|
|
|
|
দুষ্কর্ম করেই মিথিলেশ পালাত ভিন্ রাজ্যে |
সুশান্ত বণিক • আসানসোল |
দুষ্কর্মের অভিযোগ তার নামে নতুন নয়। ভিন্ রাজ্যে গা ঢাকা সে আগেও দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের এলাকায় ফিরত সে। আবার শুরু হত দৌরাত্ম্য। বার দুয়েক পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করেছিল। পলিটেকনিক কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণে অভিযুক্তদের তালিকায় নাম ওঠার পরেও মাসখানেক তার খোঁজ পায়নি পুলিশ। অবশেষে বিহারের গোপন ডেরা থেকে মিথিলেশ ওঝাকে গ্রেফতার করার পরে তাঁরা খানিক স্বস্তি পেয়েছেন বলে দাবি রূপনারায়ণপুরের বাসিন্দাদের। এখন ধৃতের কড়া শাস্তির দাবি তুলেছেন তাঁরা। |
|
মিথিলেশ ওঝা। —নিজস্ব চিত্র। |
পলিটেকনিক কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণে যে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল, তাদের মধ্যে মিথিলেশ বহিরাগত। ৯ অক্টোবরের ওই ঘটনার পর থেকেই মিথিলেশকে গ্রেফতারের দাবিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন এলাকাবাসী। বাসিন্দাদের দাবি, শুধু এই ঘটনা নয়, আগেও রূপনারায়ণপুর ও চিত্তরঞ্জন এলাকায় নানা অপরাধে জড়িয়েছে এই মিথিলেশ। আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ও মঙ্গলবার জানান, সালানপুর থানায় মিথিলেশের বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের অভিযোগ আছে। বার দুই সে গ্রেফতার হয়েছে। রূপনারায়ণপুর, চিত্তরঞ্জন এলাকায় প্রায়ই নানা অশান্তিতে জড়িয়ে পড়ত সে। বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত ২৬ জুন সালানপুর থানায় তার বিরুদ্ধে একটি খুনের চেষ্টার মামলা রুজু হয়। সেই মামলাতেও পুলিশ তাকে খুঁজছিল।
পুলিশ জানায়, রূপনারায়ণপুর লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের হাসিপাহাড়ি এলাকায় বাড়ি মিথিলেশের। রূপনারায়ণপুর, চিত্তরঞ্জনে যে কোনও দুষ্কর্মের পরে সে নিজের এলাকায় গিয়ে গা ঢাকা দিত। ফলে, সালানপুরের পুলিশের পক্ষে তাকে ধরা সহজ হত না। পরে সুযোগ বুঝে সে বিহারের নানা গোপন ডেরায় গিয়ে লুকিয়ে থাকত। কিছু দিন পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এলাকায় ফিরত মিথিলেশ। এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রতবাবু বলেন, “এ বারও একই ভাবে গা ঢাকা দিয়েছিল মিথিলেশ। কিন্তু হাসিপাহাড়ি থেকে গোপন সূত্রে তথ্য পেয়ে তাকে বিহার থেকে ধরা হয়েছে।”
রূপনারয়ণপুর এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত মিথিলেশ। মোটরবাইকে সঙ্গীদের নিয়ে বেরিয়ে প্রকাশ্যে রিভলবার থেকে গুলি ছোড়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কয়েক বছর ধরে এলাকার নানা কলেজের ভোটে অশান্তি পাকানোর নেতৃত্বেও থাকত মিথিলেশ। ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সঞ্জয় শুকুল অভিযোগ করেন, ২০১০-এ চিত্তরঞ্জন দেশবন্ধু কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মিথিলেশ তাদের সংগঠনের সদস্যদের মারধরও করেছিল। কিছু দিন ধরে সে রূপনারায়ণপুর পলিটেকনিক কলেজে যাতায়াত শুরু করে। টিএমসিপি-র হয়ে ভোটের প্রচারেও যোগ দেয়। অভিযোগ, ইদানীং রূপনারায়ণপুর পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র সংসদ অফিসে ডেরা বানিয়েছিল মিথিলেশ। কলেজ ছুটির পরে প্রতি দিনই সেখানে আসর বসাত সে।
মিথিলেশ তৃণমূল বা তাদের কোনও শাখা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নয় দাবি করে বারাবনি ব্লক যুব তৃণমূল নেতা পাপ্পু উপাধ্যায় বলেন, “মিথিলেশ ও তার সঙ্গীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছি আমরা।” প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য শ্যামল মজুমদার জানান, মিথিলেশ যাতে ভবিষ্যতে আর রূপনারায়ণপুর এলাকায় না ঢুকতে পারে, তার জন্য পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন তাঁরা। সিপিএমের বারাবনি জোনাল সম্পাদক অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “গণধর্ষণের মতো ঘটনায় জড়িতদের কোনও রাজনৈতিক মদত পাওয়া উচিত নয়। পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করুক।” |
|
|
|
|
|