শো-কজ আগেই করা হয়েছিল। শনিবার সাসপেন্ড করা হল কিংফিশার এয়ারলাইন্সের লাইসেন্স। বিমান সংস্থাকে চিঠি দিয়ে এ কথা জানিয়ে দিয়েছে বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ)।
গত ১ অক্টোবর থেকে কিংফিশারের উড়ান বন্ধ রয়েছে। ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত লক-আউট ঘোষণা করেছে সংস্থা। এই পরিস্থিতিতে ৫ অক্টোবর শো-কজ করা হয়েছিল কিংফিশারকে। জানতে চাওয়া হয়েছিল, পুনরুজ্জীবনের জন্য কী ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। যে কর্মীদের বিক্ষোভের কারণে উড়ান বন্ধ করে দিতে হয়েছে, তাঁদেরই বা কী করে কাজে ফেরানো হবে?
শনিবার দিল্লি থেকে ফোনে ডিজিসিএ কর্তা অরুণ মিশ্র বলেন, “শো-কজের জবাব দেওয়ার জন্য কিংফিশারকে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। শুক্রবার যে জবাব তারা দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তারা পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা জমা দেওয়ার জন্য আরও সময় চেয়েছে। কিন্তু, কত দিন সময় চাই তা বলা হয়নি। এ ভাবে তো অনির্দিষ্ট কাল সরকার অপেক্ষা করতে পারে না।” ফলে শনিবার সরকারি ভাবে জানানো হল, পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত উড়ান চালু করতে পারবে না কিংফিশার।
তা হলে কি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল বিজয় মাল্যের বিমান সংস্থা?
এখনই সেই সময় এসেছে বলে মনে করছেন না বিমান পরিবহণ বিশেষজ্ঞরা। এমনকী অরুণবাবুও এ দিন বলেন, “৩১ ডিসেম্বর কিংফিশারের লাইসেন্স নবীকরণ করার কথা। তার আগে তারা যদি সন্তোষজনক জবাব দিতে পারে, গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা জমা দিতে পারে, তা হলে সাসপেনশনের নির্দেশ তুলেও নেওয়া হতে পারে।” তবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ডিজিসিএ-কে সন্তুষ্ট করতে যদি কিংফিশার ব্যর্থ হয়, তা হলে তাদের লাইসেন্স পাকাপাকি ভাবে বাতিল করার কথা বিবেচনা করবে কেন্দ্র। |
এই পরিস্থিতিতে কিংফিশার কী ভাবছে?
সংস্থার এক কর্তার কথায়, “সাসপেনশনের নির্দেশ বিজয় মাল্যের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন বিদেশে। তবে ফোনে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন আমাদের সঙ্গে। নতুন পরিকল্পনা করা যাবে বলে তিনি এখনও আশাবাদী।” কিংফিশারের ঘাড়ে চেপে থাকা ৭৫০০ কোটি টাকা ঋণের বোঝা লাঘব করতে পানীয় প্রস্তুতকারক সংস্থায় নিজের ব্যক্তিগত শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার কথা বিবেচনা করছেন মাল্য। ফলে, সাসপেনশনের মাধ্যমেই যে কিংফিশারের কফিনে শেষ পেরেক পোঁতা হল, তা মনে করছেন না অনেকেই।
লাইসেন্স সাসপেন্ড করার অর্থ কিংফিশার চাইলেও আপাতত কোনও বিমান চালাতে পারবে না। সরাসরি ইন্টারনেট বা এজেন্ট মারফত টিকিট বিক্রি করতে পারবে না। উল্লেখ্য, ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত লক আউটের কথা ঘোষণা করা হলেও ইন্টারনেটে কিন্তু কিংফিশার বলছিল, ৫ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের কোনও উড়ানের টিকিট মিলবে না। এর পরের সময়ের টিকিট পাওয়া যাবে বলা হলেও বাস্তবে তা বিক্রি করা হয়নি। শনিবার ডিজিসিএ-এর কড়া বার্তা পাওয়ার পরে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ৯ নভেম্বরের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ডিজিসিএ সাসপেনশনের নোটিস দেওয়ার পরে কিংফিশার তো বটেই, দুশ্চিন্তায় পড়েছে তাদের ঋণ দেওয়া ব্যাঙ্কগুলি। ১৭টি ব্যাঙ্কের কনসরটিয়াম প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে বিজয় মাল্যর সংস্থাকে। সব চেয়ে বেশি ধার দিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। দেড় হাজার কোটি টাকা। স্টেট ব্যাঙ্কের এক কর্তা এ দিন বলেন, “পরিস্থিতির উপরে আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে কোনও ব্যাঙ্কই চায় না এয়ারলাইন্সটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাক। আমরা চাই ওরা ফের উড়ান চালু করুক, আর আমাদের টাকা ফেরত দিক।”
কিংফিশার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে তাদের যে সম্পত্তি বন্ধক রয়েছে তা বিক্রি করে খুব কম টাকাই মিলবে বলে মনে করছে ব্যাঙ্কগুলি। অন্য একটি ব্যাঙ্কের কর্তার মতে, বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রি করে মোট ঋণের ১৫ শতাংশের বেশি টাকা মেলার সম্ভাবনা নেই। সেই কারণে ফের কিংফিশারের উড়ান চালুর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে ব্যাঙ্কগুলি। অন্য কোনও সূত্র থেকে টাকা এনে উড়ান চালু করার জন্য কিংফিশারকে চাপ দিচ্ছে তারা।
আর্থিক দেনা ছাড়াও এই মূহূর্তে কিংফিশারের সমস্যা বলতে সাত মাসের বকেয়া বেতন। যার দাবিতে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার ও পাইলটেরা। তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসে আপাতত দু’মাসের বেতন দিতে রাজি হয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা মানতে চাননি পাইলট-ইঞ্জিনিয়াররা। শনিবারের পরে তাঁরা রাজি হলেও অবশ্য দুম করে উড়ান চালু করে দিতে পারবে না কিংফিশার। ডিজিসিএ-এর কাছে নতুন পরিকল্পনা জমা দিয়ে সাসপেনশনের নির্দেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন জানাতে হবে। রাতে কিংফিশারের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কর্মীদের অসন্তোষের সমাধান হলে ডিজিসিএ-কে সংস্থার পুনরুজ্জীবন প্রকল্প পাঠানো হবে। |