বিনোদন শিল্পী-প্রযোজক দ্বন্দ্ব, বাংলা
সিরিয়াল সংসারে ঘোর অশান্তি

প্রযোজক আর শিল্পীদের মধ্যে ঝামেলা। তার জেরেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বাংলা টেলিভিশনের ৬০০ কোটি টাকার বিনোদন বাজার।
টাকাপয়সা নিয়ে প্রযোজকদের সঙ্গে শিল্পীদের অশান্তি নতুন নয়। কিন্তু রবিবার সেটা যে ভাবে প্রায় সার্বিক অচলাবস্থা ডেকে আনতে যাচ্ছিল, তাতেই ইন্ডাস্ট্রির কপালে ভাঁজ। শিল্পী-কলাকুশলী মিলিয়ে অন্তত ২০ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ভাবে বাংলা টেলিভিশনের সঙ্গে জড়িত। পুজোর মুখে আচমকাই এঁদের সামনে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। প্রযোজক সংগঠন ডব্লিউএটিপি (ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অফ টেলিভিশন প্রোডিউসার্স অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল) এবং শিল্পীদের আর্টিস্ট ফোরাম, দু’পক্ষই যুদ্ধং দেহি মনোভাব বজায় রাখছে। আজ, সোমবার বৈঠক ডাকা হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের মধ্যস্থতায় সমাধানসূত্র বের করার চেষ্টা হবে।
গোলমালের কেন্দ্রে রয়েছে রাজীব মেহরা প্রযোজিত দু’টি সিরিয়াল, ‘সাত পাকে বাঁধা’ এবং ‘পালাবদল’। শনিবারই এই দুই ধারাবাহিকের শিল্পীরা তাঁদের মাসিক চেক হাতে পান। চেকে ১০ অক্টোবরের তারিখ দেওয়া ছিল। শিল্পীরা ওই পোস্ট ডেটেড চেক নিতে অস্বীকার করেন। তাঁরা একযোগে বলেন, নতুন চেক না দিলে তাঁরা রবিবার কাজে যোগ দেবেন না। এবং সেই মোতাবেক ওই দুই ধারাবাহিকের শিল্পীরা এ দিন স্টুডিওতে রিপোর্ট করেননি। প্রযোজক রাজীব মেহরার বক্তব্য, “একটা সামান্য ব্যাপার নিয়ে আর্টিস্টরা বাড়াবাড়ি করছেন!” তিনিও শ্যুটিং বন্ধ করে দেন।
গণ্ডগোলের রেশ ছড়াতে থাকে। রবিবার বেলা সাড়ে বারোটা থেকে দুপুর তিনটে পর্যন্ত টেলিভিশন সিরিয়ালের বেশির ভাগ শ্যুটিংই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ডব্লিউএটিপি ঘোষণা করে দেয়, শ্যুটিং ধর্মঘট। দুপুর তিনটের পর থেকে কোনও সিরিয়াল শু্যটিং হবে না বলে ঠিক হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত অরূপ বিশ্বাসের চেষ্টায় কোনও মতে কাজ আবার শুরু হয়। রাজীবের সিরিয়াল দু’টির শ্যুটিং অবশ্য হয়নি। অন্যান্য শুটিংয়েও উত্তেজনার আবহ যথেষ্টই ছিল। সোমবারের বৈঠকে যদি সমাধানসূত্র না বেরোয়, শ্যুটিং ধর্মঘটের ডাকই বহাল থাকবে, এমন আশঙ্কা রয়েছে। ডব্লিউএটিপি-র তরফে পার্থ কর বলেই দিচ্ছেন, “ধর্মঘটের সম্ভাবনা বাতিল হয়ে যায়নি।”
প্রযোজকদের সঙ্গে শিল্পীদের সম্পর্ক এই জায়গায় এসে দাঁড়াল কেন? এই মুহূর্তে টালিগঞ্জের ব্যস্ততম অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় কালিম্পংয়ে শ্যুটিং করতে করতেই উগরে দিলেন তাঁর ক্ষোভ। শাশ্বত বড় পর্দা-ছোট পর্দা, দু’টো মাধ্যমের সঙ্গেই যুক্ত। তাঁর কথায়, “যে ছবি আঁকে, গান করে, তবলা বাজায়, তার রোজগার সেটা থেকেই হয়। টালিগঞ্জে এখন কেউ মাছের ব্যবসা, কেউ অন্য কিছুর ব্যবসা করে প্রোডিউসার হয়েছে।” শাশ্বতর ক্ষোভ, প্রযোজকরা আর্থিক প্রতিপত্তি খাটিয়ে শিল্পীদের কার্যত কিনে রাখতে চাইছেন।
সমাধান-সূত্রের খোঁজে আজ বৈঠক
প্রসেনজিৎ

বোলপুরে শ্যুটিং করতে করতে দুপুরে খবরটা পেলাম। আশা করি মিটিংয়ে সব মিটে যাবে।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়
মানি ইজ নট পাওয়ার। টাকা আছে বলে প্রোডিউসার কিন্তু আর্টিস্টকে কিনে নিতে পারেন না।
মহেন্দ্র সোনি
আর্টিস্টরা সব সময় একতরফা, হঠকারী সিদ্ধান্ত নেন। প্রযোজকদের অসুবিধার কথা ভাবেন না।
শুধু একটা পোস্ট ডেটেড চেক নিয়ে সমস্যাতেই কি জল এত দূর গড়াল? ইন্ডাস্ট্রি সূত্রের খবর, বিষয়টা এত সরল নয়। পেমেন্ট নিয়ে আর্টিস্টদের এমনিতেই ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। গত ১৪ জুন প্রোডিউসার্স গিল্ড এবং আর্টিস্ট ফোরামের মধ্যে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, শিল্পীদের পুরো মাসের পাওনা পরের মাসের সাত তারিখের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে। পোস্ট ডেটেড চেক দিয়ে সেই চুক্তি ভঙ্গ করা হয়েছে বলে শিল্পীদের দাবি। আর্টিস্ট ফোরামের যুগ্ম সচিব দেবযানী চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, শিল্পীরা কখনওই ধর্মঘটের পথে যেতে চান না। কিন্তু প্রযোজকরা যে ভাবে তাঁদের নিয়ে হেলাফেলা করেন, সেটাও মেনে নেওয়া চলে না। দেবযানীর অভিযোগ, সাত তারিখের মধ্যে পাওনা মেটানোর অঙ্গীকার করার পরেও প্রায়শই কখনও ১৬, কখনও ২২ তারিখের পোস্ট ডেটেড চেক ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। “শিল্পীরা কিন্তু ফ্রিলান্স কাজ করেন। এই পেশায় এমনিতেই যথেষ্ট অনিশ্চয়তা রয়েছে।” শিল্পীদের বক্তব্য, প্রযোজকরা যখন তখন এমনকী গভীর রাতেও এসএমএস করে বলে দেন, পরের দিন কাজে আসতে হবে না। তখন নতুন করে কাউকে ডেট দেওয়ার অবস্থাও থাকে না। “এই ক্ষতি কি প্রযোজকরা পূরণ করে দেন? তা যদি না করেন, তা হলে যখন তখন শু্যটিং বাতিল করার অধিকারও তাঁদের থাকতে পারে না।”
এর পাশাপাশি শিল্পীদের সম্পর্কে প্রযোজকদের অভিযোগও কিছু কম নয়। শিল্পীরা দু’ঘণ্টা কাজ করে পুরো দিনের পাওনা নেন বলে অভিযোগ। অধিকাংশ দিনই ‘হাফ ডে’-র জন্য আবদার করেন তাঁরা। নাম না করে এক প্রযোজক বলেন, “আমরা আর এ সব মানব না। কালকের বৈঠকে এই সব কিছু নিয়েই আলোচনা হবে।” আর পাওনাগন্ডার বিষয়টা? পার্থবাবু বলেন, “পোস্ট ডেটেড চেক দেওয়াটা অপরাধ নয়। শিল্পীদের বলাই আছে চেকে তিন দিনের ‘গ্রেস পিরিয়ড’ ধরে রাখতে।” প্রযোজকদের দাবি, এই নিয়ে ডামাডোলের পিছনে শিল্পীরা যতটা না দায়ী, আর্টিস্ট ফোরামের কিছু ‘অস্থিরমতি’, ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ নেতা অনেক বেশি দায়ী। ওঁরাই শিল্পীদের হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ। পার্থবাবুর কথায়, “এতে চ্যানেলের ক্ষতি হচ্ছে, প্রযোজকদের ক্ষতি হচ্ছে। আর্টিস্ট ফোরামের এই দাদাগিরি মানা যায় না।”
অতঃ কিম? শিল্পীরা বলছেন প্রযোজকরা ওঁদের ভালমন্দের দিকটা দেখেন না। প্রযোজকরা বলছেন, শিল্পীরা ওঁদের সঙ্গে সহায়তা করেন না। মাঝখানে পড়ে চ্যানেলের কর্তারা ক্ষুব্ধ। সংশ্লিষ্ট একটি চ্যানেলের কর্তা সুজয় কুট্টি বলছেন, “আমরাই টাকা দিই। কিন্তু যখনই ঝামেলা হয়, চ্যানেলের স্বার্থটা কেউ দেখেন না।” প্রথম সারির একাধিক চ্যানেলের কর্তাই আজকের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। অরূপ বিশ্বাস মনে করিয়ে দিচ্ছেন, শুধু চ্যানেল নয়। পুজোর আগে ধর্মঘট শুরু হলে মার খাবেন টেকনিশিয়ানরাও। “এই অনিশ্চয়তার আবহ চলতে পারে না। আশা করছি, সোমবার একটা রফা হবে।” অরূপের সঙ্গে সহযোগী মধ্যস্থ হিসেবে থাকবেন শিবাজী পাঁজা।
বাংলা টেলিভিশনের ‘প্রাইম টাইম’ অতএব, সোমবার সকাল এগারোটা থেকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.