সম্পাদক সমীপেষু...
শিশিরকুমার: অন্য তথ্য
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘যা দেখি, যা শুনি, মনে মনে কথা বলি’ (১৫-৮) শীর্ষক সুচিন্তিত নিবন্ধে ‘শিশিরকুমার ভাদুড়ির হাহাকার’ বিষয়ক আলোচনার প্রসঙ্গে জানাই, নাট্যাচার্য শিশিরকুমার তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন সর্বশেষ সাধারণ রঙ্গালয় শ্রীরঙ্গমের কয়েক মাসের বাড়িভাড়া দিতে না-পারার অভিযোগে উল্লিখিত থিয়েটারবাড়ির মালিক আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালতের নির্দেশে শিশিরকুমারকে শ্রীরঙ্গম ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হয়। ১৯৫৬-র ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত শ্রীরঙ্গমের দখল তাঁরই ছিল। এটির সংলগ্ন একটি বড় দোতলা বাড়ি শ্রীরঙ্গম থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং তার দখলদার ছিলেন শিশিরকুমার। এটিতে শিশিরকুমার যেমন নিয়মিত বসবাস করতেন, তেমনই তাঁর পরিবারের বিভিন্ন পুরুষ সদস্য (যেমন মধ্যম ভ্রাতা তারাকুমার, কনিষ্ঠ ভ্রাতা ভবানীকিশোর, মাতুল ফণীন্দ্রকিশোর আচার্য, দুই ভাগিনেয় তরুণ লাহিড়ি ও তপন লাহিড়ি এবং আরও কয়েক জন) নিয়মিত বাস করতেন। শ্রীরঙ্গমে সর্বশেষ নাটক ‘প্রফুল্ল’ ২৪ জানুয়ারি ১৯৫৬-য় অভিনীত হয় এবং ৩১ জানুয়ারির তিন-চার দিন আগেই শিশিরকুমার শ্রীরঙ্গম থিয়েটার ও সংলগ্ন দোতলা বাড়িটির দখল ছেড়ে নিজস্ব জিনিসপত্র ও আত্মীয়স্বজন-সহ বরানগরের ২৭৮ নম্বর বি টি রোডে (সিঁথি মোড়ের কাছে) অন্য ভাইদের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। সুতরাং “এক দুপুরে শিশিরকুমারকে বিতাড়িত করার ব্যবস্থা হল। তাঁকে বার করে দেওয়া হল রাস্তায়। তাঁর ব্যবহৃত অনেক জিনিস যেমন তাঁর জামাকাপড়, জুতো...” এই বক্তব্যটি সত্যাশ্রয়ী নয়।
উপরন্তু ঐতিহাসিক নাটক ও শরৎচন্দ্রের যে সব নাটক মঞ্চস্থ করে তিনি এক কালে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন, সেগুলির সব ক’টিই নাটক হিসেবে খুব দুর্বল ছিল না। তাঁর প্রযোজিত রবীন্দ্রনাথের একটি নাটকেই মাত্র দর্শকাভাব ঘটেছিল।
অধিকন্তু শিশিরকুমার আদৌ অহংকারী ছিলেন না। ছিলেন পূর্ণমাত্রায় আত্মমর্যাদাসম্পন্ন এক বিদগ্ধ ব্যক্তিত্ব। তিনি বরাবরই নাটক নিয়ে পরীক্ষনিরীক্ষা করেছেন। পেশাদার থিয়েটারের দর্শকদের হয়তো সেই সব পরীক্ষানিরীক্ষা অনেক সময় আকৃষ্ট করতে পারেনি। যার ফলে, তাঁকে বারে বারে লোকসানের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বারে বারে তিনি মঞ্চহারা হয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই এই কারণে স্বাধীন দেশের সরকারের কাছে তাঁর আর্জি ছিল, তাঁরা এমন একটি অ-বাণিজ্যিক নাট্যশালা গড়ে তুলুন, যেখানে নাটক নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে প্রয়োজকদের। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাঁর সেই কামনা কখনও বাস্তবায়িত হয়নি। জাতীয় নাট্যশালা অলীক স্বপ্নই থেকে গেল।
কথাটি তুলসীদাসের
‘যেতে নাহি দিব’ (২৬-৮) সম্পাদকীয়র শেষ অনুচ্ছেদের শুরুতেই মুদ্রিত হয়েছে, ‘কবিরের দোহায় রহিয়াছে, যে দিন তুমি জগতে আসিয়াছিলে সে দিন সকলে হাসিয়াছিল, তুমি কাঁদিয়াছিলে। এমন কাজ করো যাহাতে যাইবার দিনও সকলে কাঁদে, তুমি হাসিতে হাসিতে চলিয়া যাও। বড় সহজে সার্থক জীবনের মূল কথাটি বলেছিলেন এই সাধক।’ এটি যে সত্যিই সার্থক জীবনের মূল কথা, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু কথাটি বলেছিলেন, ‘রামচরিত মানস’ রচয়িতা তুলসীদাস। মূল কথাটি হল, ‘তুলসী, যব জগ মে আয়া জগ হাসে তু রোয়/অ্যায়সি করনা কর চলো কী তু হাসে জগ রোয়’। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য গ্রন্থেও এটি উদ্ধৃত করেছেন।
প্রেসিডেন্সিনামা
অশোক মিত্রের ‘প্রেসিডেন্সিই বাংলা, বাংলাই প্রেসিডেন্সি’ (২৫-৯) শীর্ষক অত্যন্ত বাস্তবানুগ রচনার জন্য সাধুবাদ জানাই। বামফ্রন্টের শাসনকালে প্রেসিডেন্সি কলেজকে তথাকথিত ‘সাম্যের ভূমিতে’ টেনে আনার চেষ্টা যতখানি পঙ্গু ‘শিক্ষায় রাজনীতিকরণ’ দোষে দুষ্ট, ঠিক ততখানি অবিবেচনাপ্রসূত এবং বৈষম্যমূলক আচরণ দোষে দুষ্ট বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি। একটি কলেজের প্রতিষ্ঠা থেকে যেখানে আজ পর্যন্ত বাছা বাছা মেধাবী ছাত্রছাত্রীদেরই স্থান দেওয়া হয়, সেখানেই শুধু উৎকর্ষ সাধনের চেষ্টা কোন দৃষ্টিভঙ্গি বা রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচায়ক? পাশাপাশি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে টুকরো টুকরো করে একাধিক রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হল যেগুলিতে ন্যূনতম পরিকাঠামোগত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। কলকাতা সংলগ্ন জেলাগুলির অধিকাংশ উন্নত মানের কলেজগুলির (উদাহরণস্বরূপ ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজ, বেলঘরিয়া, দক্ষিণেশ্বরের হীরালাল মজুমদার মেমোরিয়াল কলেজ) ছাত্রছাত্রীরা এই বৈষম্যের শিকার। পাঠক্রমে, পরীক্ষা ব্যবস্থায়, ফলপ্রকাশের ব্যবস্থায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কলেজের ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় এই নবজাত অপুষ্ট রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিশেষত উঃ ২৪ পরগনা) অন্তর্গত কলেজের ছাত্রছাত্রীরা কী নির্মম ভাবে উপেক্ষিত, সেটি কারওই অজানা নয়। কিন্তু এরা তো অভিভাবকহীন। এরা তো প্রেসিডেন্সিতে ভর্তি হতে পারেনি বা কমপক্ষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আসতে পারেনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.