আবাহনে জেগে
ওঠে তিনশো বছর
দুর্গাপুজো এখানে শুধু বাঙালির বিশেষ আচার-সংস্কৃতিই নয়। কীর্ণাহারের সরকার-বাড়ির দুর্গাপুজো মানে এক অর্থে অতীতকে ফিরে পাওয়াও। আর সেই অতীত কিন্তু, এক দু’দিনের নয়। পাক্কা সাড়ে তিনশো বছরের!
কারণ, কথিত আছে আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে দেবী চামুণ্ডার আর্শিবাদে জমিদারি পেয়েছিলেন কীর্ণাহারের প্রয়াত কিশোরকুমার সরকার। পেয়েছিলেন পুজো প্রচলনের স্বপ্নাদেশও। স্বপ্নে দেখা সেই দেবীমূর্তির আদলে প্রতিমা তৈরি করে শুরু হয়েছিল পুজো। ওই পুজোই এলাকায় সরকারবাড়ির দুর্গাপুজো নামে পরিচিত।
জমিদারি গিয়েছে বহু দিন। কিন্তু তাতে কী? আভিজাত্যে এখনও নিজের ঘরানা ধরে রেখেছে সরকার-বাড়ির পুজো।
এই পুজোর অভিনবত্ব এর প্রতিমায়। ওই প্রতিমা তৈরি করা হয়েছিল স্বপ্নে দেখা দেবীর রূপকে মাথায় রেখেই। দেবীর দুটি হাত স্বাভাবিক হলেও বাকি হাতগুলি ছিল ক্ষুদ্র। দেবীর বাহন ছিল নরসিংহ। যার মুখ ছিল ঘোড়ার মতো এবং শরীর সিংহের মতো। দেবী ছাড়া বাহন ছিল একমাত্র কার্তিকের। স্বপ্নে দেখা সেই দেবীমূর্তির প্রতিমাই আজও পূজিত হয় এই সরকার-বাড়িতে।
ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।
এখানকার পুজোর উপকরণেও রয়েছে স্বকীয়তা। পুজো হয় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো প্রাচীন তালপাতার পুঁথিতে। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত নেভে না হোমের আগুন। ভোগের মেনুতে ভাত, ডাল, ভাজাভুজি, পায়েসের সঙ্গে থাকে কচু ডাঁটার শাক, মাছের টক, মটর কলাইয়ের তরকারি থেকে আমড়ার চাটনি। আগে প্রতিমা তৈরি, পুজো, ফুল সংগ্রহ প্রভৃতি কাজের জন্য সেবক রাখা হত। তাঁদের পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া হত জমি। সেই জমিতেই বংশ পরম্পরায় চাষ-আবাদ করছেন সেবকদের বর্তমান প্রজন্ম। তাঁরা এখনও সরকারবাড়ির পুজোর সঙ্গে জড়িত।
আজকের বিলুপ্ত প্রায় একান্নবর্তী পরিবার-ব্যবস্থার যুগে দুর্গাপুজো ঘিরেই মিলনের সুখকর পরিবেশ তৈরি হয় ঐতিহ্যবাহী পরিবারিক পুজোগুলিতে। সরকার-বাড়িও তার ব্যতিক্রমী নয়। বাড়ির বর্তমান প্রজন্ম কাজের সূত্রে থাকেন বিভিন্ন জায়গায়। পরস্পরের থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন। কিন্তু পুজোর সময় ঠিক সম্মিলিত হয় এখন তিনভাগে বিভক্ত সরকার বাড়ি।
সরকার-বাড়ির প্রবীনতম সদস্যদের অন্যতম সুখশঙ্কর সরকার, প্রিয়া সরকার, সুশীলকুমার সরকার ও প্রদীপ সরকারেরা বলেন, “সারা বছর নানা কারণে আলাদা থাকতে হয়। তাই তাকিয়ে থাকি পুজোর এই দশটা দিনের জন্য। এই সময় আমরা সবাই একসঙ্গে হই। দেদার আড্ডা আর খাওয়া-দাওয়া চলে। এক অর্থে ওই ক’টা দিন আমাদের পুরনোকে ফিরে পাওয়ার দিন।”
এই দুর্গাপুজোর তাৎপর্য তাই শুধু মাত্র পুজোর নির্দিষ্ট কিছু আচারের মধ্যই সীমাবদ্ধ নয়, তার বাইরেও অনেক কিছু নতুন আর পুরাতনের এক ভিন্ন সমাপতন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.