জেগে থাকে কুমোরটুলি
সর্বংসহা
শ্বিনের মাঝামাঝি উঠিল বাজনা বাজি... দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে কত না পুলক, পরিকল্পনা, ব্যবসা, বিনোদন। অসংখ্য পুজো, সংগঠকদের ব্যস্ততা, প্রতিযোগিতায় পুরস্কার ছিনিয়ে নিতে পারলে বাকি বছরটা তো সেই আমেজেই কেটে যাবে। আগমনী সুর আর ‘আসছে বছর আবার হবে’-র পুরোটাই কি বাইরের আবরণ? উৎসবপ্রিয়তা কি অভ্যাসমাত্র? কেউ বলেছিলেন ‘কল্লোলিনী তিলোত্তমা’, কেউ বলছেন ‘লন্ডন’, কেউ বা ‘সিটি অব জয়’। কোনওটাই নয় আনন্দে-বিষাদে কলকাতা আমাদেরই শহর, তাই প্রশ্ন জাগে নির্লজ্জ কর্মবিমুখতার পথে পথে জমা জঞ্জাল, উন্মুক্ত শৌচাগার আর তার পাশেই ঝাঁ-চকচকে পুজোমণ্ডপের উৎকট সহাবস্থান দেখে। আর তাই, যে মৃৎশিল্পীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল তোলে পুজো কমিটিগুলো, তাঁদের দুর্বিষহ প্রাত্যহিকীর খেয়ালও কেউ রাখে না। কুমোরটুলির গলিঘুঁজিতে চরম দারিদ্রের সঙ্গে যুঝে সৃজনকে নিখুঁত করে তুলতে শিল্পীরা পেটে খিদে চেপে কাঠ-বাঁশ-খড়ের কাঠামো গড়েন, মাটি চড়ান, প্রতিমার সাজ বানান, আকৃতিকে সুন্দর করে তোলেন।
যাঁরা প্রতিমা নেবেন, তাঁদের মন রাখতে সময়োচিত ভঙ্গিমা জায়গা করে নেয়। রাত জেগে দিন জেগে সেতু গড়েন ঐতিহ্যের সঙ্গে বর্তমান ধারার। কিন্তু মনে আক্ষেপ ‘কিছুই হল না’। তিনি যে ‘শিল্পী’, মনে করালে ঝটিতি উত্তর, ‘আর শিল্পী! শিল্পী এখন জুলপি হয়ে গেছে, বুঝলেন।’ বলেই পরম দক্ষতায় রঙতুলির জাদুতে মহিষাসুরের মুখে স্বভাবসুলভ অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলেন। ‘রাজা আসে যায়’ কিন্তু এঁদের অধিকার নিয়ে পতাকা তুলল না কেউ। তোলা জলে কাজ, পথের ধারে আবর্জনা, উচ্ছিষ্ট। একটি কর্মশালার গা ঘেঁষেই খোলা শৌচাগার (সঙ্গে বাঁ দিকের ছবি)। ষোড়শোপচারে বাড়িতে বা মণ্ডপে যাঁরা পূজিত হবেন, তাঁদের নির্মাণ পূতিগন্ধের আবহে দেবী ‘সর্বংসহা’ বলে কথা! ন্যূনতম স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা, আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করতে কেন এই অপারগতা? উৎসবের শুধু মুখ, আর মুখোশ হৃদয় নেই? তবুও নিশ্চিত থাকি, আসছে বছর আবার হবে। জেগে থাকবে কুমোরটুলি।

পরিযায়ী

জানলা খুললেই নীল সমুদ্র গভীর বন সবুজ পাহাড় এমন শিরোনামের কোনও লেখা নজরে এলেই মন নেচে ওঠে, বলে: চলো বেড়াই। আদ্যন্ত বেড়ানোরই কাগজ যারা পরিযায়ী (সম্পা: অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়)। যাঁরা লেখেন এ-কাগজে, তাঁদের প্রত্যেকের পায়ের তলায় সর্ষে। আন্দামান নিয়ে উপরের লেখাটির মতোই আরও অনেক বেড়ানোর বৃত্তান্ত... স্পিতি, লে, আমবলি, কুমায়ুন, দারোজি, উগান্ডা, বান্ধবগড়, হাভানার মতো নানা কিছুতে। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত এবং বুদ্ধদেব গুহ দু’জনেই জানিয়েছেন তাঁদের নির্জন ভ্রমণের কথা। সুধীর চক্রবর্তী লিখেছেন ‘পরিযায়ী গানের কথা’। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জন্মশতবর্ষে তাঁর গানের পর্যটন নিয়ে কালিকাপ্রসাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য। পাতায় পাতায় বেড়ানোর সাদাকালো আর রঙিন ছবি, সঙ্গে স্কেচও। সঙ্গে স্টিভ ম্যাকারির তোলা রাজস্থানের নারী ও আঁধির ছবি, প্রচ্ছদ থেকে। শারদ সংখ্যাটি এককথায় উপযুক্ত ভ্রমণসঙ্গী।

হরেক রকম
দক্ষিণ ভারতে কথাকলি নৃত্যশৈলীর চর্চা ফিরিয়ে আনেন মালয়ালম সাহিত্যের মহাকবি ভাল্লাথোল নারায়ণ মেনন। ১৯২৭-এ শান্তিনিকেতন ঘুরে গিয়ে কেরলের ত্রিচুর জেলার চেরুতুরুতি গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন একটি কলাকেন্দ্র, ১৯৩০-এ। দক্ষিণী মন্দিরের নাট্যশালা কুথামবলম-এর বাস্তুরীতি অনুসারে এর নাম হয় কলামণ্ডলম। এই ভাবনাই এ বার লেক গার্ডেনস পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের পুজোমণ্ডপে। শিল্পী দীপক ঘোষের নির্দেশনায় দশ হাজার বর্গফুট পাথরের মেঝেতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কুথামবলম-এর আঙ্গিকে মণ্ডপ (সঙ্গের ছবি: গোপী দে সরকার)। অন্য দিকে, একদা গ্রামে আলো বলতে কেরোসিন লণ্ঠন বা কুপি। কত না তার বিচিত্র গড়ন। এখন এর কারিগর পাওয়াই মুশকিল। শিল্পী বিভাস মুখোপাধ্যায় ও সুব্রত মণ্ডল এক বছর ধরে খুঁজে বার করেছেন এঁদের। প্রায় ছয় হাজার বাতির মধ্যে এল ই ডি বাল্ব লাগিয়ে সেজে উঠছে কালীঘাটের শ্রীসংঘের দুর্গামণ্ডপ। আবার হরেক রকম পুতুলের মধ্যে বাঘাযতীন রিক্রিয়েশন ক্লাবের মণ্ডপে উঠে আসছে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর কথা। ‘নিজের হাতে পুতুল গড়ি, বানাই দেবীর ঘর,/ বাপ-দাদাদের পেশায় মোরা হলাম স্বয়ম্ভর।’ শিল্পী স্নেহাশীষ মান্নার পরিকল্পনায় পুতুল তৈরিতে হাত লাগিয়েছেন বর্ধমান-বাঁকুড়ার শিল্পীরা।

এ বার ট্রামে
ষষ্ঠী থেকে নবমী শহর ঘুরবে ‘বনলতা’ ও ‘বলাকা’। ঠাকুর দেখতে এই দুই হেরিটেজ ট্রামের আয়োজন, প্রযত্নে সিটিসি। এ বারেই প্রথম। সকাল ৮টায় রাজাবাজার থেকে যাত্রা শুরু, পার্কসার্কাস, গড়িয়াহাট, খিদিরপুর, শ্যামবাজার হয়ে আবার রাজাবাজার। একই সময়ে অন্যটি রওনা দেবে গড়িয়াহাট থেকে। পার্কসার্কাস, খিদিরপুর, বাগবাজার, শ্যামবাজার হয়ে ফের গড়িয়াহাট। বিভিন্ন ডিপোয় ট্রাম দাঁড়াবে, দেখে নিতে হবে কাছের পুজো। থাকবে গাইডও। বিকেল সাড়ে তিনটে ও চারটেয় ট্রাম রওনা দেবে ধর্মতলা থেকে। ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত টিকিট ধর্মতলার অফিসে।

বাড়ি ফেরা
বছরে মাত্র চারটি দিন উমা বাপের বাড়ি আসার ছাড়পত্র পান। আজকের ‘উমা’দের অতটা করুণ দশা না হলেও খামতি কিন্তু রয়েই গিয়েছে। কারণ, বিয়ের পর আজও মেয়েদেরই শ্বশুরবাড়ি যেতে হয়। যে সময় মেয়েটি বাবা-মা’র কাছে আসে, তখনই ছোটবেলার সঙ্গীরাও বাপের বাড়ি আসবে তা তো হয় না। বন্ধুত্ব ফিকে হয়ে আসে। এটাই ভাবিয়েছে দক্ষিণ কলকাতার রাজেন্দ্রপ্রসাদ কলোনির বাসুদেব ঘটককে। ৬২ বছরের কলোনির ৩ নম্বর ব্লকের ৯৯ জন আজ শ্বশুরবাড়ি। যাঁদের কেউ ৬০ কেউ বা ২২। এ বার নবমীতে ছেলেপুলে নিয়ে সেই ‘উমা’দের এক সঙ্গে বাড়ি ফেরার পালা। ওদের সবাইকে এক সঙ্গে করতেই চাঁদা তুলে এই আয়োজন। দেখা হবে পুরনোদের সঙ্গে নতুনদের। গান, নাচ, আর স্মৃতিচারণে সময় কাটবে।

মুক্তির উদ্যোগ
স্টেশনেই দিন যাপন ওদের। ভিক্ষে বা এটা সেটায় পেট চলে। তার মধ্যেই জড়িয়ে পড়ে নেশায়। এমন ছোটদের নিয়েই কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘মুক্তি রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’। নেশা ছাড়ানোর চিকিৎসার সঙ্গে ওদের মূলস্রোতে ফেরানোর কাজ চলে। এদের জন্যই গান গেয়েছেন সুস্মিতা বসু। পেশায় বিমানসেবিকা। এক সময় গান গাইলেও পেশার চাপে সময় পেতেন না। সুস্মিতা চান পিছিয়ে পড়া ছোটদের জন্য কিছু করতে। তাই নতুন করে গান গাওয়া। ‘আমার মতো করে’ সিডিটিতে রয়েছে ১০টি রবীন্দ্রসঙ্গীত। ১৭ অক্টোবর এটি মুক্তি পাবে। বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ ব্যয় হবে নেশাগ্রস্ত ছোটদের সাহায্যে।

আলপনা
ব্যস্ত জীবনে হারিয়ে যাচ্ছে লোকাচার। আলপনার জায়গা নিয়েছে ছাপানো স্টিকার। বর্তমান প্রজন্মকে ঐতিহ্যের কথা মনে করাতে ১৭ অক্টোবর ক্রাফটস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া আয়োজন করেছে সারা দিনের কর্মশিবির ‘বাংলার ব্রত ও আলপনা’। প্রশিক্ষণে তৃষ্ণা ও বিধান বিশ্বাস। চৌরঙ্গি টেরাসের আর্টিসানায় অনুষ্ঠানের সূচনায় থাকবেন বিশ্বভারতীর শ্রীলেখা চট্টোপাধ্যায়।

পেটপুজো
বাঙালির পুজো মানেই পেটপুজো। আর তাকেই অন্য মাত্রা দিতে গঙ্গাবক্ষে ফ্লোটেল রাখছে ক্লে পট কুকিং-এর অভিনব আয়োজন। মাটির পাত্রে রান্না ও পরিবেশন। ফ্লোটেলের তরফে শুভা পাল জানালেন, উত্তর কলকাতার যে দোকান থেকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে মাটির পাত্র যেত, সেখান থেকেই নাকি আনা হচ্ছে যাবতীয় বাসন। তাতে মৃদু আঁচে তৈরি হবে চট্টগ্রামের রাপিনি শুক্তো, গলদা চিংড়ির ধোঁকা, কুমড়ো পাতার ভাপা ইলিশ, মরিচ মাংস, সর্ষে নারকোল মুরগি, রাজ কাঁকড়ার রিসমিশ, কত কী। সঙ্গে ক্ষীর কমলা, খেজুর গুড়ের মোহনভোগ, ব্লু বেরি মাখা সন্দেশ। সব মিলিয়ে তিরিশ পদের বুফে এবং পুজোর ভোগ। থাকবে বাউল গান, ঢাক, ম্যাজিক এ সবও ।

বৃত্তের বাইরে
বছরভর ওঁরা প্রতিমা গড়েন। তবে কুমোরটুলির বাইরে। শহরের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে বাঁশ আর চালার কাঠামোয় রাধারমণ পাল, কার্তিক পালের মতো বহু শিল্পীর ঘর। সেখানেই জন্ম প্রতিমার। রামগড় মোড়ে নিখিল ও রতনের ঠাকুর গড়ার পারিবারিক ব্যবসা। বাবা লক্ষ্মণ পাল বাংলাদেশ থেকে এসে শুরু করেছিলেন পঁয়তাল্লিশ বছর আগে। রাসবিহারী থেকে শুরু করে সোনারপুর-বারুইপুরের মণ্ডপে দেখা যায় এই শিল্পীদের প্রতিমা। ফি-বছর পঞ্চাশ থেকে ষাট হিসেব মতো প্রতিমা গড়া। বাঁধা কাস্টমার। এ বার ঠাকুর যেতে শুরু করবে। গত কয়েক মাসের ব্যস্ততা উধাও। দশমীতে সৃষ্টি মিশে যাবে জলে। বিষণ্ণতা শুধু সে রাতটুকুই।

কবির সফর
টরন্টোয় বাংলা কবিতা পড়বেন সুবোধ সরকার। ওই শহরে তেত্রিশ বছর ধরে হচ্ছে ‘ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল অব অথরস’। ১১ দিনের সেই লেখক-উৎসবে এ বার রয়েছে ভারতীয় সাহিত্যের উদ্দেশে নিবেদিত এক সন্ধ্যা। হিন্দি ও ভারতীয় ইংরেজি সাহিত্যের পাশাপাশি সেখানে আমন্ত্রিত একা নরকগামী-র কবিও। তিনটি কবিতা পড়বেন তিনি, সঙ্গে তার ইংরেজি অনুবাদ। অনুষ্ঠানে থাকবেন কানাডাবাসী ভারতীয় লেখক রোহিন্টন মিস্ত্রিও। পুজোর মুখে দীর্ঘ সফরেই চললেন সুবোধ। বাঙালি কবি তো!

কীসের পুজো
আলোর রোশনাই, জমজমাট বাজার, পুজোর আমেজ ছুঁতে পারে না ওঁদের। ৯ ডিসেম্বর ২০১১ বদলে দিয়েছিল ওঁদের যাপন। ঝলমলে সকালটা ছিল রাতের চেয়েও অন্ধকার। হাহাকার ছড়িয়েছিল শহরের আনাচেকানাচে। আমরি-র অগ্নিকাণ্ড কেড়ে নিয়েছিল পরিবারের কাউকে। স্ট্রোকে আক্রান্ত তারাপদ মুখোপাধ্যায়কে অন্যত্র সরানো হলেও শেষরক্ষা হয়নি। মেনিনজাইটিস নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন পরমা চক্রবর্তী (৩৩)। পরদিনই বাড়ি গিয়েছিলেন, শেষ বারের মতো। আগের দিনই ফেরার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে থেকে যাওয়াই কাল হয়েছিল বেলঘরিয়ার অলক চৌধুরীর। কান্নাভেজা গলায় অলকবাবুর স্ত্রী জানালেন, ভাঙা কোমর, নিরুপায় হয়ে দেখছেন মৃত্যু এগোচ্ছে— এটাই ভুলতে পারি না। পরস্পরের অচেনা এই পরিবারগুলোর পুজো প্রায় এক। প্রিয় মানুষটির স্মৃতি হাতড়ানো। দিদি সোমা গুহরায়ের স্মৃতিতে গত পুজোয় পরমার ঠাকুর বরণ। ইতিমধ্যেই বিয়ে করেছেন পরমার স্বামী। তবুও বৃদ্ধ বাবা-মা যদি নাতিকে কাছে পান এই আশায় পুজোর মুখ চেয়ে।

ছোট্ট দুর্গা
পেশায় বিজ্ঞাপন সংস্থার শিল্পী। ফি-বছর গড়েন একটি দুর্গা। ৫-১০ ইঞ্চির মধ্যে। রবারের পাইপ, তার, তেজপাতা, গেঞ্জির কাপড় নানা সময়ে হয়েছে তাঁর মূল উপকরণ। এ বারে মাটিতে ফেরা। ৩ ইঞ্চির নিখুঁত সেই দুর্গার অস্ত্র তৈরি হয়েছে র্যাপিং ফিতে মুড়ে, মায়ের ত্রিশূল কার্পেট সুচ দিয়ে, পাটের দড়ি শুকিয়ে সিংহের কেশর। মাসের পর মাস একটু একটু করে গড়ে তোলা নেহাতই শখে। বরাহনগর ন’পাড়ার পুলিশ কোয়ার্টারের পুজোয় এটি দেখা যাবে। মণ্ডপের বাইরেও দেবীরূপ নিয়ে ভাবনা নিরন্তর-- অতীত থেকে বর্তমানে। ৩৫ জন শিল্পীর চিত্র ও ভাস্কর্য নিয়ে প্রদর্শনী ‘মাতৃরূপেণ’ গুরুসদয় সংগ্রহশালায়, ১৫-৩১ অক্টোবর। চিত্রকূট গ্যালারিতে নবীন ও প্রাচীন দুর্গাচিত্রের সমাবেশ ১৫-৩০ অক্টোবর।

মহালয়া
মহালয়ার সঙ্গে তাঁর নাম অঙ্গাঙ্গি। এমনই, যে এক বার উত্তমকুমারও মহালয়ার অনুষ্ঠান করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তিনি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। আজ মহালয়ার দিনে স্টার থিয়েটারে সারা দিনই তাঁকে ঘিরে অনুষ্ঠান। স্মৃতিচারণ, গান, আলোচনায় অনুষ্ঠানটির আয়োজক ‘বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র জন্মোৎসব কমিটি’। থাকবে তাঁর কণ্ঠে ‘দেবতার গ্রাস’ ও ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র অংশবিশেষ।

সচেতনতা
সাধারণ মানুষের মধ্যে অঙ্গদান নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে বহু দিন ধরেই উদ্যোগী ‘গণদর্পণ’। গত কাল ‘ইন্টারন্যাশনাল অরগ্যান অ্যান্ড টিস্যু ডোনেশন ক্যাম্পেন’ উপলক্ষে জাতীয় গ্রন্থাগারে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর আজ কলকাতা থেকে কোচবিহার রওনা হবে বিজ্ঞান জাঠা। আগামী দেড় মাস পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চলবে এ বিষয়ে প্রচার। ২৭ ও ২৮ নভেম্বর কলকাতায় থাকবে বিশেষ আলোচনা।

চিরযুবা
তিনি ছুঁয়েছেন তিয়াত্তর। গত ১১ অক্টোবর বলিউডে যখন বিগ বি-র ৭০তম জন্মদিনের উল্লাস চলছে তখন তিনি ১০সি রজনী ভট্টাচার্য লেনের বাড়িতে কাগজে রং চাপাচ্ছেন। তিনি সুনীল দাস, তাঁর ‘ঘোড়া’ একদা টগবগিয়ে ছুটেছে ভারত তথা বিশ্বের শিল্পবাজারে। তবে ওই যে, মধ্যরাতে তাঁর শিল্পের ক্যানভাসে যে ছবিটি ফুটে উঠছে সেটি কোনও জিদ্দি ঘোড়ার নয়, অমিতাভ বচ্চনের। তাঁকে নিয়ে আঁকা ছবির যে অ্যালবামটি ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে মুম্বইয়ে সেখানে ছবি আঁকার এবং প্রদর্শনী ও বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে থাকার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সুনীল দাসকে। তিনি ছবি এঁকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। নিজে যাননি। কেন? “মূলত শরীরের কারণে। তা ছাড়া আমি শিল্পী, ক্যানভাসেই আমার সবচেয়ে ভাল প্রকাশ। যেনতেনপ্রকারেণ ওঁর জন্মদিনের উদ্যাপনে থাকতে শিল্পীমহলের একাংশে যে কাড়াকাড়ি দেখেছি, সেটা আমার রুচিতে বাধে। বরং প্রিয় নায়ককে আমি তাঁর জন্মদিনে নতুন করে আঁকলাম। আগের ছবিটা ছিল কাউবয় অমিতাভ। এ বারেরটা রাগী যুবক। সত্তরেও তো তিনি চিরযুবা, চিরজীবী।” বলছেন সুনীল। সঙ্গে সেই ছবি।

আশিতে পা
তখন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত, যদুনাথ সরকার, সর্বেপল্লি রাধাকৃষ্ণণের মতো মানুষ প্রায়ই হাঁটতেন কলেজ স্ট্রিট ধরে। দাঁড়াতেন পুরনো বইয়ের সামনে। পঞ্চাশের সেই দশককে স্মৃতিতে ধরে রেখেছেন প্রকাশক-লেখক সবিতেন্দ্রনাথ রায়। কলেজ স্ট্রিটের ‘ভানু’দা। ১৯৪৬-এর দাঙ্গায় উঠে এসেছিলেন ঢাকুরিয়ায়। সংসারে অনটন। গজেন্দ্রকুমার মিত্রের স্ত্রী প্রতিমা-র কাছে পড়া শুরু। আর্থিক দুরবস্থার জন্য ১৯৪৯-এ ম্যাট্রিকের ফল প্রকাশের আগেই মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স-এ যোগ দেন। তারাশঙ্কর, দাদাঠাকুর, শিবরাম, বনফুল, আশাপূর্ণার মতো সাহিত্যিকদের সঙ্গ লাভ। আনন্দবাজারের ‘আনন্দমেলা’ বিভাগে ভ্রমণকাহিনি প্রকাশিত হওয়ার পর বিভূতিভূষণের মন্তব্য, ‘বাপরে, ভানু তো লেখক হয়ে গেল’। এই সাহিত্যিক সংসগের্র্র ফল চারটি পর্বে কলেজ স্ট্রিটের সত্তর বছর। ধরে রেখেছেন বইপাড়ার একটা সময়। কেমন মিলে যেত শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোষ্ঠী বিচার, জীবনানন্দ ও নজরুলের চিকিৎসায় সজনীকান্তর অগ্রণী ভূমিকা, প্রকাশকের লোকসানের কথা চিন্তা করে বিভূতিভূষণের টাকা না নেওয়া পেশাগত সম্পর্কের বাইরে তখনকার লেখক-প্রকাশক সম্পর্কের নানা দিক রয়েছে সেই আকরে। ভানুবাবু আশিতে পা দিচ্ছেন আজ। সে উপলক্ষে শনিবার মহাবোধি সোসাইটি হল-এ তাঁকে সংবর্ধনা দিলেন কলেজ স্ট্রিটের প্রকাশকরা, ‘অনুষ্টুপ’-এর উদ্যোগে।
   

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.