ঢাকে কাঠি...
থিমে হারানো শৈশবের খোঁজ, বিবেকের বাণী
হরের আকাশে এখন আর ঘুড়ির দেখা মেলে না। ভাদ্রের অলস দুপুরে ভেসে আসে না ভোকাট্টা আওয়াজ। মাঠে-ঘাটে কাদা পায়ের ফুটবল বা ধুলোমাখা ক্রিকেটও উধাও। আর এ সবের সঙ্গেই সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পাড়ার টুবুন-বাবাইরা। নানা ধরনের থিমের ভিড়ে এ বার হারানো শৈশব-কৈশোরকেই তুলে ধরছেন তিলজলা ‘মিলন তীর্থ’ ক্লাবের পুজোকর্তারা।
ছাদে ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো বা মাঠে-ঘাটে খেলে বেড়ানো টুবুন-বাবাইরা শুধু পাড়া সংস্কৃতির ধারক-বাহক ছিল না। স্কুল-কলেজ থেকে বাড়িমুখো কিশোরী বা সদ্য তরুণীরাও ছিল ওই ছেলেদের গুণগ্রাহী। এক পলকের একটু দেখার সেই মাধুর্যটাও যেন এখন হারিয়ে গিয়েছে কোন ফাঁকে। তিলজলার ওই পুজোকমিটির কর্তারা বলছেন, টুবুন-বাবাইদের ফেলে আসা শৈশব-কৈশোরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতেই তাঁদের এই থিম। মণ্ডপ সেজে উঠছে ঘুড়ি-লাটাই, পুতুল, মুখোশ, ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে। তৈরি করছেন সদ্য তারুণ্যে পা দেওয়া শিল্পী প্রসেনজিৎ।
বাঙালির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। আর কবির ‘তাসের দেশ’ কে না পড়েছে? এ বারে সেই তাসের দেশ ও জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িকে মিলিয়ে থিমের রূপ দিয়েছেন ‘ভবানীপুর স্বাধীন সঙ্ঘ’-এর শিল্পী কিংশুক সরকার। মণ্ডপের মূল দরজা তৈরি করা হচ্ছে ঠাকুরবাড়ির ঠাকুরদালানের অনুকরণে। সঙ্গে মানানসই প্রতিমা। মণ্ডপের ভিতরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তাসের দেশের নানা দৃশ্য। উদ্যোক্তাদের আশা, এ বার এই নতুন ধরনের থিম দক্ষিণ কলকাতার অনেক পুজোকেই টেক্কা দেবে।
স্বামী বিবেকানন্দের ‘বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর’ এই বাণীকে নতুন রূপে তুলে ধরছে নিউ আলিপুরের ‘প্রোগ্রেসিভ হিন্দুস্থান ক্লাব’। শিল্পী অমিত হাজরা সেখানে গাছকে বেছে নিয়েছেন থিমের উপকরণ হিসেবে। একটা গাছ, তার নানা অঙ্গ, নানা রূপ, নানা কাজ এ ভাবেই থিমকে তুলে ধরছেন অমিত। পুজো উদ্যোক্তারা বলছেন, শুধু তাত্ত্বিক থিম নয়, গাছকে ব্যবহার করার অন্যতম কারণ পরিবেশ রক্ষায় গাছ এবং উদ্ভিদজাত পদার্থের ভূমিকাকেও তুলে ধরা।
কালীঘাট ব্যায়ামাগারের পুজোয় এ বার নিয়ে আসা হয়েছে যামিনী রায়ের শিল্পকলাকে। শিল্পীর এ বার ১২৫তম জন্মবার্ষিকী। তাই মণ্ডপ সাজছে যামিনী রায়ের চিত্রকলায়। থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিমা গড়ছেন শিরীষ পাল।
পাঁকে যেমন পদ্ম জন্মায়, তেমনই অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের থেকে উঠে আসেন নানা প্রতিভাধর গুণী মানুষ। এই কথাকে মাথায় রেখেই ভবানীপুরের গোলমাঠ দুর্গাপুজো কমিটি তাদের থিম তৈরি করেছেন। মণ্ডপ হচ্ছে পদ্মফুলের আদলে। তৈরি করছেন তপন মাজি। প্রতিমা গড়ছেন কৃষ্ণনগরের শিল্পী কানাই পাল। ডোভার টেরাসের ‘রামকৃষ্ণ সেবক সমিতি’ তাদের মণ্ডপে তুলে ধরছে বিষ্ণুপুরের গ্রাম-বাংলাকে। নানা মাপের কাঠের মূর্তি দিয়ে সাজানো হচ্ছে মণ্ডপ।
‘বেলতলা সঙ্ঘ’-এর এ বারের পুজো মণ্ডপে বাংলার সংস্কৃতির নানা টুকরো ছবি উঠে আসবে। সপ্তমীতে থাকছে মনোবিকাশ কেন্দ্রের পড়ুয়াদের যন্ত্রসঙ্গীত ও বাউল গান। অষ্টমীতে টিভি তারকা, নবমীতে ছৌ-নাচের পরে দশমীতে শেষ হবে বাংলা ব্যান্ডে।
‘টালিগঞ্জ আদি বারোয়ারি’ অবশ্য এ বার দূষণমুক্ত পৃথিবীকেই তাদের থিম হিসেবে তুলে ধরছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, শিল্পায়নের নামে হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। দূষিত হচ্ছে জল। তাই পৃথিবী রক্ষার বার্তা দিতে শিল্পী সমর ঘোষের তুলি ও কোলাজের কাজ দিয়ে সেজে উঠছে তাদের মণ্ডপ।
এক সময়ে লাল লঙ্কার মণ্ডপ গড়ে শহরবাসীকে চমকে দিয়েছিল বোসপুকুরের ‘পারিজাত ক্লাব’। এ বার তারা তুলে ধরছে সমাজে হিংসা-হানাহানি, নৈতিক মূল্যবোধের অভাবের মতো বিষয়কে। তা থেকে মানুষকে মুক্তির পথ দেখাতে থিম, ‘ভব সৈকতে ভবানী’। ভব অর্থাৎ শিব এবং ভবানী, মা দুর্গার মিলিত প্রয়াসে বারবার আসুরিক শক্তির বিনাশ হয়েছে। এ বারেও তেমনটাই চাইছেন পুজো-কর্তারা। প্রস্তুতি দেখে মনে হতেই পারে, বোসপুকুরের ভিড়টা এ বার আরও কিছুটা বেড়ে যাবে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.