প্ররোচনা, ধৃত বাগান মালিক
পানশালার গায়িকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার
পানশালার গায়িকা দময়ন্তী কাউল (২১)-কে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে এক চা বাগানের মালিককে গ্রেফতার করল শিলিগুড়ি কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ। শনিবার রাতে শিলিগুড়ির পাঞ্জাবীপাড়ায় অভিযুক্তের বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দা বিভাগের অফিসাররা। ধৃতের নাম সঞ্জীব অগ্রবাল। তাঁর কোচবিহারের জামালদহে একটি চা বাগান রয়েছে। দময়ন্তীর মৃত্যুর দু’দিন আগে ওই চা বাগান মালিক তাঁকে ধর্ষণ করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে ভক্তিনগরের থানার তিন পুলিশ অফিসারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এঁদের মধ্যে একজনকে বদলি করা হলেও বাকি দু’জন ওই থানাতেই রয়েছেন। শিলিগুড়ির ডেপুটি কমিশনার ও জি পাল বলেন, “ওই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব ২৮ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা দফতরকে দেওয়া হয়। তারা খুব কমদিনের মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছেন। ধৃতের সঙ্গে গায়িকার সম্পর্ক ছিল। সে অভিযোগ স্বীকার করেছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, গত ৯ সপ্টেম্বর ভক্তিনগরের জ্যোতিনগরের ভাড়া বাড়িতে নিজের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় দময়ন্তী কাউলকে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পুলিশ জানতে পারে, মৃত্যুর তিনদিন আগে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। তার পরেই সে আত্মহত্যা করে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশ একটি ধর্ষণ ও আত্মহত্যার মামলা রুজু করে। অভিযোগ, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় তাঁর মোবাইল ফোনটি সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকী যে ৯ জন সেখানে ভাড়া থাকতেন তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দু’জন পুলিশ অফিসারকে ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় ভক্তিনগর থানার ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা দফতরের হাতে মামলার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। গোয়েন্দা দফতরের এসিপি পিনাকী মজুমদারের নেতৃত্বে তদন্ত শুরু হয়। ধীরে ধীরে রহস্যের জট খোলে। গোয়েন্দা দফতরের অফিসাররা তদন্তে নেমেই পানশালা কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেখান থেকেই তাঁরা দময়ন্তীর মোবাইল ফোন নম্বর এবং ওই ভাড়া বাড়িতে আরও কারা থাকতেন তার তালিকা সংগ্রহ করেন। দময়ন্তীর ফোন নম্বর ঘেঁটে তদনন্তকারী অফিসাররা জানতে পারেন, মৃত্যুর আগের দিন ৮ সেপ্টেম্বর দময়ন্তী তাঁর মোবাইল থেকে পাঞ্জাবী পাড়ার ওই চা বাগান মালিক এবং তাঁর স্ত্রীকে ৫০ টির উপরে ‘কল’ করেছেন। ২৬টি এসএমএস করেছেন। সে সময় দু’জনের মোবাইল ‘সুইচ অফ’ ছিল। এর পরেই ওই বাড়িতে অন্য যারা ভাড়া ছিলেন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় পুলিশের কাছে। তদন্তকারী অফিসাররা জানতে পারেন, বছর দেড়েক আগে অসমের শোনিতপুরের তরুণী দময়ন্তী পানশালার গায়িকার কাজ নিয়ে শিলিগুড়িতে আসেন। সে সময় সেবক রোডের একটি পানশালায় তিনি কাজ করতেন। তখন থেকেই সঞ্জীব অগ্রবালের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক হয়। ধীরে ধীরে সে সম্পর্ক গাঢ় হয়। পরে শালুগাড়ার একটি পানশালায় কাজ নেন দময়ন্তী। কিন্তু তাঁদের দু’জনের সম্পর্ক একইরকম ছিল। দু’জনেই দু’জনের বাড়িতে যাতায়াত করতেন। অভিযোগ, দময়ন্তীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিক বার ধর্ষণ করেছেন অভিযুক্ত। গত ৯ সেপ্টেম্বর ব্যক্তিগত কাজে মুম্বইয়ে যাওয়ার কথা ছিল দময়ন্তীর। পুলিশের সন্দেহ, তাঁর আগেই সিঁদুর পড়িয়ে দময়ন্তীকে বিয়ে করেন সঞ্জীব। ৮ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁর সঙ্গে একই বাড়িতে থাকার কথা ছিল সঞ্জীবের। ওইদিনই তিনি সম্পর্ক রাখতে পারবেন না বলে দময়ন্তীকে জানান। তাঁর পরেই মোবাইল ‘সুইচ অফ’ করে দেন। একাধিক বার ফোন, এসএমএস করেও তাঁকে না পেয়ে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ অভিযুক্তের বাড়ির দিকে রওনা হন দময়ন্তী। সঙ্গীদের বাধায় তিনি ভাড়া বাড়িতে ফিরে যান। বিধান রোডের ব্যবসায়ী সঞ্জীবের এক বন্ধুকে গোটা বিষয়টি জানান তিনি। তাতেও কোনও সাড়া না পেয়ে সকালে আত্মহত্যা করেন দময়ন্তী। ঘটনার তদন্ত নিয়ে সেই সময়ের ভক্তিনগর থানার ওসি সুবীর কর্মকার এবং দু’জন পুলিশ অফিসারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সুবীরবাবুকে বদলি করা দেওয়া হলেও বাকি দুই অফিসারের বিরুদ্ধে কী কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হল না তা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.