|
|
|
|
সর্বজনীন কোজাগরীই রসুলপুরে শারদোৎসব |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বেলদা |
দুর্গাপুজোর থেকে লক্ষ্মীপুজোয় আনন্দ বেশি হয় রসুলপুরের মানুষের। এমনই দাবি করেন এলাকার বাসিন্দারা। কারণ এখানে লক্ষ্মীপুজো সর্বজনীন। জানুয়ারি মাসে গ্রামে মেলা বসে। সেই মেলায় খাবারের দোকান খুলে বসেন পুজো উদ্যোক্তারা। সেই দোকান থেকে যা রোজগার হয়, তা পুজোর জন্যই তোলা থাকে। পুজোর আয়োজনে সেই অর্থ খরচ হয়। এ ভাবেই লক্ষ্মী পুজো হয়ে আসছে বেলদার রসুলপুর গ্রামে।
বেলদা-এগরার মাঝে অর্জুনি। অর্জুনি থেকে কিছু দূরেই রসুলপুর গ্রাম। প্রায় ৩০০ পরিবারের বাস। গ্রামবাসীরা জানান, কয়েকজন স্কুল ছাত্রের উদ্যোগে পুজোর শুরুটা হয়েছিল একটু অন্য ভাবেই। পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য সুদীপ প্রামাণিক, সুব্রত ঘোড়ই, অচিন্ত্য প্রামাণিকেরা বলেন, “আমরা তখন স্কুলে পড়ি। একদিন কয়েক জন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম, গ্রামে কোনও সর্বজনীন পুজো হয় না। তাই গ্রামে লক্ষ্মী পুজো করব। কী ভাবে সব আয়োজন হবে, তখনও ভাবিনি।” সুদীপের কথায়, “শুরুতে একেবারে সাধারণ ভাবে পুজো হয়েছিল। এত জৌলুস ছিল না। তবে আনন্দে এতটুকুও খামতি ছিল না। প্রথম ক’বছর বাঁশের কাঠামোর উপর খবরের কাগজ সাঁটিয়েই মণ্ডপ হয়েছিল।” সেই পুজোই এ বছর ২৭ বছরে পড়ল। কাল্পনিক মন্দিরের আদলে সাদা কাপড়ে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। মন্ডপে সাজানো হয়েছে রয়েছে থার্মোকলের নানা সুদৃশ্য কারুকাজ। |
|
ছবি: কৌশিক মিশ্র। |
পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য পীযূষকান্তি প্রামাণিক বলেন, “আমাদের গ্রামে প্রতি বছরই ২৩ জানুয়ারি থেকে পাঁচ দিন ধরে মেলা বসে। সেই মেলায় আমরা খাবারের দোকান করি। দোকান থেকে যা রোজগার হয়, তা পুজোর জন্যই তোলা থাকে। আমরা কোনও রসিদ বই করি না। চাঁদা তোলা হয় না।” স্থানীয় ‘হেল্প স্টার’ ক্লাবের উদ্যোগে এখানে লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন হয়। গত বছরও পুজো উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। কলকাতার শিল্পীদের পাশাপাশি গ্রামের ছেলেমেয়েরাও সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। এ বার অবশ্য সেই অনুষ্ঠান হচ্ছে না। কারণ, গত ডিসেম্বরে মারা গিয়েছেন পুজোর অন্যতম আয়োজক সুবলচন্দ্র প্রামাণিক। পুজো কমিটির এক সদস্যের কথায়, “সুবলদা আমাদের অভিভাবকের মতো ছিলেন। তিনি এ বছর না থাকায় সকলেরই মন খারাপ। তাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে না। তবে অনান্য আয়োজন থাকছে।”
দিন বদলেছে। বদলেছে পুজোর আয়োজনও। আগে চার দিন ধরে পুজো চলত। এ বার তিন দিন ধরে পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। এখন কাল্পনিক মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি হয়। প্রতি বছরের মতো এ বছরও এগরা থেকে প্রতিমা নিয়ে আসা হয়েছে। পুজো কমিটির সম্পাদক জয়দীপ প্রামাণিক থেকে সভাপতি দেবকুমার মান্না- সকলেরই বক্তব্য, “আমাদের সাধ্য বেশি নয়। তার মধ্যেই যা করা সম্ভব করি। এলাকার সকলেই সহযোগিতা করেন। গ্রাম জুড়ে উৎসবের মেজাজ থাকে। বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়দের আনাগোনা চলতে থাকে। হইহুল্লোড় হয়। এটাই ভাল লাগে। এইটুকুর জন্যই তো সারা বছর অপেক্ষা।” একটা পুজো। আর তাকে ঘিরে হুইহুল্লোড়। বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়দের আনাগোনা। হুইহুল্লোড়। আক্ষরিকই এই পুজো সর্বজনীন। |
|
|
|
|
|