রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ১...
ক্যানসার বিক্কিরি আছে
ক্যানসার
এক বার সুপার-শহিদ ঠোঁট থত্থর কাঁপিয়ে তথ্যটি জাস্ট খৈনির মতো বাজারে ছিটকে দিন, ব্যস, ফাটাকেষ্টর পুজোয় শিঙে বাজিয়ে হ্যাজাক সাজিয়ে ভ্যাইপি গেট দিয়ে চামুণ্ডা-দর্শন করতে নিয়ে যাবে। কলচর-ওলা উদ্যোক্তা ‘ও টুনির মা’ নিবিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘নিঠুর হে’। আর যদি দীর্ঘ কেমো-ফেমো নিয়ে ন্যাড়া ভুগে ফের বাবরি গজিয়ে ক্যানসার ব্যাটাকে লাথ ঝেড়ে ক্লাইম্যাক্সে ‘সার্ভাইভর’? উদ্দাম তালিয়াঁ, আপনিই পুজোর ফিতে কাটবেন কুমার শানুর সঙ্গে মেটুলি সাঁটবেন মায়ের হ্যালহ্যাল সোনার জিভ নিজ হস্তে ঐশ্বরিক এঁটো টাকরায় ফিটিং করবেন, লাইভ দেখাবে পাড়ার কেব্ল। কিন্তু রিকশার পেছনে যেমন ‘হাইপোথেকেটেড টু কানাড়া ব্যাংক’, তেমন ললাটে লাগিয়ে ঘুরুন ‘কৃতজ্ঞতা: অমুক ক্রিকেটার’।
দশ মাস কোনও প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট না খেলে তিনি চোঁওও ল্যান্ড করলেন ভারতের বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি ড্রেসিং রুমে, কারণ নির্বাচনের নিয়ম নীতি গুলি মার মামা, ইন্ডিয়া ইজ নাইট্যশালা, চাটছি মেলোড্রামা! রস গড়িয়ে গোটা ম্যাপ চপ্পাচপ, ও দিকে সেঞ্চুরি করা প্লেয়ার বসে গ্লাভসের বুড়ো আঙুল চিবিয়ে ডাঁটা। পরে তিনি কী খেলেছেন না-খেলেছেন আলাদা কথা, কিন্তু নির্বাচকরা চৌকা-ছক্কা না দেখে গলা-জলে বারমুডা পরে অশ্রু-গ্যালন মাপছেন, ‘ছি, ভাইয়ের অসুক করেছে, খেলতে দিতে হয়’ তত্ত্বে সিমপ্যাথি-ট্রেনে চড়ে কামরা বার্স্ট করিয়ে দিচ্ছে জনগণ ও স্পনসর, বেহায়া টিআরপি-যুগ ছাড়া হত না। আপনার স্টলে বিরাট ফেস্টুনে লিখুন ‘ক্যানসার কাকু’, জঘন্য ছবি অগা কবিতা সাংঘাতিক দামে বেচুন, কেউ দরাদরি করলে অ্যায়সা টসটসে চাউনি হানুন, যেন বায়োপ্সি রিপোর্টে ‘শালা’ লিখেছে।
‘এফ ডি আই’ মানে
কী যেন পদ্যে রবি ঠাকুর একটা ভাল কী যেন লিখেছিলেন: বাঙালির হাঞ্চ, কিন্তু এগজ্যাক্ট ইয়েটা কোট করা নিরন্তর নখচচ্চড়ি চিবিয়েও হয়ে ওঠে না। সেই বাঙালি এখন ‘এফ ডি আই’ খাসা না সর্বনাশা তা নিয়ে মাছের পটকার মতো মুহুর্মুহু ফাটাচ্ছে মগজ ও ফুসকুড়ি, কিন্তু উহার ফুল ফর্মটা কী, জিগালে মুন্ডু আমাশা-পায়ুর ন্যায় আঁট। আপনি এই পূর্ণ রূপ সাপ্লাই করুন। কিন্তু একটাই উত্তর হোলসেল নয়, তাইলে ওরাল পরীক্ষার মতো রিলে, বেওসা লাটে। প্রতি খদ্দেরকে নয়া কোড ফিসফিসোন।
ফড়িং ধরতে ইন্টারেস্টেড’
‘ফগড়ামি দেখলেই ইসবগুল’
‘ফেলুদা দিচ্ছে ইঙ্গিত’
‘ফাঁদে ধপাস ইন্ডিয়া’।

মোবাইল কালী
‘ফোন থাকতে চোখ কেন’ স্মার্টামি গড়াতে গড়াতে অ্যাদ্দূর, তীব্র গাঁইয়া ছাড়া কেউই নিজ নেত্র ভরে ঠাকুর দ্যাখে না, প্যান্ডেলের সামনে এসেই মোবাইলটি উচ্চে তুলে ক্লিক। টাইগার হিলেও তাই, সেক্সেও। দৃষ্টির ইউনিট পিক্সেল, ফ্ল্যাশব্যাকের জিবি। বাবা কেমন দেখতে, ভুলে গেলে মোবাইল খুলে চেক করে নিলেই হল। আপনি থিমের কড়ায় যুগ-ফোড়ন ছেড়ে, মোবাইল-সই দেবী বানান: কালোজিরের ন্যায় খুদে প্রতিমা, চোখ টাটিয়ে টিপ করলে সিয়োর জয়বাংলা, কিন্তু মোবাইলে জুম করলে দিব্য পরিষ্কার। যার থ্রিজি, তার বেটার মাতাজি। পুজো-পরিক্রমা যখন ইমেজ-গ্যালারিতেই রোক্কে, কেন আদৌ দেখতে দেব চর্মচক্ষে?

বিদেশি সিন
বহু কাল পূর্বে, সিনেমা করতে প্রতিভা লাগত, এখন লাগে ডিভিডি-লাইব্রেরির মেম্বারশিপ কার্ড। কিন্তু পার্টি যাওয়া, কাউচ কাস্টিং, প্রোডিউসারের ফোকলা ছেলেকে পিঠে নিয়ে ঘোড়া-ঘোড়া, সকল ধকল সামলে মাঝরাত্রে ফিরে সাবটাইট্ল-ওলা ফিল্ম দেখতে পরিচালক ঢুলে ঢোল। ইদিকে প্রাচীন চ্যাপলিন থেকে হালের কোরিয়ান সাপ্টে টুকলে তবে অস্কার যাওয়াযাওয়ি। আপনি এঁদের তলপেটি খাটুন। পাঁইপাঁই ফরেন ছবি দেখুন আর ফ্রেম বাই ফ্রেম চোতা। খাতার ওপরে ‘অথর ইজ ডেড’ সেঁটে, পরিচালকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গোপন গাঁজার ন্যায় সাপ্লাই দিন। নিন: পয়সা, খুল্লম আইটেম নাম্বারের শুটিং দেখার গেট-পাস।

সুনীলের অপ্রকাশিত চিঠি
খেয়াল করুন, রবীন্দ্রনাথ মারা যাওয়ার অ্যাদ্দিন পরেও উদগ্র আরশোলার মতো কয়লাগুদামের কোণ থেকে লফ্টের খাঁজ থেকে মাটির তলার ঘড়া থেকে পিলপিল বেরিয়ে আসছে তাঁর অপ্রকাশিত চিঠি। আপনি চট করে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কিছু অপ্রকাশিত চিঠি লিখে ফেলুন। দু’রকম প্যাটার্ন। একটা সাইজে বড়, দর্শন থাকবে। গভীর নয়, খেলো। মধ্যবিত্ত যাতে বুঝতে পারে। যেমন, ‘মানুষ আসলে একা। হাঁটতে হাঁটতে মনে হয় সব স্টেশনের নামই দিকশূন্যপুর। তা ছাড়া সিগারেট অবধি ফুরিয়ে যায় এই নশ্বর জগতে।’ অন্য টাইপটা ছোট, কেজো। ‘প্রিয় ঝন্টু, পাঁচশো চিনি পাঠাইয়া দিবা। আঃ সুনীলদা।’ আঃ মানে আশীর্বাদক, না সুনীলকে তখন মশা কামড়েছিল, ফুটনোটে লিখুন। প্রচুর অবান্তর ফুটনোট দিন, নইলে অথেন্টিক মনে হবে না। আর হ্যাঁ, কেচ্ছা। সুনীল এক কবিবন্ধুকে আর এক কবিবন্ধুর নামে যাচ্ছেতাই গালাচ্ছেন, বাঘা পাবলিশারকে ফতোয়া টাঙাচ্ছেন ‘ওর বই ছাপা হলে কিন্তু কুরুক্ষেত্র’ কিংবা ফড়েপুকুরে প্রাইজের অর্ডার দিচ্ছেন ‘একটি চকচকে অ্যাকাডেমি পুরস্কার এই নবীন কিশোরের হাতে দেবেন, পরে আমি পয়সা দিয়ে দেব’ এ জিনিস পড়তে পাবে না। যৌনতা মাস্ট। নইলে মামলা হবে না। যে নামগুলো উল্লেখ করলে তুলকালাম, সেগুলো রাখুন, হাবিজাবি নামের ক্ষেত্রে ইঙ্গিতপূর্ণ ড্যাশ মারুন। ‘কালকে সাতটায় কে প্রেম নিবেদন করলাম। বলল, শক্তি আগেই করে রেখেছে। শক্তি বলল, সন্দীপন রেকমেন্ড করেছিল। এ দিকে --এর স্বামী পাওয়ারফুল মন্ত্রী, সন্দীপনের পিছনে পুলিশ লেলিয়েছে। ভেবেচিন্তে, সাড়ে আটটায় --এর ভাইঝি কে নিয়ে বকখালি চলে গেলাম।’ সাত-আটটা চিঠি কালীপুজোয় পেপারব্যাকে ছাড়ুন। পরের দুর্গাপুজো থেকে শারদীয় ম্যাগের সম্পাদকরা আপনার পায়ে ডাইভ। প্রত্যেক পুজোয় নতুন চিঠি খুঁজে পান।

ঘটনা পার্লার
বর-বউ সাজানো প্রাগৈতিহাসিক, এখন সাজতে আসে ঘটনারা। পথেঘাটে ‘সাজানো ঘটনা’ ঘুরে বেড়াচ্ছে। রুজ ল্যাকার গুলি মারুন, কাউকে ক্রূর ধর্ষণাঁচড়, কাউকে বসে-যাওয়া ক্রেন দিয়ে সাজান। যেই রাইটার্স থেকে চেঁচানি উঠবে ‘সাজানো!’, অমনি মিডিয়া হাঁকড়াবে ‘কে সাজাল?’ আপনি পুলকিত হাত তুলে ‘মম পার্লার!’ সরকারি অনুদানে ল্লাল। থুড়ি, সব্জে।
শান্তিগোপালের মুখোশ ব্যবসাটির সেরা ট্রিক: যে কোনও মুখোশই শান্তিগোপালের মুখোশ। আপনাকে নতুন কিচ্ছু বানাতে হবে না। গ্যাদাড়ে বেচুন লেনিন, নেতাজি, সাঁইবাবা, সচিন, স্পাইডারম্যান। মিকি মাউসের-টা বাদ রাখুন, ছি।

নিউ ইয়র্ককে কলকাতা
কলকাতাকে লন্ডন বানানো কিঞ্চিৎ বাকি, কিন্তু নিউ ইয়র্ক প্রায় কলকাতা, ‘স্যান্ডি’ ঝড়ের দাবড়ানিতে। লাখ বাড়িতে টানা লোডশেডিং। ওদের তো একদম অভ্যেস নেই, চুমু খেতে গিয়ে ঠোঁট অবধি খুঁজে পাচ্ছে না। পেট্রল পাম্পে বীভৎস লাইন, ক্রমে খিস্তি, ক্যারাটে। রাস্তাঘাট ভাঙা, জঞ্জাল ডাঁই। আপনি এজেন্সি নিয়ে এক কোটি অটো নামিয়ে দিন। কাটা তেলে চলবে, বাড়ির দেওয়াল বেয়ে ইলেকট্রিকের ছেঁড়া তারে টারজান-ট্র্যাপিজ মেরে অফিস পৌঁছে দেবে। নাগাড়ে গুটখার থুতু ফেলে গোমড়া বিবর্ণ দেশকে ঝ্যাকম্যাকে করা তো আছেই। তিন ছটাক গিয়ে দুশো তিরাশি ডলার চাইবে। ভাড়া নিয়ে ইংরিজিতে ত্যান্ডাই করতে গেলেই টেনে থাপ্পড়। বাকি রইল মোড়ে মোড়ে সায়েবদের পোষা কুকুরের নধর পায়খানা। সলিউশন ইজি। নীল-সাদা রং করে দিন, কলকাতায়ন কমপ্লিট।

ছবি: সুমন চৌধুরী


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.