জনতার ক্ষোভ সামলাতে লাঠি, শূন্যে গুলি |
চা বাগানে বাইসনের হানায় দু’জনের মৃত্যু |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বানারহাট |
চা বাগানের বসতি এলাকায় ঢুকে পড়া একটি বাইসনের গুঁতোয় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে ডুয়ার্সের বানারহাট থানা এলাকার গেন্দ্রাপাড়া চা বাগানে। ওই ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন আরও ২ জন। তাঁদের জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাইসনের আক্রমণের ঘটনায় বন দফতরের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলে এক দল উত্তেজিত বাসিন্দা বনকর্মী এবং পুলিশের উপর চড়াও হন। লাঠি ও পাথরের আঘাতে চার বনকর্মী সহ এক পুলিশ কর্মী জখম হন। উত্তেজিত জনতা বন দফতরের দুটি গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বানারহাট এবং ধূপগুড়ির পুলিশ কর্মীরা লাঠি চাসিয়ে শূন্যে গুলি ছোড়ে বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে কাবু করলেও বাগানের নালায় পড়ে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে পূর্ণ বয়স্ক ওই জন্তুটি মারা যায়। জলপাইগুড়ি বন্য প্রাণী শাখার ডি এফ ও-র কাছে পুরো ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। তিনি বলেন, “রিপোর্ট হাতে পেলে খতিয়ে দেখা হবে। বন দফতরের তরফে গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “পুলিশ ও বন কর্মীদের উপর আক্রমণ ও গাড়ি ভাঙচুর করার ঘটনা নিয়ে একটি মামলা দায়ের করা হবে।” পুলিশ জানিয়েছে, বাইসনের গুঁতোয় মৃত বড়া লাইনের গৃহবধূর নাম বাটুলি বানিয়া (৫২)। অন্য জন হলেন সোহন ইন্দোয়ার (৫০)। |
বাটুলি দেবীর পেট ফুটো হয়ে যায়। বানারহাট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। জলপাইগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে সোহনবাবু মারা যান। বাইসনের শিং দুই জনের বুক ফুড়ে যায়। জখম অপর দুজনকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বাগানের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, সকাল সাড়ে ৭ টা নাগাদ বাগান সংলগ্ন মরাঘাট জঙ্গল থেকে দুটি বাইসন বাগানে ঢুকে পড়ে। একটি বাইসন বনে ফিরে গেলেও অপর বাইসনটি বাগানের শ্রমিক বস্তিতে ঢুকে ঘর বাড়ি তছনছ করতে শুরু করে। পুজো উপলক্ষ্যে এদিন বাগানের কাজ কর্ম বন্ধ থাকায় অধিকাংশ লোকজন বাগানের বস্তিতে ছিলেন। ক্ষিপ্ত বাইসনটি প্রথমে শান্তি ওঁরাও তার কিছুক্ষণ বাদে বুধুয়া ভুঁইয়া-কে জখম করে। লোকজন বন দফতর ও পুলিশকে খবর দিলে বিন্নাগুড়ি এলিফ্যান্ট স্কোয়াড ও বানারহাট থানার পুলিশ কর্মীরা সাড়ে ৮ টা নাগাদ ঘটনাস্থলে যান। বিন্নাগুড়িতে ঘুমপাড়ানি গুলি চালাবার মত প্রশিক্ষিত কেউ না থাকায় ৪০ কিমি দূরে মালবাজার থেকে প্রশিক্ষিত বন কর্মীকে ডেকে পাঠানো হয়। দু’ঘণ্টা কেটে যায়। তখনও বাইসনটি বস্তিতে তাণ্ডব চালাচ্ছিল। বনকর্মী, পুলিশকর্মীদের তখন নিরুপায় অবস্থা। বনকর্মীদের সামনে দুজনকে জখম করে ওই বাইসনটি। বাসিন্দারা বাইসন মেরে ফেলার দাবিতে সরব হন। বনকর্মীরা ঘুমপাড়ানি গুলি চালানোর জন্য প্রশিক্ষিত কর্মীর আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়ে দেন। একদল বাসিন্দা বন দফতরের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। বারহাটের রেঞ্জ অফিসার অজয় ঘোষের মাথায় মোটা লাঠি দিয়ে আঘাত করা বলে তিনি লুটিয়ে পড়েন। কয়েক জন বন কর্মীও প্রহৃত হন। বন দফতরের সাম্মানিক ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন সীমা চৌধুরীকে ধাক্কা দিয়ে হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাবার আশঙ্কায় ধূপগুড়ি ও বানারহাটের পুলিশ বাহিনী পুলিশ মৃদু লাঠি চার্জ করে। শূন্যে ১ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। সিপিএম বিধায়ক মমতা রায়ের অভিযোগ, “বিন্নাগুড়িতে ঘুমপাড়ানি গুলি করার জন্য কর্মী থাকলে এ ঘটনা ঘটত না। মৃতদের ক্ষতি পূরণ ও জখমদের চিকিৎসার জন্য বন দফতরের দাবি করেছি।” ডিএফও সুমিতা ঘটক বলেন, “জখমদের চিকিৎসার খরচ বহন করছি। মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।” |