দেবীর নাম বুড়ি দুর্গা। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মৌতোড় গ্রামে এ নামেই দেবী দুর্গার পুজো হয়ে আসছে। পূর্বপুরুষদের পথে পরিবারের সদস্যেরা নিষ্ঠাভরে পুজো করে আসছেন।
বুড়ি দুর্গা নামকরণের পিছনে রয়েছে একটি কাহিনি। পরিবারের প্রৌঢ় সদস্য মাধবচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শক্তিপদ ভট্টাচার্য, গুরুপদ ভট্টাচার্যরা জানান, তাঁদের আদি বাস ছিল বাংলাদেশের খুলনায়। সেখান থেকে নদিয়ার বাঁধবেড়ায়। তাঁদের পূর্বপুরুষ গৌরীকান্ত ভট্টাচার্য পণ্ডিত ব্যক্তি বলে পরিচিত ছিলেন। পঞ্চকোটের রাজা তাঁকে নিজের রাজ্য গড়পঞ্চকোটে নিয়ে আসেন। রাজা তাঁকে মৌতোড় গ্রামে নিষ্কর দেবোত্তর জমি দান করেন। সেখানেই বাস শুরু করেন গৌরীকান্তবাবু। কিন্তু বান্দা মৌজায় রাজার দান করা নিষ্কর জমিতে প্রতি বছর ধান চাষ করলেও ঘরে তোলার আগে সেই ফসল কেউ নষ্ট করে দিয়ে যেত। তাকে ধরা যেত না। ঘটনার কথা জেনে পঞ্চকোটের রাজা জমি পাহারা দেওয়ার জন্য সৈন্য পাঠান। |
এক রাতে গৌরীকান্তবাবু মাঠে গিয়ে বৃদ্ধার রূপে দেবী দুর্গার দেখা পান। তিনি পুজো শুরু করার নির্দেশ দেন। জানিয়ে যান, এ বার থেকে আর ধান নষ্ট হবে না। ৫০০ বছর আগের সেই ঘটনার পর থেকে এ বাড়িতে পুজোর শুরু। শুধু প্রাচীনত্বেই নয়। বুড়ি দুর্গার পুজোয় রয়েছে নানা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এখানে দেবীর বা দিকে গনেশ, ডান দিকে কার্তিকের মূর্তি থাকে। লক্ষ্মী, সরস্বতীর মূর্তি অবশ্য অন্যান্য মণ্ডপের মতোই থাকে। মহিষাসুরের বদলে রয়েছে অসুরের মূর্তি। ভোগেও রয়েছে বিশেষত্ব। কারন (মদ) দিয়ে তৈরি ভোগ দেবীকে নিবেদন করা হয়। দশমীর দিনে হয় মহাভোজ। পাত পেড়ে প্রসাদ গ্রহণ করেন ৫০০-র বেশি লোক। সপ্তমীর দিন বড়পুকুর থেকে কলাবৌ স্নান করিয়ে পাল্কিতে করে মন্দিরে আনা হয়। বিসর্জনও হয় পাল্কিতে চড়েই। কাহাররা পাল্কিতে করে দেবীকে বিসর্জন দেন।
কালীপুজোর জন্য মৌতোড়ের বিশেষ পরিচিতি এলাকায় থাকলেও বুড়ি দুর্গার পরিচিতও কম নয়। বর্তমানে গৌরীকান্তবাবুর তিন ছেলে, এক মেয়ের বংশধরেরা পর্যায়ক্রমে পুজো করেন। ভগ্নপ্রায় হয়ে পড়া মন্দির সংরক্ষণে তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের গলায় তবুও আক্ষেপ, “আগে মন্দিরের গায়ে রাম-রাবনের যুদ্ধের নকশা ছিল। সে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” নকশা হারিয়ে গেলেও এই পুজোর লোককথা বাসিন্দাদের মনে আজও রয়ে গিয়েছে। |