|
|
|
|
|
|
|
সতীত্ব, ফুঃ |
ব্রাজিলের মেয়ে কুমারীত্ব নিলাম করলেন অনলাইনে। নিজের শরীরের চূড়ান্ত
অধিকার নিজের: এই প্রত্যয়ের জন্য তাঁকে কুর্নিশ। সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়
|
টান মেরে ফেলা হয়েছে সময়ে এবং অসময়ে অনেক কিছু জামাকাপড়, টাকাপয়সা, মানসম্মান, ভাব-ভালবাসা, বেআইনি ইনকাম, ভাড়াটের পুঁটলি, প্রেমের চিঠি, চুলির মুঠি ধরে বেয়াদপ বউ, হীরক রাজা, মায় সরকার অবধি। কিন্তু ভর বাজারে টান মেরে ফেলে দেওয়া হল নিজের কুমারীত্ব, স্বেচ্ছায়, আর গলা চড়িয়ে বলা হল, বস্, খ্যাম্তা থাকলে পয়সা দিয়ে নিজ আলমারিতে তোলো এ জিনিস লোকে খুব দেখেছে শুনেছে বলে তো ঠাহর হচ্ছে না।
ব্রাজিলের মেয়ে ক্যাটরিনা এই মহাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার এক ফিল্ম কোম্পানির সঙ্গে তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এই মর্মে যে তাঁর কুমারীত্ব নিলামে তোলা হবে, যে বেশি দর হাঁকবে সে পাবে তাঁর কুমারীত্ব হরণ করার, অর্থাৎ তাঁর সতীচ্ছদ ছিন্ন করে প্রথম যৌন সঙ্গম করার অধিকার। আর, এই কুমারীত্ব বিসর্জনের আগের এবং পরের মনোভাব তুলে রাখা হবে একটি ডকুমেন্টারি ফিল্মে। অস্ট্রেলিয়ার জাস্টিন সিসলে বছর দুয়েক আগে এই ধারণাটি নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি করার কথা ভাবেন, যেখানে একটি মেয়ের এবং একটি ছেলের কৌমার্যকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তোলা হবে নিলামে এবং এই পুরো ব্যাপারটা ফিল্মে তোলা থাকবে। রাশিয়ার একটি ছেলে অ্যালেক্স স্তেপানভ এবং ব্রাজিলের ক্যাটরিনা শেষমেশ নির্বাচিত হন এই নিলামে।
ক্যাটরিনার কুমারীত্বের, আর একটু উত্তেজক করে বলতে গেলে বলা যায় সতীত্বের (কারণ পুরুষশাসিত এই সমাজে কুমারীত্ব আর সতীত্ব সমার্থক) দাম উঠেছে ৭৮০,০০০ মার্কিন ডলার। জাপানের একটি ছেলে কিনেছেন তাঁর কৌমার্য, এই দামে। ক্যাটরিনা বলেছেন, নিলামে পাওয়া অর্থের ৯০ শতাংশ দিয়ে দেবেন চ্যারিটির কাজে। যদিও প্রথমে তাঁর এমন কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। জাস্টিন সিসলে জানিয়েছেন, প্রথমে এই টাকা পাওয়ার পুরো ব্যাপারটা ক্যাটরিনার কাছে ছিল একটা ব্যবসায়িক ডিল। কিন্তু অ্যায়সা নিন্দেমন্দ হল, বেচারি ক্যাটরিনা এখন নাকি ইমেজ বাঁচাতেই এতগুলো টাকা গরিবের উন্নয়নে দেবেন। সাহস অনেক দূর পর্যন্ত গেলেও এক্কেবারে খুব খারাপ মেয়ের তকমাটা সাহস করে এঁটে নিতে পারছেন না বোধহয়। যদিও সতীত্ব নিলামের ব্যাপারটা থেকে কুড়ি বছরের এই তরুণী সরে আসেননি। অন্তত এ জন্য তাঁকে কুর্নিশ। |
|
আর অন্য দিকে স্তেপানভ-এর কৌমার্যের মূল্য উঠেছে মাত্র ৩০০০ মার্কিন ডলার। ব্রাজিলেরই মেয়ে, নেনে বি, কিনেছেন তাঁর কৌমার্য। স্তেপানভ-এর কৌমার্য বিসর্জন নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। পুরুষের ‘সতীত্ব’ না কি ‘সৎ-ত্ব’, না কি ‘সততা’, কী লিখব জানি না, একটু ব্যাকরণগত ভুল করে কিন্তু ব্যঞ্জনাগত ব্যাপারটা ঠিক রেখে লেখা যাক ‘সতীত্ব’ই নিয়ে তো কোনও দিন কারও মাথাব্যথা ছিল না। কারণ পুরুষের সতীত্বের অধিকার তো তার নিজের। অতএব তা থাকল না গেল, তা নিয়ে চরাচর মথিত নয়। আপনার টাকা আপনি খরচ করলেন না ব্যাঙ্কে জমালেন, তা নিয়ে কি আমার চিন্তা থাকবে, না আমি আপনাকে উপদেশ দেব? সত্যি বলতে কী, পুরুষ যখন তার কৌমার্য খোয়ায়, তা তার কাছে গর্বের ব্যাপার। একটা কীর্তি। ‘ছেলে’ থেকে সে ‘পুরুষ’ হল। কিন্তু মেয়েদের সতীত্বের অধিকার তো তার নিজের নয়। পুরুষের। আর তাই এখন বিশ্ব জুড়ে ক্যাটরিনার সতীত্ব বিসর্জন নিয়ে তুলকালাম চললেও স্তেপানভ-এর সতীত্ব নিয়ে কেউ দু’টি বাক্যও খরচ করছে না। বেচারা স্তেপানভ, না তাঁকে নিয়ে তোলপাড় হল, না তিনি গুচ্ছের পয়সা পেলেন। এখানেও অ্যাডভান্টেজ ক্যাটরিনা।
আর ঠিক যেমনটা হওয়ার কথা ছিল তেমনটাই হচ্ছে, ক্যাটরিনার প্রবল নিন্দে, সমালোচনা, তাঁর নামে দুয়ো। একটা মেয়ের সবচেয়ে নাজুক যা, সবচেয়ে যত্নে সবচেয়ে সুরক্ষিত রাখা দরকার যা, তা কিনা এ মেয়েটা পাবলিকের কাছে নিলামে তুলে দিল? এ তো বেশ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর যে কোনও মেয়েকে বেশ্যা বলতে পারার মধ্যে যে পৈশাচিক আনন্দ, এক জন কট্টর পুরুষই তার উৎকৃষ্ট বিবরণ দিতে পারবে। প্রেমে ব্যর্থ হলে এক জন পুরুষ এত দিনের কাঙ্ক্ষিতাকে যা বলে প্রথমেই অভিহিত করে, তা ‘বেশ্যা’। বেশ কিছু দিনের সম্পর্ক একটি মেয়ে ভেঙে দিলে, ছেলেটির এত দিনকার ‘সোনামানিক’ সম্বোধন ধাঁ করে বদলে যায় ‘রেন্ডি’তে।
যা নিয়ে পুরুষ জাতের (এবং ‘পুরুষ দৃষ্টি’ সম্পন্ন মেয়েদের) গায়ে আসল জ্বালাটা ধরেছে, তাতে আরও কিছু কেরোসিন ঢেলে দেওয়া যাক। তা হল, মহায়, হাইমেন নিয়ে এত হইহই কেন? কী আছে সতীচ্ছদে, যা এত গ্ল্যামারাস? যা এত ‘পবিত্র’? ওইটা ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলার মধ্যে, প্রথম ‘রক্তাক্ত’ করার মধ্যে, সাংঘাতিক পুরুষ হয়ে ওঠার অভিজ্ঞান নিহিত? আসলে, এই সমাজের মতে, নারীর প্রেম নতজানু হয়ে ভিক্ষা করা যায়, কিন্তু নারীর সতীত্ব বস্তুটি হরণযোগ্য। পুরুষ তা হরণ করবে। দাপিয়ে প্রবেশ করবে তার অন্তঃপুরে। দরজা ভেঙে ঢোকার মধ্যে একটা ডাকাতি আছে না? কলিং বেল বাজিয়ে ঢোকা তার কাছে নেহাত আলুভাতে মার্কা। আর সেই বীরত্ব থেকে, সেই ‘বাপ রে বাপ, রাক্ষস একটা!’ থেকে হঠাৎ ডিমোশন হলে হাতে রইল পেনসিল। ওই জন্যেই মেয়েদের পইপই করে বলা হয় (অধিকাংশ মেয়ে তা শোনে এবং মানেও), যদি বা ইতিউতি বয়ফ্রেন্ডদের সঙ্গে খুচরো কিছু যৌনতা করো, সতীত্ব তাতে যাবে না, যদিও তাও না করাই ভাল, তবু যুগ যা পড়েছে, যদি একটু-আধটু যৌনতা করোও, দেখো, সতীচ্ছদটি ইনট্যাক্ট রেখো, ওইটি স্বামীকে তোমার শ্রেষ্ঠ উপহার। ফুলশয্যায় তুমি এই মহামূল্য স্টেটমেন্ট (নীরবে) দেবে: দ্যাখো বাপু, ভালবাসি-টালবাসি বলাবলি অনেক হল, আসল যে জিনিস, আমার শরীরকে সর্বাধিক যৌন ভোগ করার যে অধিকার, তা তোমায় প্রথম দিলাম, এ এক দুর্দান্ত সমর্পণ। সবচেয়ে যা ব্যক্তিগত, শুচি, তা তুমি দলবে প্রভু আমার! মেয়েদের দাবিয়ে রাখার, বকলস পরিয়ে রাখার যে অধিকার, তার এক অতি জরুরি অঙ্গ: মেয়েদের শরীরের ওপর এবং বিশেষত সতীত্বের (মানে সতীচ্ছদের, মানে ‘আমিই তোমার জীবনে একমাত্র’ এই ধারণার) ওপর পুরুষের সম্পূর্ণ মালিকানা কায়েম। মেয়েদের বলা হয়, তোমার স্বামী যদি প্রথম রাত্রে দেখেন তুমি ভার্জিন নয়, তা হলে তোমার কোনও দামই থাকবে না তাঁর কাছে। সেই জন্যেই শয্যাতুলুনির রিচুয়াল, রক্তদর্শনের অমন মহড়া। কুমারীর এত দরই তো সেই জন্যে। যে, মেয়েটি এখনও ব্যবহৃত নয়। মোড়ক খুলে প্রোডাক্ট-টি প্রথম আমি বের করলাম। এখন, কোনও মেয়ে যদি হাসতে হাসতে ‘মা, ইচ্ছে হয়েছে তাই অমলের সঙ্গে শুয়ে এলাম, সিরিয়াস কিছু নয়, কিন্তু সতীচ্ছদটা আজই ছিঁড়ে ফেলা গেল’ বলে কলেজ থেকে চলে আসে, তা হলে পুংতন্ত্রের হাতে শিকলটা রইল কোথায়? নারীর যৌন স্বাধীনতার ওপর মূল কাঁটাতারটাই তো তা হলে গায়েব হয়ে গেল। যে অস্ত্র দিয়ে মেয়েদের বেঁধে রাখা, অর্থাৎ কিনা সতীত্বের থ্রেট, মানে সতীত্ব চলে যাওয়ার থ্রেট, সেটাই বুমেরাং হয়ে গেলে পুরুষের তো একগাল মাছি। নিয়ম: মেয়েরা যৌনতা ভালবেসে যৌনতা করবে না। তারা পুরুষকে যৌনতা করতে দেবে। পুরুষ কর্ষণ করবে, সে প্যাসিভ কর্ষিতা হবে। পুরুষ বলে দেবে ঠিক কী ভাবে, কী কী অ্যাসেট জমিয়ে রেখে তাকে পুরুষের কাছে নিজেকে নিবেদন করতে হবে, সে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। ‘বৈধ’ সম্পর্কে প্রবেশ করার আগে সে সতীচ্ছদ অটুট রাখবে। সত্যি, একটা সাইকেলে ভাল করে চড়লে যা ছিঁড়ে যায়, তার জন্যে কী পরিমাণ আদিখ্যেতা!
আর এখানেই জিতে গিয়েছেন ক্যাটরিনা। তিনি সতীত্ব ব্যাপারটাকে পাত্তাই দেননি। এতটাই পাত্তা দেননি যে এই নিলাম এবং ফিল্মের ডিল তাঁর কাছে বেশ একটা বড় টাকা রোজগার করার পন্থা বই অন্য কিছু ছিল না। তাঁর অ্যাটিটিউড-টা এই গোছের: যদি পুরুষদের কাছে এই সামান্য জিনিসটা এমন বিশাল একটা কাণ্ড হয়, তা হলে সেই সুযোগটা ব্যবহার করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা রোজগার করে নেব না কেন? যদি আপনি একটা দ্বীপে বেড়াতে গিয়ে দেখেন একটা জনজাতির কাছে সেন্টমাখা রুমালের এত চাহিদা যে তার জন্যে তারা তাল তাল সোনা দিতে রাজি, তখন আপনার কিছুটা শখের কিন্তু বিরাট আদরের নয় এমন চারটি রুমাল তাদের দেবেন না কেন, যেখানে বিনিময়ে আপনি পাচ্ছেন প্রচুর সোনাদানা? নারীর কৌমার্যকে নারী-দমনের স্বার্থেই বিশাল দর দিয়েছে পুরুষশাসিত সমাজ। ক্যাটরিনা সেটা নিপুণ ভাবে ব্যবহার করে, সেই সমাজের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করে জীবন বদলে নিয়েছেন। ক্যাটরিনা নিজের শরীরকে শরীর মনে করেন, খামখা মন্দির মনে করেন না। এই মন্দিরের আইডিয়াটা পুরুষরা চাপিয়েছে, যাতে রক্ষণাবেক্ষণটা একটু বেশি কড়া রকমে করা হয়। যাতে মেয়েরাই এর পাহারায় এত ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ভেতরে আনন্দের বিগ্রহ আদৌ প্রতিষ্ঠিত কি না, তা নিয়ে আর চিন্তাই না অবশিষ্ট থাকে।
সতীচ্ছদকে নেহাতই শরীরের একটা অঙ্গ ভাবতে পারার জন্য ক্যাটরিনাকে হাজার স্যালুট। তিনি তাঁর সতীচ্ছদে বায়বীয় কোনও দেবীত্ব আরোপ করেননি। হাত, পা, মাথা, কান, আঙুলের মতোই গুরুত্ব বা হেলায় দেখেছেন সতীচ্ছদকে। ক্যাটরিনা বলেছেন যে তাঁর কাছে প্রেম খুব গুরুত্বপূর্ণ, তিনি ভারী রোম্যান্টিক, কিন্তু তিনি মনে করেন না একটা ব্যবসা-সম্পর্কে কৌমার্য বিসর্জন দিলে তাঁর জীবনে প্রেম বা যৌনতার দাম কিছু কমে যাবে। প্রেমের বিপক্ষে তো নয়ই, এ বরং প্রেমের সপক্ষে চমৎকার বিবৃতি। তাঁর কাছে তার হৃদয়=সতীচ্ছদ নয়। দু’টো আলাদা। এক জন পুরুষের কাছে নিজেকে সম্পূর্ণ করে, উজাড় করে দেওয়া, আর তাকে নিজের সতীচ্ছদ ছিন্ন করতে দেওয়া এক নয়। এ দু’টো একসঙ্গে ঘটতেই পারে, আবার না-ই পারে। এক জন মেয়ে তার ‘প্রকৃত’ প্রেমিকের জন্য নিজেকে কুমারী রাখতেই পারে, না-ই পারে। যার হৃদয়, যার সতীচ্ছদ, তার সিদ্ধান্ত। পুরুষশাসিত সমাজ অবশ্য নারী কাকে প্রেম করল তা নিয়ে ভাবিতই নয়। সে কাকে শরীর দিল, সেই নিয়েই তার সহস্র মাথাব্যথা। এই হল মহান সমাজের ‘রোম্যান্টিকতা’। ক্যাটরিনা তাঁর হাবভাবে স্পষ্ট যা বলছেন, তা হল, সতীত্বের গোটা ধারণাটা, শরীরের বা সতীচ্ছদের এক্সট্রা শুচিতার ধারণাটা সমাজের চাপিয়ে দেওয়া। ‘সতীচ্ছদ’-এই রাখা আছে ‘ইজ্জত’-এর ভোমরা, এই ধারণাটাকে তিনি কেয়ার করেন না। তিনি হয়তো মনে করেন, এক জন নারীর সম্মান তাঁর যোনিতে নেই, আছে তাঁর হৃদয়ে, মস্তিষ্কে, শিক্ষায়, ব্যবহারে, অশিক্ষিতদের চিৎকার উপেক্ষা করার আভিজাত্যে।
আরও অভিযোগ আছে ক্যাটরিনা সম্পর্কে। তিনি নিলামের জন্য নিজের উত্তেজক সব ছবি আপলোড করেছেন ইন্টারনেটে। বেশ করেছেন। যখন পুরনো আসবাব নিলাম করা হয়, কিংবা গাড়ির শো-রুমে নতুন গাড়ি কিনতে যাওয়া হয়, তখন কোন অ্যাঙ্গলে সবচেয়ে ভাল দেখায় আসবাব, আর গাড়ির কোন জিনিসটা অন্য সবার চেয়ে ভাল সেটাই তো হাইলাইট করেন বিক্রেতা। তখন তো কোনও ঝঞ্ঝাট হয় না। তখন ভাবা হয়, কী করে সবচেয়ে বেশি পয়সাটা আসবে। ক্যাটরিনাও তা-ই করেছেন। ওঁর উত্তেজক ছবি পোস্ট করে হাইমেনের দাম তুলেছেন। পিয়োর অ্যান্ড সিম্পল বিজনেস ডিল। এতে পুরুষতন্ত্রের গায়ে টোপা টোপা ফোসকা পড়লে প্রবলেমটা তার, ক্যাটরিনার নয়।
এ বার আসল প্রশ্ন। টাকা। অনেকেই বলছেন, যদি প্রেম করে কৌমার্য বিসর্জন দিত, কিচ্ছু বলতাম না। কিন্তু টাকার বিনিময়ে তা করলে কেন বেশ্যাবৃত্তি বলব না? এ বার একটু ভেবে দেখুন, ‘বেশ্যা’ তকমাটা এত কুৎসিত কেন? কারণ, বেশ্যাবৃত্তি বলতে আমরা সাধারণ ভাবে যা বুঝি, তার মধ্যে একটি মেয়ের ইচ্ছা ব্যতিরেকে, এমনকী ইচ্ছের বিরুদ্ধে, তার শরীরকে ভোগ করছে কেউ, তার কাছ থেকে গায়ের জোরে যৌনতাটাকে কিনছে এই ব্যাপারটা রয়েছে। কিন্তু কেউ যদি স্বেচ্ছায় নিজের শরীর দেয় ও তার বিনিময়ে টাকা নেয়? যদি এটা, খোলা বাজারে যে শর্তে জিনিস বিকোয় তোমার চাহিদা আছে ‘ক’ বস্তুর, আমার কাছে জোগান আছে ‘ক’ বস্তুর, তুমি টাকা দাও, ‘ক’ নাও এই ভিত্তিতেই লেনদেন করা হয়? কোনও মেয়ে যদি বলে, অচেনা লোক যদি আমার শরীর ভোগ করে আমার কোনও সমস্যা নেই, আমি অমুক পরিমাণ টাকা দিলে তা করতেই পারি, উপরি কিছু দেহসুখ মেলারও সম্ভাবনা আছে, তা হলে তার সেই ‘স্বেচ্ছা বেশ্যাবৃত্তি’তে ঝামেলা কোথায়? যত ক্ষণ না কোনও মেয়েকে কেউ ‘বাধ্য’ করছে তার শরীরটা অপছন্দের মানুষকে দিতে, তত ক্ষণ সেই ব্যবসার মধ্যে তো কোনও দৈন্য নেই। তার ইচ্ছে হচ্ছে, সে করছে। তার শরীরের অধিকার তার। কী ভাবে ব্যবহার করবে, সে সিদ্ধান্ত তার। সম্বন্ধ করে বিয়েতে কি সম্পূর্ণ অচেনা এক জনকে সতীচ্ছদ ছিন্ন করার অধিকার দিয়ে একটি মেয়ে ফুলশয্যার বিছানায় ঢোকে না? সেখানে একটা দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক চুক্তি রয়েছে, ক্যাটরিনার ক্ষেত্রে একটা মাত্র রাতের চুক্তি। আরও ভাল। আরও নিরাপদ। সকাল হল, আমি স্বাধীন। বরং ওই বিয়েতে, যদি স্বামীটি রোজ ধরে পেটায়, তবু তার সঙ্গে জন্মজন্মান্তরের বন্ধনে বাঁধা থাকতে হবে। আরও বেশি শরীর-বাধ্যতা।
ক্যাটরিনার এই ঘটনাটা যা তীব্র ভাবে ঘোষণা করছে, তা হল নিজের শরীরের ওপর নিজের চূড়ান্ত অধিকার, সে সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন মনোভাব আর শতাব্দী-প্রাচীন কিন্তু ভয়ঙ্কর রুল-বুক’কে ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া। নিজের ইচ্ছেকে দমিয়ে রেখে সমাজকে খুশি করার জন্য এবং সমাজ-মাফিক হয়ে ওঠার জন্য যে ব্যবহার-বিধি তাকে ঠাটিয়ে থাপ্পড়। আর সব নিয়ম ভেঙে এই কথাটা আবারও মনে করিয়ে দেওয়া যে, যাকে তোমরা পবিত্র বলো, আসলে তা দাবিয়ে রাখার একটা পন্থা মাত্র, যে অস্ত্র না থাকলে পুরুষতন্ত্রের আসন টলোমলো। |
|
|
|
|
|