আফশোস ছিল, দু’বছর চেষ্টা করেও আইআইটিতে পড়ার সুযোগ পাননি। সেই আক্ষেপই তাঁকে টেনে এনেছে পটনায়।
তিনি অনুরাগ বসু।
‘বরফি’র পর অনুরাগের নতুন ছবির বিষয়, পটনার ‘সুপার-৩০’ কোচিং সেন্টার। যার কর্ণধার আনন্দ কুমার প্রতি বছর মেধাবী গরিব ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আইআইটি-র পরীক্ষার উপযুক্ত করে তৈরি করে দেন। এই আনন্দ কুমারকে নিয়েই একটি জীবনীমূলক ছবি করতে চাইছেন অনুরাগ। ইতিমধ্যেই চিত্রনাট্যকার সঞ্জীব দত্তকে নিয়ে কয়েক বার পটনা ঘুরে গিয়েছেন। দেখা করেছেন আনন্দ কুমারের সঙ্গে।
আনন্দ কুমারকে বেছে নিলেন কেন? অনুরাগের খোলাখুলি জবাব, “আমার খুব ইচ্ছে ছিল আইআইটিতে পড়ার। চেষ্টা করেও সুযোগ পাইনি। সেই থেকে এই পরীক্ষাটার প্রতি আমার একটা দুর্বলতা আছে।” পড়ার সাধ ছবিতে মেটানোর জন্যই এ বার আনন্দ কুমারকে নিয়ে ছবির কাজে হাত দিয়েছেন। |
আনন্দ কুমারের (মাঝখানে) সঙ্গে পরিচালক অনুরাগ বসু
এবং চিত্রনাট্যকার সঞ্জীব দত্ত। পটনায়। —নিজস্ব চিত্র |
আনন্দ কুমারের জীবনেও জড়িয়েছিল একটা আফশোস। কেমব্রিজে পড়ার সুযোগ পেয়ে অর্থের অভাবে যেতে পারেননি। সেই দুর্ভাগ্য যাতে আর কারও জীবনে নেমে না আসে, তার জন্যই সুপার-৩০। দরিদ্র পড়ুয়াদের আইআইটিতে পড়ার সুযোগ করিয়ে দেওয়ার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখনও পর্যন্ত ২৬৩ জন ছাত্রকে আইআইটিতে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন আনন্দ কুমার। সকলেই মূলত বিহারের গরিব মেধাবী ছাত্র।
৩৯ বছর বয়সী আনন্দ প্রতি বছর বাছাই ৩০ জন ছাত্রের থাকা, খাওয়া এবং কোচিং-এর ব্যবস্থা করেন। প্রতি বছর এখান থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ ছাত্র আইআইটিতে পড়ার সুযোগ পান। আনন্দ কুমারের এই সাফল্যের কাহিনি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ‘ডিসকভারি চ্যানেল’ সুপার-৩০-কে নিয়ে এক ঘণ্টার তথ্যচিত্র তৈরি করেছে। এগিয়ে এসেছে জাপানের একটি বিখ্যাত চ্যানেলও। ‘ভারতের নীরব অস্ত্র’ নাম দিয়ে সুপার-৩০ নিয়ে একটি তথ্যমূলক ছবি বানিয়েছে তারা। আনন্দ ডাক পেয়েছেন চিনের রেডিও স্টেশন থেকেও।
এত দিনে এ বার নিজের দেশে আনন্দকে নিয়ে কাহিনিচিত্র তৈরির উদ্যোগ শুরু হল। আনন্দ কুমারের সঙ্গে প্রথমে ই-মেলে যোগাযোগ করেছিলেন অনুরাগ। সাড়া না পেয়ে আনন্দ কুমারের ভাই প্রণব কুমারকে ফোন করেন অনুরাগ। প্রণবও সুপার-৩০র সঙ্গে যুক্ত। প্রণবের সঙ্গে কথা বলেই অনুরাগ পটনায় আনন্দ কুমারের বাড়িতে আসেন সঞ্জীব দত্তকে সঙ্গে নিয়ে।
আনন্দ কুমার অবশ্য প্রথমে অনুরাগকে তেমন ভাবে চিনতেন না। লজ্জিত কণ্ঠে বলেন, “আমি কয়েক বছর হল সিনেমা দেখা ছেড়ে দিয়েছি। অনুরাগবাবু যখন আমায় ই-মেল করেছিলেন, সময়ের অভাবে উত্তর দিতে পারিনি।” অনুরাগের সঙ্গে দেখা হওয়ার পরে কিন্তু ওঁর তিন-তিনটি ছবি দেখে ফেলেছেন আনন্দ। ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’, ‘গ্যাংস্টার’ আর ‘বরফি’। “বরফি দেখে আমি মুগ্ধ। মন ছুঁয়ে গিয়েছে।” আনন্দ কুমার অবশ্য এখনও জানেন না, তাঁকে নিয়ে ছবির গল্পটা ঠিক কী। পরিচালকও তা বলতে চাননি। অনুরাগের কথায়, “এখনও স্ক্রিপ্ট লেখা হয়নি। জীবনীমূলক ছবি তৈরি করতে অনেকটা গবেষণা লাগে। তবে তাড়াতাড়িই কাজটা শুরু করব।” |