ভরা সভায় মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধলেন সুশান্ত
দাসেরবাঁধ কঙ্কাল-কাণ্ডে জামিনের সাত মাস পরে প্রথম প্রকাশ্য সভায় প্রবল ভিড়ের সামনে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন সুশান্ত ঘোষ।
রবিবার ভাঙড়-১ ব্লকের চন্দনেশ্বরে ওই জনসভায় সুশান্তবাবু যেমন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তাঁকে মিথ্যা মামলায় জেলে ভরার অভিযোগ তুলেছেন, তেমনই মুখ্যমন্ত্রীকে ‘মিথ্যাবাদী’ ও ‘ধাপ্পাবাজ’ হিসেবে প্রতিপন্ন করারও চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি যেমন তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব নিয়ে কটাক্ষ করেছেন, তেমনই আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দল জোর ধাক্কা খাবে বলে তাঁর প্রত্যয়ের কথাও ঘোষণা করেছেন।
রাজ্যে পালাবদলের পরেই প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে কঙ্কাল-কাণ্ডে নতুন করে মামলা করেছিল তৃণমূল। সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। মামলা চলাকালীন আদালতে যাতায়াতের সময়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে সুশান্তবাবু একাধিক বার দাবি করেছিলেন, রাজ্য সরকার তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। কিন্তু প্রকাশ্য সভায় হাজার দশেক মানুষের (পুলিশের হিসেবে) সামনে তাঁর ওই দাবি এই প্রথম।
ভাঙড়ের সভায় সুশান্ত ঘোষ ও রেজ্জাক মোল্লা। রবিবার। ছবি: সামসুল হুদা
পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবে আয়োজিত এ দিনের সভার প্রধান বক্তাই ছিলেন সুশান্তবাবু। তিনি বলেন, “২০০১ সালে উনি (মমতা) আমার জন্যই নাকি মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি। সেই আক্রোশই আমার উপরে মেটানোর চেষ্টা করেছেন! তার কারণ, এই সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করে সন্ত্রাস করবে।” তাঁর হুঁশিয়ারি, “এখন কোনও বামপন্থী নেতাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হলে বলব, আমাদেরও ওই অভিযোগে গ্রেফতার করতে হবে। দেখব পশ্চিমবঙ্গে কত লক-আপ আছে, যেখানে বামপন্থীদের আটকে রাখা যায়!”
বিকেল ৪টে নাগাদ সভা শুরু হয়। আধ ঘণ্টা আগে থাকতেই ভিড় জমতে থাকে। লাল পতাকায় ঢেকে যায় সভাস্থল। যা সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি। ভিড় সামলাতে হিমশিম খায় পুলিশ। যা দেখে আপ্লুত সুশান্তবাবু বলেন, “অভাবনীয় ভিড়। আপনারাই সংগঠক, আপনারাই প্রচারক। আপনারাই ভোট করবেন। আপনারাই ভোটে জেতাবেন।”
ভাঙড়-১ ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েতের ৬টি সিপিএমের এবং ৩টি তৃণমূলের দখলে রয়েছে। তবে সর্বত্র দাপট তৃণমূলেরই। তা সত্ত্বেও এই ভিড় নিয়ে জেলা তৃণমূলের ভাইস-চেয়ারম্যান শক্তি মণ্ডল বলেন, “ওরা অন্য বিধানসভা এলাকা থেকে লোক জড়ো করেছিল। তাই ভিড় হয়েছিল। আমরাও সপ্তাহখানেকের মধ্যে ওখানে জনসভা করব। দেখিয়ে দেব ভিড় কাকে বলে!”
দিন কয়েক আগে জীবনতলায় দু’হাজার তৃণমূল কর্মী-সমর্থক তাদের দলে যোগ দেন বলে দাবি তোলে সিপিএম। সেই প্রসঙ্গ তুলে এ দিন সুশান্তবাবু বলেন, “শুধু জীবনতলা নয়, সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়েই মানুষ সিপিএমের দিকে ভিড়ছে।” কেন? বিধায়কের ব্যাখ্য, “এক বছর চার মাসের মধ্যেই মা-মাটি-মানুষকে রাজ্যের জনগণ বুঝে গিয়েছেন! মায়ের চোখের জল পড়ছে। মাটি রক্তে ভিজছে। মানুষ হাহাকার করছেন। রাজ্যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আগামী পঞ্চায়েত ভোটে মানুষ তার প্রায়শ্চিত্ত করবেন!”
তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি সুশান্তবাবু। তাঁর দাবি, “ওদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা কোনও কাজ করতে পারছেন না। এত তোলাবাজির চাপে ঠিকাদাররাও কাজ করতে চাইছেন না। আমার সঙ্গে বহু ঠিকাদার এবং সরকারি অফিসার যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের কাছ থেকে আমি ঘটনা শুনেছি।” মুখ্যমন্ত্রীকে ‘মিথ্যাবাদী’ প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে গড়বেতার বিধায়কের বক্তব্য, “৬ লক্ষ বেকারের চাকরি যদি উনি দিয়ে থাকেন, তা হলে হিসেব অনুযায়ী রাজ্যের প্রত্যেক ব্লকে দেড় হাজার লোকের চাকরি হয়েছে। সিপিএম নয়, খোঁজ নিয়ে দেখুন তৃণমূলের কি দেড়শো লোকেরও চাকরি হয়েছে?” একই সঙ্গে অবশ্য আত্মসমালোচনার সুরও শোনা গিয়েছে সুশান্তবাবুর গলায়। সিঙ্গুরের নাম উল্লেখ না-করে তিনি বলেন, “আমাদেরও কিছু ভুল-ত্রুটি ছিল। তা আমি স্বীকার করি। শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ওখানে অতি নরম মনোভাব নেওয়া হয়েছিল। যদি কঠিন মনোভাব নেওয়া হত, তা হলে হয়তো এই অবস্থা হত না।”
সভায় ক্যানিং পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা বলেন, “ওদের স্লোগানমারো, ধরো, পেটাও আর তালা লাগিয়ে দাও সর্বত্র! আর আমাদের স্লোগান কাছে টেনে নাও, সম্মান দাও, ভালবাসো। আমরা তালা লাগাব শুধু মহাকরণে!” সভায় আসতে না-দেওয়ার জন্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে এলাকার দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি-দোকানে তালা লাগিয়ে দেওয়া এবং মারধরের অভিযোগও তোলেন রেজ্জাক। অভিযোগ মানেনি তৃণমূল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.