রাজনীতিকে ব্রাত্য রেখে সুনীল-তর্পণের উদ্যোগ
নন্দবাজারের পাতায় তাঁর কলমে ঘোষণা ছিল, আর কখনও কোনও মিছিলে যাবেন না। পথে নামার প্রয়োজন তাঁর নেই। তিনি লেখক। বিবেকের দংশন অসহ্য হলে লিখেই প্রতিবাদ জানাবেন। প্রয়োজন হলে সমর্থনও করবেন। কিন্তু রাস্তার রাজনীতিতে নৈব নৈব চ!
রাজনীতির হানাদারি বাঁচিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্য তাঁর সেই বহুমুখী সাংস্কৃতিক পরিসরই বরাদ্দ করার প্রয়াস শুরু হল এই শহরে। ২৪ ঘণ্টা আগেই তাঁর অন্ত্যেষ্টিতে যে পরিসর ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল! শিল্প-সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে সম্পর্কহীন বহু চরিত্রকে সেই শেষ যাত্রায় দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে অন্তিম কৃত্যের নিয়ন্ত্রণ হাতে তুলে নিয়েছিল রাজনীতি। সেই স্মৃতি পিছনে ফেলে তাঁর নিজের ভূখণ্ডই সুনীলকে ফিরিয়ে দিতে চাইছে শহরের সংস্কৃতি বলয়ের একাংশ। পরিকল্পনা হচ্ছে এক সুনীল-তর্পণের, যেখানে বিশিষ্টজনেদের মধ্যেকার আমরা-ওরা বিভাজনের ঊর্ধ্বে ওঠার চেষ্টা হবে। কিন্তু আমন্ত্রণ-বার্তা পৌঁছবে না রাজনীতিকদের কাছে। ব্রাত্য থাকবেন এমনকী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও! সংস্কৃতি চর্চার পরিমণ্ডলেই যাঁর সঙ্গে সুনীলের পাঁচ দশকের পরিচয়!
রাজনীতিকদের বাইরে রেখে সুনীল-স্মরণের এই উদ্যোগ মূলত যাঁদের, তাঁরা বামপন্থী বিশিষ্টজন বলেই পরিচিত। যার পুরোভাগে আছেন চন্দন সেন, ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়, অশোক মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। কিন্তু নীললোহিতের গুণচর্চায় তাঁরা পরিবর্তনপন্থী বা আরও স্পষ্ট করে বললে মমতাপন্থী বিশিষ্টদেরও ডাকবেন। অর্থাৎ সব পক্ষকেই ডাকা হবে এই অনুষ্ঠানে। চিত্রকর, লেখক, নাট্যকার, কবি, শিল্পীদের আহ্বান করা হবে। রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত বা বিভাস চক্রবর্তীর মতো নাট্য-ব্যক্তিত্বকেও আমন্ত্রণ জানাবেন উদ্যোক্তারা। যাঁরা বেশ প্রবীণ, তাঁদের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হবে। আর সকলের জন্য খোলা আহ্বান। এই উদ্যোগের সামনে থাকবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও মৃণাল সেন। পরিবর্তনপন্থী বিশিষ্টজনেদের সমষ্টিগত প্রয়াসের বাইরে ‘সংস্কৃতি সমন্বয়’ নামে মঞ্চ গড়ে যাঁরা ইদানীং জড়ো হয়েছেন, তাঁরাই এই অরাজনৈতিক সুনীল-স্মরণের নেপথ্যে। তাঁদের তরফে এক নাট্যকার বলছেন, “সৌমিত্রদা আর মৃণালদার সঙ্গে কথা বলে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে একটা দিন ঠিক করার চেষ্টা করছি। শহরের কোনও প্রেক্ষাগৃহ পেয়ে যাব নিশ্চয়ই। সুনীলদাকে নিয়ে অন্য রকমের একটা অনুষ্ঠান হবে।”
নাটকের সঙ্গে সুনীল কেমন সম্পৃক্ত ছিলেন, ছবি সম্পর্কে তাঁর কেমন মতামত ছিল এ সবই উঠে আসার কথা নভেম্বর-শেষের ওই অনুষ্ঠানে। নাট্যকারের কথায়, “সুনীলদার যে বহুমুখী প্রতিভা, তাকে স্মরণ করার জন্যই এই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা। আমরা কখনওই আমরা-ওরা চাইনি। এখানেও চাই না। সকলকেই ডাকব।” বুদ্ধবাবুকে ডাকবেন? উদ্যোক্তা-নাট্যকারের জবাব, “ওঁর সঙ্গে সুনীলদার সম্পর্ক, ওঁর নিজের সংস্কৃতি এবং লেখালেখির জগতের কথা মাথায় রেখেও বলছি, ডাকব না! কারণ, ওঁর প্রথম পরিচয়টা রাজনীতিকেরই। আমাদের বিশ্বাস, বুদ্ধবাবুও এতে কিছু মনে করবেন না। উনি বুঝবেন, কেন ডাকা হল না!” সুনীল-অনুরাগী এক তরুণ সাহিত্যিকের কথায়, “সুনীল তো কারও সম্পত্তি নন! তাঁকে স্মরণ করার অধিকারও সকলের। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে সংস্কৃতি জগতে কোনও অনুষ্ঠান হলেই তার পাল্টা করার যে ঝোঁক দেখা যাচ্ছে (এক নাট্যকর্মীর হেনস্থার প্রতিবাদ-সভা ঘিরে যেমন হল), আশা করব, এ বার অন্তত তেমন কিছু হবে না!”
সংস্কৃতি জগৎ না হয় তার হারানো নক্ষত্রকে নিজের মতো স্মরণ করবে। সরকার কী করবে? শেষ যাত্রার দখল নেওয়ার পরে এ বার কি রাজ্য সরকারি উদ্যোগে সুনীল-স্মরণও দেখা যাবে? রাজ্যের এক বর্ষীয়ান মন্ত্রীর বক্তব্য, “সরকারি উদ্যোগে সৎকার পর্ব হয়েছে। স্মরণসভা করার কোনও পরিকল্পনা এখনও পর্যন্ত নেই।” রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরেও শুক্রবার রাত পর্যন্ত এমন কোনও তৎপরতা নেই। সরকারি মহল বরং নভেম্বরে অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান-সহ মেগাস্টার-খচিত চলচ্চিত্র উৎসব নিয়ে ব্যস্ত। ছুটি কাটিয়ে মহাকরণ খুললে আবার সুনীল-আবেগ ফিরবে কি না, তা অবশ্য জানেন না অনেকেই!
সুনীল-অনুরাগীরা অবশ্য রাজনীতির স্পর্শ বাঁচিয়েই ঢের নিশ্চিন্ত এবং নিরাপদ! তাঁরা জানেন, প্রয়াত কবি তাঁদেরই লোক। রাজনীতির ছাতা তাঁদের নিষ্প্রয়োজন!
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.