মন্ত্রীর কাছে দরবার নয়, আন্দোলনে কর্মহীনেরা
নেতা-মন্ত্রীর কাছে দরবার নয়, আন্দোলন তীব্র করাই এখন লক্ষ্য এবিজি-র সদ্য কাজহারা শ্রমিকদের। তাই আজ, রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় হলদিয়ায় এলেও তাঁর কাছে দরবার করার কোনও ইচ্ছা নেই কর্মহীনদের। বরং আগামী ৮ নভেম্বর রাজভবনের সামনে ভুখা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ডিসেম্বরের শিল্প-বাণিজ্য মেলা সংক্রান্ত বৈঠক করতে আজ হলদিয়া সফরে আসছেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সকাল ১১টায় হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের অতিথিশালায় বৈঠকের পরে সিটি সেন্টারে ৪ একর জায়গায় একটি ট্রাক টার্মিনাসের উদ্বোধন করবেন পার্থবাবু।
মন্ত্রীর কর্মসূচিতে যেমন সদ্য কাজ হারানোদের জন্য জায়গা নেই, তেমনই মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সামান্য ইচ্ছাটুকুও নেই কর্মহীনদের। তাঁদের অভিযোগ, শাসকদল তৃণমূলের ‘জঙ্গি আন্দোলনে’ টিকতে না পেরেই পণ্য খালাসকারী সংস্থা এবিজি হলদিয়া বন্দর থেকে ব্যবসা গোটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কর্মরত শ্রমিকদের কথা ভেবে দেখেনি শাসক দল। বরং তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে প্রথম থেকেই ‘বন্দর স্বাভাবিক’ বলে দাবি করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শিল্পমন্ত্রী সবাই। সুতাহাটার মঞ্চে এত দিন ধরে যাঁরা এবিজি থাকার পক্ষে আন্দোলন করছিলেন, সেই শেখ সিরাজ, শেখ নূর আলমেরা বলেন, “শিল্পমন্ত্রী হয়েও তো উনি শুভেন্দু অধিকারীর কথা শুনেই চলবেন। আমাদের সঙ্গে তৃণমূলের কেউই আগে দেখা করেননি। এখন কাজ যখন চলেই গিয়েছে, তখন আর দেখা করে কী হবে? প্রতিবাদ যদি করতেই হয়, রাজভবনে ভুখা আন্দোলন করব আমরা।” নেতা-মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সুদিন ফেরার আশা আর নেই। তাই অন্যত্র কাজ খোঁজা শুরু করে দিয়েছেন কর্মহীনেরা। এবিজি-র ম্যানেজার অপারেশন প্রদীপ ঘোষ ইতিমধ্যেই টাউনশিপের ভাড়া বাড়ি ছেড়ে কৃষ্ণনগরে নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। শিপ লিডার সুব্রত মণ্ডল পুরনো সংস্থায় যোগ দিতে গুজরাত যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার মুখে কর্মসংস্কৃতির কথা বললেও বাস্তবটা যে তা নয় বুঝে গেলাম।”
হলদিয়ার জের। শিল্পের দাবিতে পথে নেমে গ্রেফতার
হচ্ছেন কংগ্রেস কর্মী। শ্যামবাজারে।—নিজস্ব চিত্র
এ ব্যাপারে রাত পর্যন্ত চেষ্টা করেও শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
ব্রজলালচকের মাইতি মোড়ের বাসিন্দা শেখ রেজাবুল হক এখনও নতুন কাজ খুঁজে উঠতে পারেননি। এতদিন দুই ছেলে, এক মেয়ে বৃদ্ধ বাবা-মা ও স্ত্রী-কে নিয়ে টানাটানির সংসার চলে যেত কোনও রকমে। এ বার থেকে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ আসবে কোথা থেকে জানা নেই তাঁর। জানা নেই ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া গৃহঋণ, জীবনবিমা সংস্থা থেকে নেওয়া ব্যক্তিগত ঋণ মেটাবেন কী ভাবে? রেজাবুল বলেন, “ব্যাঙ্কের দেনা শোধ করতে না-পারলে ভিটে বাঁচাতে পারব না। সংসারটা ভেসে যাবে। এক সময় সিটুর দৌরাত্ম্য দেখেছি। এখন পেটে লাথি মারছে তৃণমূল।” সুতাহাটার নন্দরামপুরের লাইনপাড়ের বাসিন্দা সৈয়দ মুঘলে আলম এখন স্ত্রী মমতাজ বিবির সঙ্গে চাটাই তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছেন। কাজ করতে করতে তিনি বলেন, “চাটাই বুনে তো আর সংসার চলবে না। চাষের চেষ্টাও করছি। জীবনটা শেষ হয়ে গেল উঁচু মহলের চক্রান্তে।” চাকরি আছে বলে শিয়ালদহের ইএসআই হাসপাতালে মায়ের ক্যানসারের চিকিৎসা করতে পারতেন মহিষাদলের নাটশালের বাসিন্দা রিয়াজুল খান। সংসার চালানোর পাশাপাশি মায়ের চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছে তাঁকে। ছলছল চোখে রিয়াজুলের মা রাবিয়া বেবা বলেন, “আমার জন্য ছেলের চিন্তা আরও বেড়েছে। বেঁচে থাকার ইচ্ছে নেই আর।” বেকার-বিবাহিত দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার টানতে আগেও হিমশিম খেতে হত কুকড়াহাটির হরিবল্লভপুরের প্রৌঢ় রবীন্দ্রনাথ দাসকে। চাকরি চলে যাওয়ার পরে মল্লভূম গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া দেনা পরিশোধ করবেন কী ভাবে, মনে মনে সেই হিসেবই জপছেন তিনি। আবার ভাগ্যবন্তপুরের রেজাউল সাফুই লজ্জায় পড়েছেন ভুসিমাল দোকানের খাতার বাকির বহর দেখে। ভুসিমাল দোকানের মালিক গৌরহরি দাস অধিকারীর কথায়, “আমরাও তো ব্যবসা করে খাচ্ছি। উনি ধার না শুধলে আমাদের ধার করতে হবে।”
এই ভাবেই ধার শোধ নিয়ে শ্রমিকদের যেমন চিন্তা বাড়ছে, তেমনই তা আদায় করা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে ঋণদানকারী সংস্থাগুলিরও। হলদিয়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা ম্যানেজার হর্ষেন্দুকুমার জানা বলেন, “ঋণ তো শোধ করতে হবেই। তবে আমাদের সঙ্গে কথা বললে সমস্যা বুঝে অনেক সময় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অনেক সময় পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে অধিক কিস্তি করে দিই আমরা।”
পূর্ণচ্ছেদ পড়াটা এখনও হাইকোর্টের হাতে। তবে এসএমএস-এ অধিকাংশেরই টাকার লেনা-দেনা মিটিয়ে দিয়েছে এবিজি। ‘পেট ভরিয়ে দেব’ বলে দায় সেরেছেন নির্বাচিত রাজনৈতিক প্রতিনিধি। জীবনের হিসাবের খাতায় কূল হারিয়ে শুধু দিশেহারা কাজহারারাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.