টার আলাদা। তবুও রসগোল্লার মতো গুটিকয় ছাড়া সিংহভাগ মিষ্টির বরাত খারাপ। ভাইফোঁটায় যম দুয়ারের কাঁটাটা যেন শুধু দু-একটি মন্ত্র উচ্চারণেই আটকে না থাকে!

সেবাব্রতী
সে সময়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ও লোকসভার সদস্য নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নানা জনহিতকর কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্ত্রী বীণাপাণিদেবীও ছিলেন তাঁর সহব্রতী। লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্রোপাধ্যায় বাবা-মায়ের সেই আদর্শ অনুসরণে তৈরি করেছেন ‘নির্মলচন্দ্র বীণাপাণি জনকল্যাণ ট্রাস্ট’। উদ্দেশ্য শান্তিনিকেতন ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের উন্নয়ন। নানা কাজ করছেন ওঁরা। ‘জ্যোতি বসু সেবা কেন্দ্রে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়ার বন্দোবস্ত। বিনা বেতনে কোচিং স্কুল। প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রী ও অঞ্চলের ‘শিশুতীর্থ’ বিদ্যালয়ের ছোটদের আর্থিক সাহায্য। কৃতী ছাত্রছাত্রীদের জন্য জলপানির ব্যবস্থা। সম্প্রতি মেয়েদের কলেজে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্যও আর্থিক সাহায্য করা হচ্ছে অসচ্ছল পরিবারের ছাত্রীদের।

শ্রী
বাবা-মা সরকারি আর্ট কলেজের স্নাতক। মেয়ের মন জুড়ে নাচ। শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী হিসেবে গড়ে তোলেন নিজেকে। পনেরো বছরে প্রথম মঞ্চে। কুড়ি বছর নাচকে পাথেয় করলেও রং-তুলি কিন্তু থেকে গিয়েছিল মনের কোণে। নাচের পৌরাণিক চরিত্রগুলোকেই দৃশ্যমান করতে ক্যানভাসকেই এ বার বাছলেন মধুবনী চট্টোপাধ্যায়। গ্যালারি গোল্ড-এ (৩-৮টা) চলছে প্রদর্শনী ‘শ্রী’। ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত।

বিকল্প
আলো চলে গেলে ওঁদের ভরসা সেই কুপি, মোমবাতি, হ্যাজাক বা লন্ঠন। জেনারেটরের ব্যবস্থা অল্প কিছু ক্ষেত্রে। বাঁশ-কাঠ-প্লাই-খড়-দড়ির রাজত্বে এ ব্যবস্থা নিশ্চয়ই ঝুঁকিপূর্ণ। তবু এই ভাবেই দিন গুজরান করতে হয় কুমোরটুলির শিল্পীদের। হৃদয় থাকলেই উপায় হয়। হৃদয় আর উদ্যোগ। কলকাতার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ফোর্স ফর রুরাল এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড ইকনমিক ডেভেলপমেন্ট’ (ফ্রিড) দীর্ঘ দিন কাজ করছে মহিলা স্বনির্ভরতা ও পরিবেশ-বান্ধব শক্তি নিয়ে। সম্প্রতি এদেরই উদ্যোগে কুমোরটুলির শিল্পী চায়না পালের হাতে তুলে দেওয়া হল একটি সৌরলন্ঠন। সংস্থার আশা, সৌরশক্তিই যে ভবিষ্যতের বিকল্প রাস্তা, তা বোঝার সময় এসে গিয়েছে। উপহারে উৎসাহিত শিল্পী সৌর আলোতেই শেষ তুলির টান দিলেন (উপরে ছবি)।

হীরালাল সেন মঞ্চ
গত শতকের গোড়ার কথা। ময়দানে তাঁবু খাটিয়ে এক পাসির্র্ ব্যবসায়ী সিনেমা দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন কলকাতার বাঙালিকে। বছর দুয়েকের মধ্যেই সেই জে এফ ম্যাডান নিজের নামে কোম্পানি খুলে তৈরি করেন প্রথম বাংলা নির্বাক ছবি ‘বিল্বমঙ্গল’। তাঁরও আগে এক বাঙালি, হীরালাল সেন, তিনিও ছবি বানাচ্ছিলেন পর পর। কিন্তু তাঁর যন্ত্রপাতি ফিল্মটিল্ম সব পুড়ে যায়। প্রামাণ্য কিছু না থাকলেও বাঙালি অবশ্য আজও তাঁকে সিনেমার পথিকৃৎ ভাবতেই ভালবাসে। খাতায় কলমে পথিকৃৎ কিন্তু দাদাসাহেব ফালকে, ১৯১২-য় তাঁর তৈরি ‘রাজা হরিশচন্দ্র’-এর সুবাদে। এ-সমস্ত স্মৃতিতে এবং ভারতীয় সিনেমার একশো বছর উপলক্ষে এ বারের কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে ‘হীরালাল সেন মঞ্চ’ নামে তাঁবু বসেছে নন্দন চত্বরে। তাতে লাগাতার নির্বাক ছবি, বাইরে তার সঙ্গে দেবজ্যোতি মিশ্রের অর্কেস্ট্রা। রয়েছে পুরনো সবাক ছবিও। ছবির ফাঁকে ফাঁকে গুণিজনের আড্ডা। সর্বোপরি সিনেমা নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার।

নাইটিঙ্গেল
বারো বছরে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশনে প্রথম হয় মেয়েটি। বাবা অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় চেয়েছিলেন মেয়ে হোক বিজ্ঞানী বা গণিতজ্ঞ। কিন্তু মেয়ের আগ্রহ কবিতায়। বারো বছরেই লিখতে শুরু করেন ইংরেজিতে। তার লেখা নাটক পড়ে খুশি হয়ে হায়দরাবাদের নিজাম বিদেশে পড়ার স্কলারশিপ দেন। প্রকৃতিই ছিল অনুপ্রেরণা। লিখেছেন বহু কবিতা। কবিতায় ফুটে উঠত ভারতীয় সংস্কৃতি ও সরলতা। ১৯০৫-এ তাঁর প্রথম কবিতা সংগ্রহ প্রকাশিত হয়। উত্তরপ্রদেশের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল বা জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভাপতি সরোজিনী নাইডুকে আমরা চিনি। কিন্তু কবি সরোজিনী থেকে গিয়েছেন বাঙালির কাছে অন্তরালে। অথচ ইংরেজি কবিতার জন্য ‘প্রাচ্যের নাইটিঙ্গেল’ বলা হত তাঁকে। সরোজিনীর কবিতা সংগ্রহ থেকে ১৭টি কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে অডিয়ো সিডি ‘দ্য পিলগ্রিমেজ অব লাভ’ (এসটিএম ক্যাসেট)। ভালবাসার বিভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে লেখা কবিতাগুলো পাঠ করেছেন সুবোধ সরকার ও শর্মিলা রায়। সম্প্রতি প্রকাশিত হল সিডিটি।

শতবর্ষে জ্যোতিরিন্দ্র
নবজীবনের গান প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছিল অপেরার ঢঙে। মঞ্চের ডান দিকে প্রথম উইং দিয়ে প্রথম দল ঢুকে গাইত ‘না না না মানব না’, তার পর দ্বিতীয় দল ডান দিকেরই পিছনের উইং দিয়ে ঢুকে গাইত ‘থেমো না থেমো না এদিকে শুনতে পাও কি ক্ষুধার কান্না’, তার পর তৃতীয় দল দুর্ভিক্ষপীড়িতরা ঢুকত বাঁ দিকের পিছন দিয়ে ‘ফ্যান দাও ফ্যান দাও’ বলতে-বলতে, তারও পর ‘রঙিন আকাশে চাঁদের সুরা’ বলতে-বলতে আরও একটি দল। তৃপ্তি মিত্রের স্মৃতিচারণ, গণনাট্য সঙ্ঘের প্রযোজনায় জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের (১৯১১-১৯৭৭) সৃষ্টি নিয়ে। তাঁর মধুবংশীর গলি নিয়ে ফ্যাসিবিরোধী সঙ্ঘের হয়ে নানা জায়গায় আবৃত্তির সময় শম্ভু মিত্র জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র তৃপ্তি মিত্র তিন জনই ভাগাভাগি করে বলতেন। দেখা গেল, শম্ভু মিত্র একলা করলেই বেশি ভাল লাগছে। জ্যোতিরিন্দ্র সম্পর্কে তৃপ্তি মিত্রের মন্তব্য: ‘একদিকে এত বড় শিল্পী, এতখানি বুদ্ধিমান অথচ এত বড় নিরহঙ্কারী মানুষ তো সহজে দেখা যায় না...।’ সেই মানুষটির শতবর্ষ উদ্যাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠান তাঁরই জন্মদিনে, ১৮ নভেম্বর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিগুণা সেন অডিটোরিয়ামে সন্ধে ৬টায়, কন্যা সুস্মিতা মৈত্র রায়চৌধুরী ও জামাতা দেবাশিস রায়চৌধুরীর উদ্যোগে। প্রথম ‘জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র স্মারক বক্তৃতা’ দেবেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। হিন্দুস্থান রেকর্ডের সৌজন্যে প্রকাশ পাবে ‘ধ্যান ভাঙো’ সিডি, তাতে আছে জ্যোতিরিন্দ্রের ঝঞ্ঝার গান ও অশ্রুতপূর্ব গানের নতুন রেকর্ডিং, তাঁর সুরারোপিত বিষ্ণু দে-র কবিতা, শম্ভু মিত্রের মধুবংশীর গলি আবৃত্তি। তাঁকে নিয়ে একটি ওয়েবসাইট-এর সঙ্গে তাঁর রচনাসমগ্র-এরও (প্রথম খণ্ড। সপ্তর্ষি) প্রকাশ সে সন্ধ্যায়। পরিবেশিত হবে তাঁর সুরারোপিত লম্বকর্ণপালা-র কয়েকটি গান। অনুষ্ঠান শেষ হবে ‘এসো মুক্ত করো’ গানটি দিয়ে।
   

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.