কোটি টাকার লটারি পেয়ে আব্দারে কাবু গাড়ির মিস্ত্রি
‘পরশপাথর’ গল্পের পরেশচন্দ্র দত্তকে মনে আছে? লোহাকে সোনা করার ম্যাজিকে আচমকা ধনী হয়ে মাথা ঘুরে গিয়েছিল যাঁর?
বর্ধমানের গাড়ির মিস্ত্রি শেখ মাস্তানের দশা অনেকটা তেমনই। তিনি অবশ্য পরশমণি পাননি। পেয়েছেন সামান্য একটি নম্বর এএ ৩১৫৫৮৭! মাত্র কুড়ি টাকায় কেনা লটারির টিকিটে লেখা সেই সংখ্যাই তাঁকে এক লহমায় ‘রাজা’ করে দিয়েছে। পুরস্কারের অঙ্ক মোটে ১ কোটি ১ লক্ষ টাকা!
তবে পরেশ দত্তের মতো টাকার গরমে মাথা ঘোরার সুযোগই এখনও পাননি বছর চুয়ান্নর শেখ মাস্তান। বরং খবর রটে যাওয়ায় কৌতূহলী আর সাহায্যপ্রার্থীর দল যে ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তার ঠেলা সামলাতেই তিনি আপাতত নাকাল। বর্ধমান শহরের উপকন্ঠে কমলসায়রে পশ্চিমপাড়ায় তাঁদের আধ-কাঁচা বাড়িতে ভেঙে পড়ছে ভিড়। কোথায় পালাবেন, কোথায় লুকাবেন, মাস্তান তা বুঝেই উঠতে পারছেন না। যে কারণে বাড়িতে যেতেই পথ আটকান তাঁর বড় ছেলে শেখ হান্নান। সনির্বন্ধ অনুরোধ, “আব্বাকে বেশি কথা বলাবেন না। ওঁর শরীরটা খারাপ।”
কেশবগঞ্জের গ্যারাজে দিনভর ত্রিপলের নীচে দাঁড়িয়ে-বসে-শুয়ে গাড়ি মেরামত করা ছাড়া মাস্তানকে আর দেখা যেত মাঝে-মধ্যে শখ করে লটারির টিকিট কাটতে। তেমনই কেটেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য লটারির ‘পুজো বাম্পার লাকি ড্র’। খেলার ফল বেরনোর কথা ছিল গত ৩১ অক্টোবর। কিন্তু মাস্তান সে দিন কোনও খবর পাননি। শুক্রবার সকালে স্থানীয় লটারি বিক্রেতা বাড়িতে খবর দিয়ে যান, ‘ফার্স্ট প্রাইজ লেগেছে!’ হান্নানের কথায়, “ খবরটা আমরা কেউই বিশ্বাস করিনি। আব্বা আগে বেশ কয়েকবার লটারির টিকিট কাটলেও কোনও দিন কিচ্ছু পাননি। খবরটা পেয়েই উনি আমাকে টিকিটটা দিয়ে বললেন, লোকটা ফের টিকিট গছাতে ডাহা মিথ্যে বলছে! নম্বরটা মিলিয়ে দেখে ওকে তেড়ে গালি দিয়ে আয় তো!”
শেখ মাস্তান। —নিজস্ব চিত্র।
বাকিটা গল্প। এর পরে হাতের কাছে যাকেই পেয়েছেন তাকেই জড়িয়ে ধরে মাস্তান বলেছেন, “খোদা মেহেরবান!” বারবার স্থানীয় মসজিদে গিয়ে আল্লাহ্তালার দোয়া চেয়েছেন। কিন্তু পরে সাংবাদিকদের ডেকেও মাথা গুলিয়ে যায় তাঁর। মাঝপথে উঠে পালান। এ দিন বাড়িতে বসে তাঁর স্বীকারোক্তি, “আমার মাথাটাই বিগড়ে গিয়েছে। কিছু লোক বলল, এক কোটির বেশি টাকা পাওয়ার গল্পটা খবরে কাগজে ছাপাও। তাই বলতে গেলাম। কিন্তু হঠাৎ মনে হল, আরে! যদি আমি কিছু ভুলভাল কিছু বলি আর আমার টিকিটটা যদি কেউ কেড়ে নেয়? তাই পালালাম।” কিন্তু পালিয়ে কি আর রেহাই আছে? ইতিমধ্যে গোটা শহর জেনে গিয়েছে তাঁর ‘নসিব’-এর কথা। মুহূর্মুহূ উড়ে আসছে উপদেশ, পরামর্শ, প্রার্থনা। কেউ বলছেন, ‘হজে যাও।’ কেউ বলছেন, ‘পাড়ার মসজিদ সংস্কার করো।’ স্থানীয় মাদ্রাসার দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সাহায্যের আর্জিও এসে গিয়েছে। সকলেই চাইছে, ‘আসমান’ থেকে পড়া টাকায় কিছু দানধ্যান করুক মাস্তান। আর প্রৌঢ় মেকানিক ভাঙা রেকর্ডের মতো মাথা নেড়ে বলে চলেছেন, “আচ্ছা, তাই হবে!”
বাড়ির লোকেদেরও সাধ কম নেই। মাস্তানের নাতি, একাদশ শ্রেণির ছাত্র শেখ রুবেলের অনুযোগ, এত দিন তার পড়াশোনার দিকে কেউ নজর দেয়নি। এ বার কয়েক জন প্রাইভেট টিউটর দিতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পরে পড়াতে হবে কলকাতার নামী কলেজে। মাস্তানের ছোট ছেলে শেখ রবিয়েলের স্বপ্ন, লটারির টাকা থেকে তাঁকে ব্যবসার টাকা দেবেন আব্বা। পুরনো ভিটেতে মস্ত বাড়ি উঠবে। প্রবল বৃষ্টিতেও পুরনো বাতের ব্যথা উপেক্ষা করে হাজির মাস্তানের কাকিমা সাজিলা বিবি। তাঁর আব্দার, “কত দিনের আশা ছিল, এক বার তীর্থে যাব। এ বার তো ভাইপো বড়লোক! এখন আর মাজার বা পিরের দরগায় চাদর চড়ানোর টাকার অভাব হবে না।”
দেখে-শুনে হতভম্ব মাস্তান আর তাঁর স্ত্রী ফারসিলা বিবি। কেননা ব্যাঙ্কে ঘুরে তাঁরা ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছেন, আয়কর কাটার পরে বড় জোর লাখ ষাটেক টাকা হাতে আসবে। তবু প্রত্যাশার এমনই চাপ যে দু’হাতে মাথা চেপে ধরে মাস্তান এখন বলছেন, “এ কী পরীক্ষায় ফেললেন আল্লাহ! যদি দিলেন তো এত কম দিলেন কেন! কত জনের আব্দার মেটাতে পারব!”
প্রতিবেশী শেখ মোক্তার নিচু গলায় বলেন, “বেশ তো ছিল ওরা। দুই ছেলেকে নিয়ে খাটত। নিশ্চিন্তে খেত-ঘুমোত। সেই শান্তি কি ও আর ফিরে পাবে?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.