|
|
|
|
|
অতন্দ্র প্রহরা |
শরীর-মনের জোর, কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা এই পেশার শর্ত।
কারণ দেশের জন্য জীবন বাজি এখানে। লিখছেন কৌলিক ঘোষ। |
চেনা পথের বাইরে বেরনোর সাহস থাকলে প্রতিরক্ষায় পেশার কথা ভাবা যেতেই পারে। যেখানে সফল হওয়ার প্রধান শর্তই হল চরম শৃঙ্খলাবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, জেদ, শারীরিক আর মানসিক জোর। যেখানে উত্তেজনার মুখে মাথা ঠান্ডা রাখতে না পারলে হারাতে হতে পারে জীবনও। অথচ সাহস, সততা আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করলে প্রাপ্য গোটা দেশের কুর্নিশ। যে কাজে অর্থের পাশাপাশি খুঁজে পাওয়া যায় জীবনের চরম সার্থকতাও। বহু খুঁজলেও যা পাওয়া কঠিন অন্য অনেক পেশাতেই। |
|
কাজেই এমন একটি ক্ষেত্রকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুতি তো শুরু করে দিতে হয় বহু আগে থেকেই। পাশাপাশি ছকে নিতে হয় এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাগুলিকেও। ইউপিএসসি অর্থাৎ ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন আয়োজন করে দু’ধরনের পরীক্ষা। একটি হল, কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিসেস এগজামিনেশন। আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স-সহ ডিফেন্সে অন্যান্য আধিকারিক পদে নিযুক্ত করা হয় এই পরীক্ষার মাধ্যমে। দ্বিতীয়টি হল, সেন্ট্রাল পুলিশ অর্গানাইজেশনের বিভিন্ন বিভাগে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ড্যান্ট হওয়ার পরীক্ষা। পরীক্ষা দু’টি দিতে পারবেন যে কোনও বিষয়ে স্নাতকরাই। কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকলেও, এখন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের অনেকগুলি পরীক্ষা দিতে পারেন মহিলারাও।
|
কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিসেস এগজামিনেশন বা সিডিএস পরীক্ষাটি আবার বছরে দু’বার নেয় ইউপিএসসি। ফেব্রুয়ারি ও সেপ্টেম্বরে। প্রতি বছর প্রায় হাজার খানেক প্রার্থীকে বেছে নেওয়া হয়। যেমন, শেষ যে সিডিএস পরীক্ষাটি হল গত সেপ্টেম্বরে, সেটিতে ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমির জন্য ২৫০টি, ইন্ডিয়ান নেভাল অ্যাকাডেমির জন্য ৪০টি, এয়ারফোর্স অ্যাকাডেমির জন্য ৩২টি, অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমি (ওটিএ)-র জন্য পুরুষ-মহিলা মিলিয়ে ১৯০টি শূন্যপদ ছিল।
যোগ্য কারা: আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স এবং অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমি-র জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়। আর্মি এবং অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমির জন্য যে কোনও বিষয়ে স্নাতক হতে হবে। যে কোনও বিষয়ে স্নাতক হতে হবে এয়ারফোর্স অ্যাকাডেমির জন্যও। তবে এ ক্ষেত্রে ১০+২ স্তরে পদার্থবিজ্ঞান এবং অঙ্ক থাকা জরুরি। ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতকরাও আবেদন করার যোগ্য। অন্য দিকে, ইন্ডিয়ান নেভাল অ্যাকাডেমির জন্য যে কোনও বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক হতে হবে। প্রসঙ্গত, মহিলারা অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমির (নন-টেকনিক্যাল) জন্য আবেদন করতে পারেন। |
|
পরীক্ষার ধরন: আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স এবং ওটিএ-র পরীক্ষার ক্ষেত্রেও কিছু তারতম্য রয়েছে। যেমন, আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্সের জন্য দিতে হয় ৩০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা। ছ’ঘণ্টার পরীক্ষায় থাকে তিনটি বিষয়। ইংরাজি, সাধারণ জ্ঞান এবং এলিমেন্টারি ম্যাথমেটিক্স। আর ওটিএ-র জন্য ২০০ নম্বর বরাদ্দ, চার ঘণ্টার পরীক্ষা। দিতে হয় শুধু ইংরাজি এবং সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নের উত্তর।
লিখিত পরীক্ষায় সফলদের ডাকা হয় সার্ভিস সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) ইন্টারভিউয়ের জন্য। সেখানে পাঁচ দিনব্যাপী নানা ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয় প্রার্থীর মানসিক এবং শারীরিক সক্ষমতা। প্রার্থীর ইন্টেলিজেন্স টেস্ট, সাইকোলজিক্যাল টেস্ট, গ্রুপ টেস্ট (অর্থাৎ দলবদ্ধ ভাবে কাজ করার দক্ষতা এবং নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা) এর অঙ্গ।
|
ইউপিএসসি প্রত্যেক বছর সেন্ট্রাল পুলিশ ফোর্সেস-এ অ্যাসিস্টান্ট কমান্ড্যান্টস নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নিয়ে বিএসএফ, সিআরপিএফ, সিআইএসএফ, আইটিবিপি বা সশস্ত্র সেনাবলে নিয়োগ করে। বছরে একবারই হয়। আগামী ১১ই নভেম্বর ২০১২-তে যে-পরীক্ষাটি নেওয়া হবে, সেটির মাধ্যমে প্রায় ৪০১ জন কমান্ড্যান্টকে নিয়োগ করা হবে বলে ইউপিএসসি সূত্রের খবর।
যোগ্য কারা: যে-কোনও স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১০+২+৩ উত্তীর্ণরাই এই পরীক্ষায় বসার জন্য যোগ্য। তবে প্রার্থীর ওজন এবং উচ্চতা নির্দিষ্ট চাহিদা মাফিক হতে হবে। মহিলা প্রার্থীরা সিআরপিএফ, সিআইএসএফ এবং সশস্ত্র সেনাবলে যোগ দিতে পারেন।
পরীক্ষার ধরন: লিখিত পরীক্ষায় থাকে দু’টি পত্র। প্রথমটিতে ২৫০ নম্বরের জেনারেল এবিলিটি অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স। অবজেকটিভ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় দু’ঘণ্টা। প্রশ্ন থাকে জেনারেল মেন্টাল এবিলিটি, জেনারেল সায়েন্স, সাম্প্রতিক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি, ভারতের রাজনীতি এবং অর্থনীতি, ভারতের ইতিহাস এবং ভারত তথা বিশ্বের ভূগোলের উপর।
দ্বিতীয় পত্রে তিন ঘন্টায় ২০০ নম্বরের উত্তর দিতে হয়। থাকে জেনারেল স্টাডিজ, ইংরাজি রচনা এবং কম্প্রিহেনশন। ইউপিএসসি নির্ধারিত ন্যূনতম নম্বর প্রথম পত্রে পেলে তবেই দ্বিতীয় পত্রের মূল্যায়ন করা হয়।
লিখিত পরীক্ষায় পাশ করলে, পরের ধাপ ফিজিক্যাল এফিসিয়েন্সি টেস্ট অর্থাৎ পেট। প্রার্থীদের শারীরিক দক্ষতা যাচাই করা হয় এই পর্বে। এ ক্ষেত্রে ১০০ মিটার দৌড়, ৮০০ মিটার দৌড় এবং লং জাম্প দিতে হয় প্রার্থীদের।
ফিজিক্যাল এফিসিয়েন্সি টেস্ট-এর বাধা টপকালে ইন্টারভিউ বা পার্সোনালিটি টেস্ট। এর জন্য বরাদ্দ থাকে ১৫০ নম্বর। লিখিত পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউ-এ প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে প্রকাশ করা হয় চূড়ান্ত মেধা তালিকা। অর্থাৎ এই পরীক্ষার সব মিলিয়ে তিনটি ধাপ। লিখিত পরীক্ষা, পেট এবং ইন্টারভিউ।
|
মিসলেনিয়াস পরীক্ষা সামনে |
সামনেই মিসলেনিয়াস সার্ভিসেস রিক্রুটমেন্ট পরীক্ষা। রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশন আয়োজিত সরকারি চাকরির পরীক্ষা এটি। আবেদন পত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ হল পুজোর ঠিক আগে, ১৯ অক্টোবর। |
|
যোগ্য কারা |
২০ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে বয়সীরা এই পরীক্ষাতে বসার যোগ্য। তফসিলি জাতি এবং উপজাতিদের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতম বয়সসীমার ক্ষেত্রে ৫ বছরের শিথিলতা রয়েছে। অনগ্রসর শ্রেণির ক্ষেত্রে তিন বছরের শিথিলতা। শিক্ষাগত দিক দিয়ে যে কোনও বিষয়ে স্নাতক হলেই পরীক্ষাতে বসা যাবে।
|
কোন কোন পদে নিয়োগের জন্য |
এই পরীক্ষার মাধ্যমে রাজ্য সরকারি যে সমস্ত পদগুলিতে চাকরির সুযোগ পাওয়া যায় সেগুলি হলঅ্যাসিস্ট্যান্ট চাইল্ড ডেভলপমেন্ট অফিসার, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অফিসার, ব্লক এবং মিউনিসিপ্যাল ইউথ অফিসার বা বোরো ইউথ অফিসার, সাব ইনস্পেক্টর অফ এক্সাইজ, ওয়েলফেয়ার অফিসার, ইনস্পেক্টর (অনগ্রসর শ্রেণির ওয়েলফেয়ারের জন্য), অ্যাসিস্ট্যান্ট এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং অফিসার, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম অফিসার, কন্ট্রোলার অফ কারেকশনাল সার্ভিসেস, ইনস্পেক্টর অফ এগ্রিকালচারাল ইনকাম ট্যাক্স, কনজিউমার ওয়েলফেয়ার অফিসার, সেভিং ডেভেলপমেন্ট অফিসার, সাব-অর্ডিনেট লেবার সার্ভিসে বিভিন্ন পদ-এ, অডিটর বোর্ড অফ রেভিনিউ, এক্সটেশন অফিসার (মাস এডুকেশন এক্সটেশন), লেডি এক্সটেশন অফিসার (মাস এডুকেশন এক্সটেশন), অ্যাসিস্ট্যান্ট কন্ট্রোলার অফ কারেকশনাল সার্ভিসেস, ইনভেস্টিগেটিং ইনস্পেক্টর।
|
পরীক্ষার ধরন-ধারণ |
‘মিসলেনিয়াস সার্ভিসেস’ পরীক্ষাটির লিখিত ভাগটি আবার দু’ভাগে বিভক্ত বলে জানালেন জর্জ স্কুল অফ কম্পিটেটিভ এগজামিনেশনের অন্যতম অধিকর্তা হরনাথ দাস। তাঁর মতে, প্রিলিমিনারি ও ফাইনাল এই দুই পর্বে প্রশ্নের মধ্যে বিস্তর ফারাক। এর জন্য দীর্ঘদিনের অনুশীলন জরুরি। প্রিলিমিনারি পরীক্ষাটি পুরোপুরি অবজেকটিভ। ২০০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। ১৫০ নম্বর জেনারেল স্টাডিজ, ৫০ নম্বরের পাটিগণিত। ৯০ মিনিটের মধ্যে ২০০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।
প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণরাই ফাইনাল বা চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে পারেন। মোট পরীক্ষা ৪৫০ নম্বরের। প্রথম পত্র ১৫০ নম্বরের ইংরেজি, দ্বিতীয় পত্র ১৫০ নম্বরের বাংলা। প্রথম এবং দ্বিতীয় পত্রের জন্য বরাদ্দ সময় ৯০ মিনিট। তৃতীয় পত্রটিও ১৫০ নম্বরের। যার ১০০ নম্বর সাধারণ জ্ঞান এবং ৫০ নম্বর পাটিগণিত থাকে। তৃতীয় পত্রের জন্য আড়াই ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। ফাইনাল পরীক্ষাটি কিন্তু পুরোপুরি রচনাত্মক। এক দিনেই তিনটি পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ফাইনালে উত্তীর্ণদের ডাকা হয় ইন্টারভিউয়ের জন্য। বরাদ্দ ১০০ নম্বর। ফাইনাল পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ-এ প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে চূড়ান্ত মেধা তালিকা প্রস্তুত করা হয়। হরনাথবাবুর মতে, প্রিলিমিনারিতে পাশ করে ফাইনাল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করব, এই মানসিকতা রাখা উচিত নয়। কারণ, প্রিলিমিনারি মার্চ মাসে হওয়ার পর ফাইনাল পরীক্ষাটি হয় সেপ্টেম্বরে। প্রিলিমিনারির রেজাল্ট বেরোনোর পর ফাইনালে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার খুব কম সময় থাকে।
|
আপনার প্রশ্ন
বিশেষজ্ঞের উত্তর |
|
|
|
প্রশ্ন: ইংরেজি অর্নাসের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। মিসলেনিয়াস সার্ভিসেস পরীক্ষার মাধ্যমে কোন কোন সরকারি পদে চাকরি পাওয়া যায় এবং এই পরীক্ষায় বসার শিক্ষাগত যোগ্যতা জানতে চাই।
সত্যম রায়, কালনা
উত্তর: আগের পাতাতেই মিসলেনিয়াস পরীক্ষা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আশা করি এ বিষয়ে আপনার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর সেখানেই পেয়ে গিয়েছেন। |
|
|
|
|
|