|
|
|
|
|
স্বপ্নময় চক্রবর্তী |
|
তখন চুলকাটা ঘরের নাম ট্রিম ট্রিম, টিপটপ, ম্যাচো এ সব ভাবাই যেত না, জেন্টস্ পার্লারও নয়। বলরামের সেলুন, মণ্টুর সেলুন, জগার সেলুন, এমন নামেই পাড়ার ভিতরের সাইনবোর্ডহীন চুলকাটা ঘরগুলি বিখ্যাত ছিল। মর্ডান হেয়ার কাটিং সেলুন বা জনতা হেয়ার কাটিং-এর সাইনবোর্ড যে একেবারে ছিল না তা নয়, তবে সাইনবোর্ড থাকলেই রেট বেশি। এই সব সেলুনের বাইরের একটা পর্দা থাকত, ভিতরে ফ্যান, আয়না। চেয়ারে বসে চুল কাটা। আর কী চাই?
ছোটবেলায় যখন পড়েছিলাম রবীন্দ্রনাথকে রেলের বিশেষ সেলুনে কলকাতা আনা হয়েছিল, ভেবেছিলাম নিশ্চয়ই তাঁর জন্য রেলগাড়ির ভিতরে স্পেশাল সেলুন তৈরি করে চুল কাটতে কাটতে আনা হয়েছিল সময় বাঁচাবার জন্য। চুল কাটার সময় কই ওঁর। এতটাই মূর্খ ছিলাম। কিন্তু সেলুনই আমাকে জ্ঞানের আলো দিয়েছে নানা ভাবে।
শৈশব ও বাল্যাবস্থায় বাগবাজারের গঙ্গার ধারে কাঠের পিঁড়িতে বা ইটের ওপর বসে চুল কাটতে হত। শ্রেণিবিভক্ত সমাজ এর আগেই সেলুন তৈরি করে ফেলেছে। ওখানে যায় ‘অভিজাত’ সমাজ। সেলুনগামীরা ইট-সম্বল চুলকাটা কেন্দ্রগুলিকে বলত ইটালিয়ান সেলুন।
নাকের তলায় গোঁফের চিহ্ন ফুটতেই ঝুঁকি নিয়ে সেলুনে ঢুকে যাই। দেওয়ালে বাঁধানো মা কালীর ছবির তলায় কাগজে সাঁটা বাণী: বগল কামাইয়া দাও বা পায়ের নখ কাটিয়া
|
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য |
দাও অনুরোধ করিবেন না। আসলে ইটালিয়ান সেলুনে চুল কাটার সঙ্গে ওগুলো ফাউ ছিল। অভিজাত স্থানে এ সব চলবে কেন? এই সেলুনের ছোট্ট ঘরে দু’পাশে দু’টি মাত্র চেয়ার, দেওয়ালের ধারে একটা লম্বা টুল। ওটা অপেক্ষারতদের জন্য। মন্টুকাকুর একটা অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিল, সে সাধারণত দাড়ি-টাড়ি কামাত। চুলশিল্পটা মন্টুকাকুই করত। টুলে বসা সবাই চুল কাটতেই আসত, এমন নয়। আড্ডা মারতে আসত। একটা খবরের কাগজ থাকত, যুগান্তর। আর ওই খবরের কাগজ ঘিরেই আড্ডা। এই সব আড্ডায় নানা ধরনের পোস্ট এডিটোরিয়াল রচিত হত। প্রফুল্ল সেন কি আসলে ভীতু? ভারতে কেন মিলিটারি রুল চাই? এ সব ছাড়াও, পঙ্গপাল কেন আসে, লাল আটার রুটিতে বাহ্যি কেন খোলসা হয়, লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু রহস্য, চুনী গোস্বামী ও হেমা মালিনীর পায়ের কাজ, সোডার বোতল ছোড়ার সময় প্রয়োজনীয় হাতের কাজ এ সব নানা বিষয়ে আলোচনা হত এবং শেষমেশ বিশেষজ্ঞের মতামতটা মন্টুকাকুই দিত।
এখন মনে হয়, এই নরসুন্দরররা সব জ্যান্ত গুগ্ল। যে কোনও বিষয় জলভাত। ইটালিয়ান পর্বেও দেখেছি বিহারি নাপিত চুল কাটতে কাটতে ছাতুর বহুত কিসিমের ‘ভিটমানিস’, বটের ছায়া বনাম অশ্বত্থের ছায়া, টুথপেস্টের অপকারিতা নানা বিষয়ে জ্ঞান দিত। এক বার বোলপুরের সেলুনে শুনেছিলাম গুরুদেবের ফ্যাশনচেতনা। উত্তরপাড়ার একটা সেলুনে কেন যে কুকুরগুলো খামখা চেঁচায় জোরে থেকে শুরু করে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ঝুলন রহস্য শুনেছিলাম।
মন্টুকাকুর সেলুনের উল্টো দিকের বাড়িটার নাম ছিল জজের বাড়ি। এক কালে কোনও জজসাহেব থাকতেন। ওই বাড়ির এক রাশভারী উকিল চুল কাটতে এসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘এই যে নবগ্রহ সম্মেলন হচ্ছে, পার্কে পার্কে ঘি পুড়িয়ে যজ্ঞ হচ্ছে, কী বলো হে মন্টু? টিকে যাবে?’ মন্টু মাথাটাথা না চুলকেই বলে দিয়েছিল, এ যাত্রা টিকে যাবে দাদা, কেন না মানুষের পাপ তো মা বসুন্ধরা শুষে নেয়, আর পাপ শুষে ভারী হয়, এখনও চলে যাচ্ছে, আর একটু ভারী না হলে কিস্সু হবে না।
কিছু হয়নি সে বার। পুরো ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গিয়েছিল। মন্টুকাকু ছিল বাগবাজারের নস্ট্রাডামুস। যা যা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, সব মিলে গিয়েছে। মন্টুকাকু বলেছিল, যুগান্তর কাগজ বন্ধ হয়ে যাবে, গঙ্গায় ইলিশ আসবে না, জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী হবেন আর মেয়েরা ছেলেদের ড্রেস পরবে। তখনকার সময় ও সব ছিল অকল্পনীয়। গঙ্গার ঘাট থেকে হাতে ঝুলিয়ে ইলিশ নিয়ে ফিরত সবাই।
মন্টুকাকুর হাত এবং মুখ চলত একসঙ্গে। হাতে খেলত নানা কিসিমের ছাঁট। উত্তম ছাঁট তো বটেই, সঙ্গে দেব আনন্দ ও ধর্মেন্দ্র। মিলিটারি ছাঁট দু’রকম: হাফ আর ফুল। ফুল মিলিটারি ছিল অনেকটা বাটি-ছাঁটের মতো। কমরেড ছাঁটও ছিল, আঁচড়ালেও উস্কো থাকে। উত্তম ছাঁটটা মন্টুকাকুর হাতে খুব খুলত। পাড়ার ছেলেরাই শুধু নয়, বেপাড়া থেকেও লোক আসত উত্তম ছাঁটাবে বলে। পিছনে ইংরিজি ‘ইউ’-এর মতো, ঘাড়টা ঝকঝকে, মাথার সামনের চুলটা ফোলাফোলা। তখন উত্তমময় জগৎ। ছোকরারা উত্তমের কায়দায় সিগারেট ধরে, ও রকম হাসে। ঝুলনের পুতুলে উত্তমকুমার পায়রা ওড়াচ্ছে, মায়ামৃগ সিনেমার শোন শোন গেরোবাজ... প্রচুর ছোঁড়াকে মন্টুকাকু উত্তম ছাঁটে সমৃদ্ধ করেছিল।
মন্টুকাকুর সেলুন হঠাৎ বন্ধ। শুনলাম খুব শক পেয়ে বাক্ বন্ধ। বাক্ বন্ধ বলেই তো সেলুন বন্ধ। ওর আদরের মেয়েটা উত্তমছাঁটওয়ালা একটা বেকার ছেলের সঙ্গে ভেগেছে। ছেলেটার মাথায় কিচ্ছু ছিল না একটা নিঁখুত উত্তম ছাঁট ছাড়া।
শোকাহত মন্টুকাকু সাত দিন পর সেলুনটা খুলেছিল ফের। মা কালীর ছবির নীচে আর একটা বিঃ দ্রঃ সাঁটানো হল: ‘এখানে উত্তম ছাঁট দেওয়া হয় না’।
মন্টুকাকু আর একটা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল উত্তম থেকে যাবে কিন্তু উত্তম ছাঁট উঠে যাবে। |
|
সুমিত্র বসাক |
|
প্রেমিকার সঙ্গে বেড়াতে বেড়াতে সামনে একটা থার্মোকলের টুকরো দেখে স্মার্টলি শট মারলেন।
তার পর হাড়ে হাড়ে বুঝলেন, ওটা ছিল একটা সাদা পাথর। |
|
|
মোবাইলটায় চার্জ নেই। বুথ থেকে ফোন করতে হবে।
পকেটে হাত দিয়ে দেখলেন, একটাই কয়েন বাকি।
আর সেটা ফেলে ডায়াল করে ‘হ্যালো, ফুলমাইমা’
বলতেই, বাজখাঁই গালাগাল। রং নাম্বার। |
আজ ইন্টারভিউ। ভাল করে দাড়ি কামিয়ে ঝকঝকে
লুক নিয়ে যেতে হবে। খুব মন দিয়ে স্লো মোশনে কামাতে
গিয়ে, ঘ্যাঁচ। এ বার এত বড় ব্যান্ডেড লাগাও আর
প্রথম প্রশ্নটা কমন পাও, ‘গালে কী হয়েছে?’ |
|
|
|
জীবনের, বাস্তবের কতটুকু উদোম করে দেখানো যায়? আর্ট করতে গেলে এত কিলো উন্মোচন পাবলিক-যোগ্য আর এই এট্টুখানি প্রাইভেট, কে বেঁধে দেয়? সব প্রশ্নকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে নীতি-আড়ষ্ট ভারতবর্ষে অভিনেত্রী শ্বেতা মেনন তিন-তিনটে মুভি ক্যামেরার সামনে ‘লাইভ’ সন্তান-প্রসব করলেন। ‘কলিমন্নু’ মলয়ালম ছবির জন্য এ দৃশ্য তোলা হল। শ্বেতার মতে, এ এক অনন্য ‘পারফর্মিং আর্ট’। কাণ্ড নতুন নয়, এ বছরেই মার্কিন পেজ-থ্রি স্টার কোর্টনি কার্দাশিয়ান রিয়েলিটি টিভি শো-তে ‘অন এয়ার’ প্রসব করেছেন শিশুকন্যা, মার্নি কোটাক নিউ ইয়র্কের আর্ট গ্যালারিতে একই ব্যাপার সেরেছেন প্রচুর দর্শকের সামনে। ইয়েল ইউনিভার্সিটির ছাত্রী আলিজা শোয়ার্টস ক’বছর আগে প্রোজেক্ট হিসেবে ছকেছিলেন নিজেরই গর্ভপাত-ভিডিয়ো (শেষমেশ জমা দেননি)। অধিকাংশ চিল্লাচ্ছে ‘স্টান্ট’, কিন্তু শিল্প ক্রমশ অতিক্রম করছে সব প্রথাগত ফর্ম, শরীর ও মনকে অনেক প্রত্যক্ষ ভাবে আর্টের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্রমাগত। চিনা শিল্পী আই ওয়েই ওয়েই ১০০১ জন চিনা মানুষকে জার্মানির ক্যাসেল শহরে নিয়ে গিয়ে বলেন, এই লোকগুলোর নতুন অভিজ্ঞতাই একটা শিল্পকর্ম। ফলে কে বলতে পারে, শ্বেতা হয়তো আদতে প্রসব করলেন ধুন্ধুমার ভারতীয় মডার্ন আর্ট। |
|
এক মার্কিন চিত্রপরিচালকের ইসলামবিরোধী ছবি নিয়ে সম্প্রতি গোটা বিশ্বে হইচই। পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী গুলাম আহমেদ বিলোর অ্যায়সা চটেছেন, পেশোয়ারে প্রেস কনফারেন্সে বললেন, যে ওই কাফের ছবি-করিয়ে কে খুন করবে, পাবে লাখ ডলার। এমনকী অধুনা রাষ্ট্রশত্রু তালিবান কি আল-কায়দাও স্বাগত। খবর ছড়াতেই রাগী মৌলবাদীকুল টগবগে, আমেরিকা-ব্রিটেন ছিছিক্কারময়, পাক সরকার বিগতপ্রেস্টিজ হাঁড়িমুখ। বিলোর জোট-শরিক আওয়ামি ন্যাশনাল পার্টির নেতা-মন্ত্রী, তার পার্টি-লাইন গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ, কী করে তিনি ইসলামের উগ্র ধর্মধ্বজী-টাইপ মতামত চিল্লিয়ে বলেন? বিলোর অবিচল: যা বলেছি বেশ বলেছি, লাখ ডলারও নিজ-গ্যাঁট থেকেই দেব, রেলগণেশ ওল্টাব না। আমার বাক্স্বাধীনতা আছে, দল কি সরকার দাবায়া রাখতে পারবা না। তবে ফিল্মওয়ালারই বা দোষ কী? যা মনে হয়েছে ছবিতে বলেছি, তুুমি প্রেস কনফারেন্সে, আমি ইউটিউবে ছেড়েছি। ক’টা লোক পুড়ল না পোড়াল, তা নিয়ে কেন ভাবব? সওয়াল-জবাবের এই গাম্বাট কুস্তিতে গলার হুল্লাট জোরই শেষ কথা। অসংযমের ভয়াবহতা, ধর্মের প্রেমে কি শিল্পের ফ্রেমে, আদতে সুদূরপ্রসারী, কে কবে বুঝবে? |
|
|
|
১৫০
গড়ে ঘন্টায় যত
কিলোমিটার বেগে মুখ
থেকে হাঁচি বেরোয় |
৫
আজ থেকে যত বছর আগে
ধরা পড়ল, মার্কিন পরিচালক
স্পিলবার্গের ডিস্লেক্সিয়া আছে |
২৫০০০
জীবনভর মানুষের মুখের ভেতর যত
কোয়ার্ট থুতু উৎপন্ন হয়, যা কিনা
ভরাতে পারে দু’টো সুইমিং পুল!
|
৯০
যতগুলো রোল্স
রয়েস গাড়ি গত বছরে
ভারতে বিক্রি হয়েছে
|
১৩৫২৯১
গত বছর ভারত-বাংলাদেশ
সীমান্ত এলাকা দিয়ে পাচার
হয়ে গেছে যত গরু-ছাগল
|
৯.৯৯
নয়া আইপ্যাডে খোদ
আইনস্টাইনের মগজের
যাবতীয় কারিকুরিওয়ালা
অ্যাপ্স-এর ডলার-দর
|
|
১০
জে কে রোওলিং তাঁর নতুন লেখা ‘বড়দের’ বই ‘দ্য ক্যাজুয়াল ভেকেন্সি’-র জন্য প্রকাশকের থেকে আগাম যত লক্ষ ডলার পেলেন
|
১১
সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি ভবনের মুঘল গাডের্ন্স-এ স্বয়ং ফার্স্ট লেডি’র নির্দেশে লাগানো হল যে ক’টি বাংলার স্থলপদ্মের চারা |
|
|
|
|
|
অ
সী
ম
চৌ
ধু
রী |
|
|
মূর্খ তোরা! একটা কথা বলতে হবে কত আর?
বঙ্গদেশে ধরনা বারণ। এটাই আদেশ ফতোয়ার।
ধরনা দিবি? দিল্লিতে যা! উদ্দেশ্য দারুণ সৎ।
বাংলা আমার ভিত্তি কিন্তু দিল্লি আমার ভবিষ্যৎ! |
দিনরাত কেন করো বাজে লোক ভজনা?
জনগণ মানে হ্যাপা এ-কথা কি বোঝো না?
গান বাঁধে। ও তো স্রেফ মিডিয়ার ভৃত্য।
কেউ বোঝো ফেসবুক? বোঝো শিলাদিত্য?
গান জানে অনেকেই। কাজ বোঝে ক’জনা? |
|
|
লেটারিং বেটারিং |
টাপুর টুপুর যে সিরিয়াল, মেঘ এখনও শেখেনি |
|
|
|
|
|
|
এই ছবির সংলাপ লিখেছেন হীরালাল শীল, কলেজ স্ট্রিট
|
|
|
|
ডান পাশের ছবির দু’জন কী বলছে?
সাদা
পাতায় লিখে পাঠান।
প্রতি ডায়লগ ২০ শব্দের মধ্যে।
ঠিকানা:
নয়া সংলাপ,
রবিবাসরীয়,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১ |
|
|
|
|
|
|
|