ভাইচুং-রাইডার: দুই কারিগর
আবির্ভাবেই চমকে দিচ্ছে সিকিম ইউনাইটেড
ভারতীয় ফুটবলে ‘খিদিরপুর’-এর নবজাগরণ! সত্তর দশকের ময়দানে জায়ান্টকিলার ছিল যে খিদিরপুর।
জহুরি অচ্যুত বন্দ্যোপাধ্যায় আর নেই। ‘সেনাবাহিনী’তে গৌতম সরকার, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, তরুণ বসু, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা অশোকলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নামেরও অভাব। কিন্তু তাতে কী? নতুন প্রজন্মের মহানায়ক ভাইচুং ভুটিয়ার দর্শনে আই লিগের নতুন ‘খিদিরপুর’ এখন ইউনাইটেড সিকিম। শনিবার আই লিগের উদ্বোধনী ম্যাচেই করিম বেঞ্চারিফার সালগাওকরকে ৩-২ গোলে হারিয়ে অঘটনের শুরু। গ্যাংটক থেকে ফোনে ভাইচুং বলছিলেন, “এ তো সবে শুরু। আমি কথা দিচ্ছি, আই লিগে আরও চমক অপেক্ষা করছে।” সত্যিই তো! প্রাক্তন ভারতসেরাদের হারানো তো আর মুখের কথা নয়!
মাত্র দু’বছরেই দ্বিতীয় ডিভিশন থেকে সোজা আই লিগের রাজদরবারে। ইউনাইটেড সিকিমের উত্থান কিন্তু রূপকথার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়! ক্লাবের এই মহা-সাফল্যের পিছনে কী কী পরিশ্রমের ভাণ্ডার আছে, সে দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। প্রথমেই যাঁর কথা না বললে নয়, তিনি হলেন ক্লাবের প্রাণপুরুষ ভাইচুং। প্রায় প্রতিদিন ভারতের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন স্পনসরের খোঁজে। একটা ক্লাবকে দাঁড় করাতে গেলে যেটা সবার আগে প্রয়োজন। ‘প্রশাসক’ ভাইচুংয়ের চাপে এখনও ‘ফুটবলার’ ভাইচুং মাঠেই নামতে পারেননি। তবে কথা দিলেন, “আই লিগে আমাদের দ্বিতীয় ম্যাচে রিজার্ভে থাকব। আর তৃতীয় ম্যাচ থেকে খেলার চেষ্টা করব।” তবে কোস্টারিকার বিশ্বকাপার মাইকেল রডরিগেজ ও নাইজিরিয়ান নুরুদ্দিন এসে যাওয়ায় ভাইচুংয়ের দল এমনিতেই আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
শুধু ক্লাবের জন্য টাকা জোগাড়ের কাজেই থেমে নেই ভাইচুং। সিকিম সরকারের সাহায্যে গ্যাংটকে একটি অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম নির্মাণ করেছেন। অ্যাস্ট্রোটার্ফ, উন্নত মানের জিম এবং আধুনিক ড্রেসিংরুমের সুযোগ-সুবিধায় মোড়া। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, গ্যাংটকের নতুন ভাবে তৈরি পালজোর স্টেডিয়ামে ফুটবল ছাড়া আর কোনও খেলাই হবে না। তবু আফসোস করছিলেন ভাইচুং, “এখানে কাছাকাছি কোনও বিমানবন্দর নেই। তাই আমাদের ক্লাবের মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হবে না।” যদিও এএফসি-র প্রতিনিধিরা গতকালের ম্যাচ দেখতে গ্যাংটক এসেছিলেন। শোনা যাচ্ছে, পরিকাঠামো দেখে তাঁরা খুব সন্তুষ্ট।
ফুটবলের পাশাপাশি ম্যাচ চলাকালীন মাঠে বিনোদন আমদানির লক্ষ্যে বলিউডেও এখন ঘনঘন পাড়ি দিচ্ছেন ভাইচুং। গ্যাংটকে ইউনাইটেড সিকিমের পরের আই লিগ ম্যাচে জন আব্রাহাম, রাহুল বসু কিংবা নেহা ধুপিয়াকে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে চিৎকার করতে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কারণ নেই। এখন প্রশ্ন, শুধু বিনোদন দিয়েই কি আই লিগের ‘খিদিরপুর’-এর চলবে? আর এখানেই কারিগরের ভূমিকায় আবির্ভূত ফিলিপ ডি’রাইডার। ফেডারেশন কাপে চরম ব্যর্থতার পরে অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তাঁর দল নাকি আই লিগে অবনমন বাঁচাতে পারবে না। কিন্তু দু’সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই প্রথম ম্যাচেই সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিলেন। কী রহস্য? ইউনাইটেড সিকিমের বেলজিয়ান কোচ বললেন, “আমার দলে প্রতিভার অভাব নেই। ফেড কাপে যেটা ছিল না, সেটা হল বোঝাপড়া। মাঝের ক’দিনে সেই বোঝাপড়া বাড়ানোর কাজটাই করেছি।” দল গড়ায় অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে রাইডারকে। শুধু মাত্র আনোয়ার ও বুধিরাম টুডু এসেছেন ভাইচুংয়ের হাত ধরে।
বিয়াল্লিশ বছর আগে খিদিরপুর থেকেই জাতীয় দলের দরজা খুলেছিলেন গৌতম সরকার। এখন শুধু দেখার, আই লিগের নতুন ‘খিদিরপুর’ থেকে ক’জন ফুটবলার কোভারম্যান্সের ভারতীয় দলে ঢুকতে পারেন?




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.