...সময় এল কাছে
থিমে নতুন ছোঁয়া, হাজির
নৈবেদ্য থেকে নাগরদোলা

লকাতার দুর্গাপুজো কখনওই আবদ্ধ থাকেনি হিন্দুত্ব বা বাঙালিয়ানার গণ্ডিতে। ধর্ম-ভাষার ভেদাভেদ ছাড়িয়ে উৎসবের আনন্দে সকল শহরবাসীকে মাতিয়ে তোলাও এই উৎসবের বৈশিষ্ট্য। রোজকার জীবনে ঘুরেঘুরে আসা ক্লান্তি, ক্ষোভ, দুঃখ, হতাশা ভুলে চারটে দিনের ‘মেলা’র মেজাজের সমান অংশীদার সকলেই ।
আর সেই ভাবনাকেই এ বার নিজেদের পুজোর থিম হিসেবে বেছে নিয়েছেন ‘বড়িশা তরুণ তীর্থ’-এর উদ্যোক্তারা। মণ্ডপ চত্বরে তৈরি হচ্ছে মেলার পরিবেশ। সারা বছর যত ভেদাভেদই থাকুক, উৎসবের ক’টা দিন সব ভুলে সকলকে একসঙ্গে আনন্দে মাততে আহ্বান জানাচ্ছে এই পুজো। নানা রং, বিভিন্ন ছন্দ মিলে যেখানে তৈরি হবে মেলার পরিবেশ। প্রাত্যহিক জীবনের ঘূর্ণাবর্তের ছন্দের প্রতীক হিসেবে থাকছে ‘নাগরদোলা’। কারণ উদ্যোক্তারা মনে করেন, মেলা-প্রাঙ্গণ জমজমাট করে তোলে নাগরদোলা। তেমনই আবার রোজের জীবনে ঘুরে ফিরে আসা সুখ-দুঃখের সঙ্গে মিল রয়েছে নাগরদোলার পাকের। এমনই নানা ভাবনার বিকাশ ঘটছে বেহালা চত্বরের বিভিন্ন পুজোমণ্ডপে। কোথাও থিমে উঠে আসছে লোকজীবন, শিল্পের উদ্যাপন তো কোথাও মণ্ডপ ভাবনায় প্রাধান্য পাচ্ছে বিভিন্ন পুরাণ-কথা।
যেমন পুরাণকল্পে সৃষ্টির কাহিনি এ বার বেহালা ব্যানার্জিপাড়ার ‘নস্করপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব’-এর থিম। শিব ও শক্তির যোগাযোগ যে ধরে রাখে গোটা বিশ্বকে, সে বার্তাই উৎসবের কলকাতাকে দিতে চাইছেন এখানকার উদ্যোক্তারা। প্লাস্টিকের বোতল কেটে তা দিয়ে ফুল বানিয়ে সাজছে মণ্ডপ। ভিতরে প্লাইউডে তৈরি শিবের জটা। মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার হচ্ছে বেলের মালা, অভ্র, পাহাড়ি ঘাসও।
‘বেহালা ক্লাব’-এও এই বছরের পুজোর ভাবনায় থাকছে শক্তির আরাধনা। পুজোর উদ্যোক্তারা জানান, অসুর দমনের পাশাপাশি দেবী দুর্গার শক্তিতে নির্মূল হয়েছে চারপাশের অন্ধকার। পৃথিবীতে আলোর উৎসও তাই এই দেবী। এ বছরে মণ্ডপের বিভিন্ন অংশ সে ভাবনাকেই ফুটিয়ে তুলছে। থাকছে রকমারি রং ও আলোর ব্যবহার।
এ ভাবনাকেই আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ‘নন্দনা যুব সঙ্ঘ’-এর মণ্ডপ। এ বার তাদের থিম ‘নৈবেদ্য’। পুজোর নানা উপকরণের সঙ্গে হিংসা, গ্লানি, ক্ষোভ, দুঃখও দশভূজাধারিণী পরম শক্তির পায়ে নৈবেদ্য রূপে সমর্পণের ভাবনা ছড়াতে চাইছেন উদ্যোক্তারা। ঘট, গ্লাস, ঘণ্টা দিয়ে তৈরি মোড়ার আকারের নাটমন্দিরে বসবেন সাবেক সাজের প্রতিমা। মণ্ডপ থেকে প্রতিমার সাজ সর্বত্র ব্যবহার হবে পিতল ও তামার রং।
‘চণ্ডীতলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি’ আবার দূষণমুক্ত গ্রাম-বাংলার পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে নিজেদের মণ্ডপ চত্বরে। মণ্ডপ গড়া হচ্ছে বাঁশ, পাতা, মাটির মতো পরিবেশবান্ধব সামগ্রী দিয়ে। সঙ্গে থাকছে রঙের বৈচিত্রপূর্ণ ব্যবহার। ইট, কাঠ, কংক্রিটের জঙ্গলে এই শরতে একটু ‘অন্য রকম’ ছোঁয়া দিতেই এমন থিম বাছাই করেছেন, বলে জানালেন উদ্যোক্তারা। মণ্ডপ জুড়ে থাকবে গ্রাম-বাংলার লোকশিল্পীদের হস্তশিল্পের নিদর্শন।
শিল্পের উদ্যাপন থাকছে ‘বড়িশা যুবকবৃন্দ’-এর পুজোতেও। তাল পাতার ছাউনি দেওয়া মণ্ডপ সাজছে পুঁতিচিত্র দিয়ে। ভিতরে বসানো হচ্ছে থিমের সঙ্গে মানানসই সাবেক প্রতিমা। নানা সময়ে এই পুঁতি-শিল্প বিভিন্ন ধর্ম এবং ভারতবর্ষের নানা প্রদেশের মানুষের লোকজীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। তাই এই থিমের মাধ্যমেও উদ্যোক্তারা নানা ধর্ম ও ভাষার মিলনের খোঁজ করছেন উৎসবের শহরে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.