ঐতিহ্যবাহী ভবনে অফিস খোলার উদ্যোগে ক্ষোভ
তিহ্যবাহী ‘এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হলে’ এ বার কনস্ট্রাকশন বোর্ডের অফিস খুলতে চলেছে পূর্ত দফতর। সভাঘরের ভিতরে শৌচাগার তৈরির জন্য ইট-সিমেন্টের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। নানা গুনীজনের স্মৃতিধন্য শতাব্দী প্রাচীন এই ভবনকে ভগ্নদশা থেকে উদ্ধার করে জনগণের কাছে খুলে দেওয়ার জন্য এত দিন আন্দোলন করা বাঁকুড়ার সংস্কৃতি প্রেমী বাসিন্দারা এই সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। আঁচ পেয়ে বুধবার হলটি পরিদর্শন করেন বাঁকুড়ার তৃণমূল বিধায়ক মিনতি মিশ্র। তিনিও প্রশাসনের এই সিদ্ধন্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এক সময় বিভিন্ন সভা, অনুষ্ঠান হওয়া শতাব্দী প্রাচীন এই হলটি দীর্ঘদিন ধরে বেদখল হয়ে ছিল। স্থানীয় কিছু সংগঠনের আন্দোলেন প্রশাসন নড়েচড়ে বসায় গত কয়েক বছরে এই হল পুরনো শ্রী ফিরে পায়। সংগঠনগুলির আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে বছর তিনেক আগে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন এডওয়ার্ড হলকে ঐতিহ্যবাহী ভবনের স্বীকৃতি দেয়। রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর এবং জেলা পরিষদের অর্থ সাহায্যে পূর্ত দফতরের মালিকানাধীন এই হলের সংস্কার হয়। সংগঠনগুলির আন্দোলনের শুরুতেই দাবি করেছিল, হলটিকে সংস্কার করে জনসাধারণের কাছে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
ভবনের দেওয়াল ভেঙে তৈরি হচ্ছে শৌচাগার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
সংস্কারের কাজ শেষে সেই দাবি পূরণের আশা করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। বাঁকুড়ার সংস্কৃতিপ্রেমী বাসিন্দাদেরও তেমনই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সংস্কারের পরেও হলটি অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দিতে পূর্ত দফতর উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ। উল্টে মাসখানেক আগে ওই হলটিতে সরকারি অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নেয় পূর্ত দফতর। ১৯২২ সালের সিএস রেকর্ড অনুযায়ী ওই হলের মালিকানা রয়েছে পূর্ত দফতরের নামে। পূর্ত দফতরের বাঁকুড়ার নিবার্হী আধিকারিক তপন মণ্ডল বলেন, “আমার পূর্বতন নিবার্হী বাস্তুকার হলটির মালিকানা পূর্ত দফতরের কনস্ট্রাকশন বোর্ডকে হস্তান্তর করেছে।” বাঁকুড়ায় পূর্ত দফতরের কনস্ট্রাকশন বোর্ডের নিবার্হী বাস্তুকার নারায়ণচন্দ্র পাল বলেন, “এতদিন আমাদের দফতরের নিজস্ব বাড়ি ছিল না। বাঁকুড়া শহরের প্রতাপবাগান এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে আমাদের দফতর চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এডওয়ার্ড হলে আমাদের দফতর স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে। ওখানেই আমাদের নতুন অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনও আপত্তি তোলেনি বলে তিনি জানিয়েছেন।
প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে সংস্কৃতিপ্রেমীদের মনে। হলের ব্যাপারে এতদিন আন্দোলন করে যাওয়া বাঁকুড়া শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সমাজ, ভারতীয় সংস্কৃতি মঞ্চ ও পেন্টার্স ফোরামের তরফে জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পূর্ত দফতর ওই হলে একটি অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে সংস্কৃতিপ্রেমীদের ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছে।” তাঁর দাবি, “হেরিটেজ কমিশন স্থাপত্যগত ও সংস্কৃতিগত দিকটি বিচার করেই এটিকে ঐতিহ্যবাহী ভবনের তালিকা ভুক্ত করেছে। অথচ, পাথরকুচি, রড ও সিমেন্ট ব্যবহার করে ওই হলে শৌচাগার নির্মাণের কাজ চলছে। হলের মূল গঠনেরও পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ সবই হেরিটেজ কমিশনের আইন বিরুদ্ধ। ওই হলের দু’পাশের জমি নিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছে। তাই অফিস তৈরির সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য পূর্ত দফতরকে লিখিত ভাবে আমরা জানিয়েছি।”
এক সময়ে টাউন হল হিসেবে ব্যবহৃত এই হল বাঁকুড়াবাসীর কাছে সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বাংলার সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করার দিকে নজর দিচ্ছেন, তখন এই প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রে সরকারি দফতর বসানোর সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাঁকুড়ার বাসিন্দারা। বাঁকুড়ার বিধায়ক মিনতি মিশ্রও বলেন, “এডওয়ার্ড হলের মতো ঐতিহ্যবাহী হলে সরকারি অফিস চালু করার সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। জেলাশাসককে বিষয়টি দেখতে অনুরোধ করেছি।” জেলা শাসক বিজয় ভারতী বলেন, “এডওয়ার্ড হলটি আগে পূর্ত দফতরের মালিকানাধীন ছিল। কিন্তু চলতি বছরেই ওই দফতর তাদেরই কনস্ট্রাকশন বোর্ডের হাতে ভবনটির মালিকানা তুলে দিয়েছে। মিনতিদেবীর কাছে শুনেছি, সেখানে কমস্ট্রাকশন বোর্ড অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কে এই অনুমতি দিয়েছে আমার জানা নেই। পূর্ত দফতরের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনায় করব।’’

এডওয়ার্ড হল যখন যেমন
১৯১০ রাজা অ্যালবার্ট এডওয়ার্ডের (সপ্তম) মৃত্যু।
বাঁকুড়ায় এডওয়ার্ড হল নির্মাণের জন্য ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ।
১৯১১ এডওয়ার্ড হলের উদ্বোধন। পরে বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায় থেকে ইন্দিরা গাঁধী, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ ব্যক্তিত্ব আসেন।
১৯৮০ অনুষ্ঠান বন্ধ। হলের ভগ্নদশাপ্রাপ্তি।
২০০৬ ফের হল খোলার দাবিতে আন্দোলন শুরু।
২০০৭ হল দখলমুক্ত।
২০০৮ সংস্কারের পরিকল্পনা তৈরি করতে নির্দেশ তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের।
২০০৯ ঐতিহ্যবাহী ভবনের স্বীকৃতি লাভ।
২০১০ মহাকরণে মন্ত্রীর বৈঠক। সংস্কার শুরু।
২০১২ পূর্ত দফতরের কনস্ট্রাকশন বোর্ডকে হলটি অফিস করার অনুমতি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.