রাজ্যে মাত্রা ৯০ ডেসিবেলই |
বাজির শব্দসীমা বৃদ্ধির আর্জি খারিজ কোর্টে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
শব্দবাজির বিরুদ্ধেই ফের রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বাজির শব্দসীমা বাড়ানোর জন্য প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতারা যে-আর্জি জানিয়েছিলেন, উচ্চ আদালত শুক্রবার তা খারিজ করে দিয়েছে। তাদের নির্দেশ, পশ্চিমবঙ্গে বাজির শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেলই থাকছে। বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত ও বিচারপতি অসীম মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন জানিয়ে দিয়েছে, এই রাজ্যে বাজির শব্দসীমা অনেক আগে থেকেই ৯০ ডেসিবেলে বেঁধে দেওয়া আছে। কোনও মতেই সেই সীমা অতিক্রম করা যাবে না।
বাজির শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেলের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গে চালু রয়েছে ১৯৯৭ সাল থেকে। এর অর্থ, কোনও বাজির ক্ষেত্রে সেটি ফাটার উৎস থেকে পাঁচ মিটার দূরত্বে শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেলের মধ্যে থাকতে হবে। ১৯৯৭ সালে হাইকোর্ট নিযুক্ত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি বাজির ক্ষেত্রে ওই শব্দসীমা অনুমোদন করে। উচ্চ আদালত সেটিকে বৈধতা দেয়। ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্টও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টের ওই সিদ্ধান্ত বহাল রাখে।
সেই হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে শব্দবাজি তৈরি, বিক্রি ও ব্যবহার কার্যত নিষিদ্ধ বলে মনে করেন রাজ্যের পরিবেশ দফতর ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তা ও বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, ৯০ ডেসিবেল শব্দসীমার মধ্যে ‘ক্যাপ’ বা ছোটখাটো পটকা ছাড়া আর কিছুই হয় না। সে-দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গ অন্তত কাগজে-কলমে শব্দবাজি-নিষিদ্ধ রাজ্য। ভুক্তভোগী নাগরিকদের অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য রকম। ফি-বছর কালীপুজোয় অনেক ক্ষেত্রেই বাজির দাপট আদালতের বেঁধে দেওয়া সীমার মধ্যে থাকে না। অতিষ্ঠ নাগরিকদের তরফে প্রতিবাদও অপ্রতুল নয়।
এই পরিস্থিতিতে বাজি বিক্রেতা ও প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির বক্তব্য ছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের আইন অনুযায়ী দেশের অন্যত্র বাজির শব্দসীমা ১২৫ ডেসিবেল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ওই সীমা ৯০ ডেসিবেলে বেঁধে দেওয়ায় শব্দবাজি তৈরি করা যাচ্ছে না। এর ফলে তাঁরা বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। দেশের অন্যান্য জায়গার মতো পশ্চিমবঙ্গেও বাজির শব্দসীমা বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করার জন্য হাইকোর্টে আর্জি জানান তাঁরা।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এই ব্যাপারে আপত্তি জানায়। এই বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট যে-সব রায় দিয়েছিল, তারও উল্লেখ করে তারা। পাল্টা আবেদনে পর্ষদ এটাও জানায়, ২০০৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট বলে দিয়েছে, সারা দেশে বাজির শব্দসীমা ১২৫ ডেসিবেল হলেও কোনও রাজ্য নিজেদের প্রয়োজন ও বিবেচনা অনুযায়ী বাজির শব্দসীমা এর চেয়ে কম রাখতে পারে। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এ রাজ্যে বাজির শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেলই থাকবে বলে রায় দিয়েছে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত জানান, বাজি প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতা সংস্থাগুলি তাঁদের কাছেও শব্দসীমা বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিল। তাদের দাবি বিবেচনা করে দেখার জন্য গত বছর বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি গড়ে মত চেয়েছিল পর্ষদ। বিনয়বাবু বলেন, “সেই বিশেষজ্ঞ কমিটিও জানিয়ে দেয়, বাজির শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেলের বেশি বাড়ানো যাবে না। বাজির ব্যাপারে নাগরিক সমাজও আমাদের একই কথা জানায়।” |