বিনোদন নবাবের বিয়েতে ডাক আসেনি, দুঃখে প্রজারা
নে হচ্ছে মৃণাল সেনের ‘খণ্ডহর’-এর সেটে হাঁটছি। ঝুরঝুরে, প্রায় ধ্বংসস্তূপ হয়ে যাওয়া একটা বাড়ি পিলি কোঠি। এখানেই মনসুর আলি খান নিকাহ করেছিলেন শর্মিলা ঠাকুরকে। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যে ৫২টা গ্রামে তাঁর রাজত্ব ছিল, সেই প্রজাদের সামনে এখানেই স্ত্রীকে নিয়ে প্রথম দর্শন দিয়েছিলেন নবাব।
সেই পিলি কোঠি এখন ভুতুড়ে কেল্লার মতো। সামনের বাগান আগাছায় ভর্তি। জানলার খড়খড়ি ভাঙা। স্মৃতির সঙ্গে ঠেলাঠেলি করে জায়গা নিয়েছে মাকড়সার জাল। গাড়ি দেখে দৌড়ে আসে এক দল ছেলে। নিশ্চয়ই এরা করিনার ভক্ত। কিংবা হয়তো ট্র্যাক্টর আর ঘোড়া দেখে অভ্যস্ত চোখে গাড়িটা বিরল। “সইফ-করিনা এসেছিল। আমি ওদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেছি!” বছর পনেরোর ছেলেটা এখনও রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি, মনে হল।
নীচের তলায় তালা ঝুলছে। কারও কারও দাবি, তলাটা নাকি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। কারও দাবি, দোতলায় এখনও নবাব সাহেবের কিছু দুর্মূল্য জিনিস রয়েছে। কিছু পুরনো বাদ্যযন্ত্র, কিছু পেন্টিং! কে জানে, সত্যি কি না!
কেমন লাগবে বিয়ের সাজে? শিল্পীর তুলিতে সইফ-করিনা। ছবি: এএফপি
পটৌডি নামটায় যতই জৌলুস জড়িয়ে থাকুক, আদতে জায়গাটা ঘুম-ঘুম একটা গ্রাম। ট্র্যাক্টরে চড়ে লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছে এটাই সাধারণ দৃশ্য। আর মেয়েরা? এখানে শরীর ভাল করে না ঢাকার চেয়ে অনেক বড় অপরাধ মাথায় ঘোমটা না দেওয়া! যাদের শরীর একটু ভারীর দিকে, তারাও ব্লাউজ ঠিক করার আগে ঘোমটা টানছে! পটৌডির মূল রাজবাড়িটি হোটেল হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু বছর হল। ঢোকার ব্যাপারে প্রচণ্ড কড়াকড়ি। ফটকের ঠিক বাইরে মুনিশ রামের মুদি দোকান। “২৭ ডিসেম্বর, ১৯৬৭ বিয়ে করেছিলেন নবাব মনসুর আলি খান। একটা বগ্গিতে বারাত এসেছিল। হরিয়ানায় এটাই ছিল প্রথম বিয়ে, যাতে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং ভারতের রাষ্ট্রপতি (জাকির হুসেন)।” প্রত্যেকটা গাছে আলো জ্বলছিল। বড় বড় ব্যানার স্বাগত জানাচ্ছিল অতিথিদের। “নবাব সাব তো ঘোড়ে পে আয়ে থে। বেগম সাহিবা ডোলি পে। সব বাড়িতে কাঁসার থালায় লাড্ডু পাঠানো হয়েছিল। অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ থালায় খোদাই করা ছিল!” ছোটে নবাবের বিয়ে নিয়ে উত্তেজিত নন? “ভিতরে কী হচ্ছে না হচ্ছে, জানি না। শুনলাম ১৮ তারিখ রিসেপশন জাতীয় কিছু হবে। বেগম সাহিবার অনুমতি ছাড়া কেউ ভিতরে ঢুকতে পারছে না।”
মনসুর-শর্মিলার বিয়েতে ডাক পেয়েছিল গোটা গ্রাম। সইফ-অমৃতার বিয়েতেও সবাই ছিলেন। আর সইফ-করিনার বেলায়? “দেখুন, আমাদের ডাকলে এক রকম ছিল। পটৌডির এক জনও আমন্ত্রণ পায়নি। হোটেলে আমাদের প্রবেশাধিকার নেই। এখানে বিয়ে হলে আমরা নিশ্চয়ই যাব। কিন্তু আমন্ত্রণ না পেলে কী করতে পারি?” কথাগুলো যিনি বললেন, তিনি মেহবুব। উপস্থিত ইনিই ইংরেজি জানেন। কথাগুলো যখন বলছিলেন, মনে হচ্ছিল যেন তিনি গোটা গ্রামেরই মুখপাত্র। মেহবুবের কাকার বাড়ির উঠোন থেকে পটৌডি মহল আর মসজিদটা দেখা যায়। উঠোনে বসে কাকা বলেন, “শর্মিলাজির ‘মুঁ-দিখাই’ অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম। ৫২টা গ্রামের লোকই সে দিন জড়ো হয়েছিল।” প্রতিটা গ্রাম থেকে এক জন করে নবাব সাহেবকে মুদ্রা উপহার দিয়েছিল। “নবাবের হৃদয় এত বড় ছিল যে, এক টাকা রেখে বাকি সব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।”
পাশে দাঁড়ানো মেহবুব এ বার বলা শুরু করেন, “আমি অমৃতা সিংহের ‘মুঁ-দিখাই’-এ ছিলাম। পটৌডি মহলের বাগানে শর্টস আর টি-শার্ট পরে বসেছিলেন।” ওঁর পোশাক নিয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করেনি। “রাজপরিবারে কে কী করল, তার সমালোচনা না করাটাই আমরা ভদ্রতা বলে মানি। অমৃতাকেও মুদ্রা উপহার দেওয়া হয়েছিল।”
ডান দিকে আরও একটা ভাঙাচোরা বাড়ি। “সইফের ঠাকুমা ওখানে থাকতেন। উনি মারা যাওয়ার পরে বাড়িটায় একটা স্কুল খোলা হয়েছিল। সেটাও আর নেই।” গ্রামবাসীর আশা, সইফ-করিনা নিশ্চয়ই পিলি কোঠি আর এই বাড়িটা সারাবেন! পিলি কোঠির ভিতরে নিজে এক বার ঢুকেছিলেন মেহবুব। “সইফের ছোটবেলার ‘পুশচেয়ার’ এখনও রাখা আছে। ক্রিকেটের কিছু সরঞ্জামও দেখেছি। শুনেছি স্যাফ আর করিনা ঠিক করেছিল, এই বাড়িটা নতুন করে তৈরি করবে। আমরা সবাই চাই বাড়িটা যেন নষ্ট না হয়ে যায়!”
পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়লে কী হবে, নবাবদের নিয়ে রোমান্স গ্রামবাসীর মন থেকে হারায়নি। শর্মিলা ঠাকুর যে গত শুক্রবার এখানে এসেছিলেন, সেটাও চোখ এড়ায়নি। “ওটা জুম্মাবারের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল। ১৫-২০ জন বাচ্চা বাদে গ্রামের কয়েক জন সম্মানীয় লোকেদেরই শুধু ডাকা হয়েছিল,” বললেন জাভেদ খান। তাঁর বাবা আব্দুল জলিল আহমেদই ছিলেন অনুষ্ঠানের আয়োজক। পটৌডি গ্রাম এখন আশায় আছে, ১৮ তারিখ সইফ-করিনা আসবেন। কেউ কেউ বলছেন, আশ্রম হরিমন্দির সংস্কৃত মহাবিদ্যালয়ের সব ঘর ‘বুকড্’। জুলিয়া রবার্টস ‘ইট-প্রে-লভ’-এর শু্যটিংয়ের সময় এখানে থাকতেন। আশ্রমের প্রধান স্বামী ধর্মদেব মহারাজও উদগ্রীব, “শর্মিলাজিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি বলেছিলেন, লন্ডন বা মুম্বইয়ে বিয়ে হবে।” রাজকীয় ব্যাপারস্যাপারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকাটা আসলে নেশার মতো। ছাড়া যায় নাকি!

জেলোর জৌলুস
বার্লিনের এক অনুষ্ঠানে জেনিফার লোপেজ। ছবি: এ এফ পি

দুই তারকা
মুম্বইয়ে এক অনুষ্ঠানে ফারহা খান এবং রণবীর কপুর। ছবি: এএফপি



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.