চালাঘরেই সৃষ্টির আনন্দ কর্ণধরের
তাঁর কাছে পুজো মানে শুধু উৎসব নয়, নতুন কিছু সৃষ্টির আনন্দ। ছোট্ট একটা ঘরে বসে দেবীর জন্য শোলার সাজ তৈরির তৃপ্তি।
তিনি কর্ণধর ঘোষ। বাড়ি মঙ্গলকোট থানার বনকাপাশি গ্রামে। বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। দিনে সূর্যের আলো আর রাতে বাতির আলোতেই এক মনে কাজ করে চলেছেন বছর পঁয়ষট্টির এই শোলা-শিল্পী। তাঁর জীবনপঞ্জিতে কলকাতার কুমোরটুলির দেবদেবীদের সাজানো, প্রবাসীদের জন্য দেবদেবীর শোলার মূর্তি তৈরির অভিজ্ঞতা রয়েছে। নতুন শিল্পী তৈরিতেও দক্ষ তিনি।
কর্ণধরবাবু বললেন, “এই বয়সে একটা নতুন চ্যালেঞ্জ এসেছে। এত দিন আমাদের তৈরি ডিজাইন উদ্যোক্তারা নিতেন। এ বার উদ্যোক্তারাই ডিজাইন নিয়ে হাজির। সেই মতো আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। আর এত সময়ে দেবীর সাজ তৈরির কাজ শেষ করাই কঠিন।”
শোলার সাজ তৈরিতে ব্যস্ত কর্ণধরবাবু। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
এক একটা পুজো তাঁর কাছে একটা নতুন ক্লাসঘর। অন্য মঞ্চ। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বাবা গোবিন্দ ঘোষ মারা যান। তার পর থেকেই সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির পরে আর স্কুলমুখো হননি। তখন থেকেই যুক্ত হন শোলার কাজের সঙ্গে। এর-ওর কাছ থেকে শোলার কাজ শিখেছেন। আর সামান্য রোজগার এসে মা বাসন্তীদেবীর হাতে তুলে দিয়েছেন। কর্ণধরবাবু কথায়, “কাজ করতে করতে কখন যে ছাত্র হয়ে উঠেছি জানি না। এখন পুজো এলেই িনেকে ছাত্র মনে হয়। আমার ছোট্ট ঘরটা ক্লাসঘর। সেখানে বলেই রোজ নতুন নতুন কাজ শিখি।” ওই বাড়িতেই আবার তিন ছেলে, পুত্রবধূ, নাতি-নাতনি নিয়ে তাঁর ভরা সংসার। তাঁরাও শোলার কাজ জানেন।
কর্ণধরবাবুকে শিল্পী বলতেই হাসলেন তিনি। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “শিল্পী! তা হলে কি আর এমন দশা হয়। বাড়ির ছাদ থেকে জল পড়ে। সারানোর পয়সা নেই। পাকা বাড়ি করব তারও সামর্থ্য নেই।” তাঁর কথায়, “ যেটুকু করেছি নিজে খেটে করেছি। কেউ আমাদের সাহায্য করেননি।” বললেন, “যখন ছোট ছিলাম, পুজোর তো এত জাঁকজমক ছিল না। এখন রোশনাই বেশি। উদ্যোক্তারাও দেবীকে ভাল ভাবে সাজাতে চান। তাই আমাদের জীবনেও একটা চ্যালেঞ্জ এসেছে।”
বনকাপাশি গ্রামকে ‘শোলা-পীঠ’ বলা যেতেই পারে। গ্রামটিতে এমন কোনও বাড়ি নেই, যেখানে শোলার কাজ হয় না। কিন্তু প্রত্যেকের অবস্থাই কমবেশি কর্ণধরবাবুর মতোই। গ্রামের শিল্পীদের দাবি, পুঁজি নেই। বেশি কাজ এলেও বরাত নেওয়া যায় না। নিলেও মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিতে হয়। তাই এত খেটেও লাভ সেরকম কিছুই হয় না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সদ্য প্রয়াত ‘শিল্পগুরু’ আদিত্য মালাকারের হাত ধরেই গ্রামে শোলার কাজের যাত্রা শুরু। বহু মানুষ তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েই শিল্পী হয়েছেন। আদিত্যবাবু ছাড়া তাঁর মা কাত্যায়নীদেবী ও পুত্র আশিসবাবুও রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী।
এই শিল্পীদের হাত ধরেই সুন্দর হন দেবী। সকলে আনন্দ পান। কিন্তু কোনও দিন কর্ণধরবাবুদের জীবনের আলোর রোশনাই আসবে কি? উত্তর আজানা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.