মরসুমের প্রথম ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল বনাম টোলগে ওজবের লড়াই দেখা থেকে সম্ভবত বঞ্চিত হতে চলেছে যুবভারতী। পরিস্থিতি যা তাতে হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের পর নয় ডিসেম্বর ট্রেভর মর্গ্যানের দলের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকারের মাঠে নামা কঠিন।
মোহনবাগানের হাতেগোনা শীর্ষ কর্তাদের জানিয়ে শনিবার বেশি রাতে অস্ট্রেলিয়া চলে গিয়েছেন টোলগে। সেখানেই শুক্রবার হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হবে তাঁর। জানা গিয়েছে, হাঁটুর একটি ছোট হাড় ভেঙেছে তাঁর। সে জন্যই আর্থ্রোস্কোপি করতে হবে টোলগের। এবং এরপর রিহ্যাব করে মাঠে ফিরতে ফিরতে পাঁচ থেকে ছয় সপ্তাহ লেগে যাবে টোলগের। ক্লাব কর্তারা আশায় থাকলেও অস্থি বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন অন্য কথা। তাদের বক্তব্য, টোলগের সবুজ-মেরুন জার্সি পরে আই লিগে নামতে অন্তত আট সপ্তাহ লাগবেই। অধ্যাপক-ডাক্তার অলোক দত্ত জানাচ্ছেন, “আর্থ্রোস্কোপি করার পর ভাঙা হাড় জোড়া লাগতেই ছয় সপ্তাহ লেগে যায়। তারপর রি-হ্যাব করতে হবে। ফিজিক্যাল ফিটনেস আনতে আরও দু’সপ্তাহ। আট সপ্তাহের আগে কোনও অ্যাথলিটই মাঠে নামতে পারেন না।” ইস্টবেঙ্গলের সহ-সচিব ডাক্তার শান্তি রঞ্জন দাশগুপ্তও একমত অলোকবাবুর সঙ্গে। বললেন, “আর্থ্রোস্কোপির পর খেলার অবস্থায় পৌঁছতে ফুটবলারদের আট সপ্তাহ তো লাগবেই। তাড়াহুড়ো করলেই কিন্তু সমস্যায় পড়তে হয়। আমরা এ সব ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করতে বারণ করি। কারণ, ভাঙা হাড়কে রক্ষা করার ব্যাপারটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।” ডাক্তারদের আশঙ্কা যদি সত্যি হয় তা হলে ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা সামনের বছর জানুয়ারির শুরুতে মাঠে নামবেন টোলগে। অর্থাৎ ডার্বিতে তো নয়ই আই লিগের প্রথম রাউন্ডেই হয়তো খেলা হবে না টোলগের।
অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারটা এতটাই গোপনে করেছেন মোহন-স্ট্রাইকার যে দলের কোচ-ফুটবলাররাও তা জানেন না। করিম বেঞ্চারিফার সহকারী হিসাবে আপাতত পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে টিম চালাচ্ছেন মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার রাতে মৃদুল বললেন, “ওকে মাঠে প্রতিদিন এনে চাপ বাড়াতে চাই না। নিজের ফ্ল্যাটে বসেই চোট সারিয়ে মাঠে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছে টোলগে। আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে অন্য ফুটবলারদের মতোই। সুস্থ হলে মাঠে নামবে।” এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে আই লিগের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচ খেলতে পুণে গিয়েছিলেন টোলগে। সেখানেই অনুশীলনের সময় চোট পান। কিন্তু কেন গোপনে অস্ট্রেলিয়া চলে গেলেন টোলগে? কেন অন্য ফুটবলারদের মতো কলকাতা বা ভারতের কোনও জায়গায় অস্ত্রোপচার করলেন না? ক্লাব সূত্রে জানা গিয়েছে, মুম্বই বা কলকাতায় কোনও বড় ডাক্তারের কাছে আর্থ্রোস্কোপি করার জন্য টোলগেকে বলেছিলেন কর্তারা। কিন্তু ভারতের ডাক্তারদের উপর আস্থা রাখতে পারছেন না টোলগে। তিনি ক্লাব কর্তাদের বলে দেন, অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ত্রোপচার করলে দ্রুত সুস্থ হয়ে চার-পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে ফিরে মাঠে নামতে পারবেন। কর্তারা টোলগের কথা মেনে নেন।
ফেড কাপের একটি ম্যাচ খেলার পরই চোট পেয়ে বাইরে চলে গিয়েছিলেন। আই লিগের দু’টি ম্যাচ খেলেই আবার চোট। দু’কোটি টাকা দিয়ে যাকে আনা হয়েছে দেশের দু’টো সেরা টুর্নামেন্টের অর্ধেক ম্যাচে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। টোলগের চোটে চিন্তিত কর্তারা কপালকেই দুষছেন। তবে তাদের চিন্তা কমিয়েছে স্ট্যানলির ফর্ম। ওডাফার সঙ্গে স্ট্যানলির একটা বোঝাপড়া তৈরি হচ্ছে। টোলগে নিজে কী বলছেন? এ দিন তাকে বারবার ফোন করেও ধরা যায়নি। এস এম এসেরও উত্তর দেননি। তবে ক্লাব সূত্রের খবর, ওডাফার হ্যাটট্রিক ইউ টিউবে দেখেছেন। আর ঘনিষ্ঠ লোকজনকে জানিয়েছেন, তিনিও ফিরে এসে প্রচুর গোল করবেন। করবেন হ্যাটট্রিকও।
|
মরসুমের প্রথম ডার্বিতেই অনিশ্চিত |
টোলগে-নামা |
১৪ মে |
কলকাতা লিগের শেষ ম্যাচে লাল-হলুদ জার্সিতে হ্যাটট্রিক করে রাতেই মোহনবাগানের ডেরায়। |
১৪ জুলাই |
বিতর্ক মেটাতে আইএফএ-র পরপর বৈঠক। |
১৭ জুলাই |
কোর কমিটির প্রথম বৈঠক। পরে জরিমানা এবং মুচলেকা দিয়ে টোলগেকে ছাড়ার অনুরোধ ইস্টবেঙ্গলকে। |
৩ সেপ্টেম্বর |
অনেক টালবাহানার পর টোকেন প্রাপ্তি। |
৫ সেপ্টেম্বর |
এয়ারলাইন্স কাপে জর্জ টেলিগ্রাফ ম্যাচে জোড়া গোল দিয়ে শুরু। |
২০ সেপ্টেম্বর |
ফেড কাপের প্রথম ম্যাচে চার্চিলের বিরুদ্ধে চোট। পরে ভিসা সমস্যা মেটাতে সিঙ্গাপুরে। |
২৮ অক্টোবর |
পুণেতে আই লিগে এয়ার ইন্ডিয়া ম্যাচের আগে অনুশীলনে চোট। |
|