বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের রক্তাল্পতা দূর করতে রাজ্যের সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে আয়রন ট্যাবলেট দেওয়ার প্রকল্প চালু হচ্ছে আগামী বছরে। কী ভাবে এই প্রকল্প চালানো হবে, তা নিয়ে রূপরেখা তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের প্রায় এক কোটি ছেলেমেয়ে এই প্রকল্পের আওতায় আসবে।
ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেল্থ সার্ভে (এনএফএইচএস)-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে বয়ঃসন্ধির ৫৫ শতাংশের বেশি ছেলেমেয়ে রক্তাল্পতায় ভোগে। ছেলেদের থেকে মেয়েদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি। এ রাজ্যে বয়ঃসন্ধিকালীন মেয়েদের মধ্যে রক্তাল্পতার হার ৫৫.৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় সরকার এ বছরই সাপ্তাহিক আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড পরিপূরক (উইকলি আয়রন অ্যান্ড ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট, সংক্ষেপে ‘উইফস’) দেওয়ার প্রকল্প চালু করেছে। এ রাজ্যে প্রকল্পটি শুরু হতে চলেছে জানুয়ারিতে। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের এবং স্কুলছুটদের ক্ষেত্রে ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের সপ্তাহে একটি করে আয়রন ট্যাবলেট আর বছরে দু’বার কৃমির ওষুধ দেওয়া হবে। স্কুলছুটদের ক্ষেত্রে ছেলেরা বাদ কেন? স্কুলশিক্ষা দফতর জানাচ্ছে, স্কুলছুট ছেলেদের খুঁজে বার করা মুশকিল। মেয়েদের ক্ষেত্রে সেটা অপেক্ষাকৃত সহজ।
বস্তুত মেয়েদের মধ্যে রক্তাল্পতা দূর করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের একটি ‘স্কুলভিত্তিক রক্তাল্পতা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প’ বছরখানেক আগে থেকেই চালু ছিল। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের আয়রন ট্যাবলেট দেওয়া হত। কিন্তু এ রাজ্যে তো বটেই, প্রকল্পটি কোথাওই ঠিক ভাবে রূপায়িত হয়নি। স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, মূলত সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। যেমন, খালি পেটে আয়রন ট্যাবলেট দেওয়ায় অনেক মেয়েরই শরীর খারাপ হয়েছিল। এর ফলে অভিভাবকেরা আর ওই ওষুধ খেতে দিতে চাননি। এ বার তাই কিছু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি করেছে সরকার।
রাজ্যে এই প্রকল্প কার্যকর হচ্ছে তিন দফতরের উদ্যোগে স্কুলশিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দফতর। স্কুলশিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, রাজ্যের প্রায় এক কোটি ছেলেমেয়ে এই প্রকল্পের আওতায় আসবে। তাঁর কথায়, “ট্যাবলেট দেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষক-শিক্ষিকা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ট্যাবলেট খেয়ে কারও কোনও সমস্যা হলে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া হবে।” প্রকল্পের কাজ কেমন চলছে, কেন্দ্রের কাছে সে ব্যাপারে নিয়মিত রিপোর্ট দিতে হবে রাজ্যকে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ আরতি বসু সেনগুপ্ত, শিশু বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষ বা মেডিসিনের চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পকে স্বাগত জানাচ্ছেন। যদিও প্রশ্ন উঠেছে, সব ছেলেমেয়েরই আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার দরকার আছে কি?
চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, কার কেমন প্রয়োজন, সেটা আগে দেখে নিয়ে প্রকল্প চালু করাই ভাল।
কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের মতে, এত জন ছেলেমেয়ের প্রয়োজন যাচাই করে ওষুধ দেওয়া সম্ভব নয়। আবার চিকিৎসকদের মতে, দরকারের চেয়ে বেশি আয়রন ট্যাবলেট খেলে শরীরে কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন, বমিভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেট খারাপ হওয়া। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা সব থেকে বেশি। চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, “পূর্ব ভারতে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অনেক। সবার ক্ষেত্রে অসুখটি চিহ্নিতও নয়। এদের জন্য আয়রন একেবারেই নিষিদ্ধ। তা ছাড়া, প্রয়োজনের বেশি আয়রন খেলে সকলেরই লিভারের উপরে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।”
সাধারণ ভাবে আয়রন ট্যাবলেট হজমের সহজ রাস্তা কী? অরুণাংশুবাবু বলেন, “এই ওষুধের সঙ্গে লেবুর জল খেলে উপকার হয়। এতে ট্যাবলেট হজমে সুবিধা হয়, তেমনই বমিভাব থেকেও রেহাই মেলে।”
|
রক্তাল্পতা ঠেকাতে প্রকল্প |
• আওতায় রাজ্যের ১৩,২৩১ স্কুল
• প্রতি সোমবার আয়রন ট্যাবলেট
• খেতে হবে খাবার খাওয়ার পরে
• স্কুলছুটদের ট্যাবলেট অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে।
• কৃমির ওষুধ অগস্ট ও ফেব্রুয়ারিতে। |
|
ধূমপান কমাতে
সংবাদসংস্থা • লন্ডন |
নিয়মিত শর্করা-সমৃদ্ধ লেমনেডের কুলকুচিতে কমতে পারে ধূমপানের অভ্যাস। তবে সাময়িক। জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের দাবি, লেমনেডের শর্করা জিভের মাধ্যমে মস্তিষ্কের আত্ম নিয়ন্ত্রণকারী অংশকে উদ্দীপিত করে। সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স-এ প্রকাশিত। |