যখন যেমন, তখন তেমন। এই প্রবাদ ফের এক বার সত্যি প্রমাণ করল ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র।
গত এক দশকে চাকরির বাজার আর সদ্য বায়োডেটা তৈরি করা ছাত্রছাত্রীদের আকাঙ্খার পরিমাণ বদলে দিয়েছিল এই শিল্প। অনর্গল ইংরেজি বলা। রাতভোর কাজ। গাড়ি করে বাড়ি থেকে অফিস যাওয়া-আসা। সাধারণ ছাত্রের তকমা-আঁটা সদ্য চাকরি পাওয়ার নিরিখে বেতন অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেশি ডিগ্রিধারীদের সমান সমান। সব মিলিয়ে এ সব তথ্য মনে করিয়ে দেয় ছাত্রছাত্রীদের ‘আই টি প্রফেশনাল’ হয়ে ওঠার অদম্য আকর্ষণ। এত দিন আমজনতার কাছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের এটাই মুখ। কিন্তু সময়ের চাহিদা মেনে গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে বদলে গিয়েছে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) পরিষেবার চেহারাটা। সৌজন্যে বিশ্ব জোড়া আর্থিক মন্দা।
মেধা-কে পুঁজি করে এই শিল্পে কর্মসংস্থান ও বেতনের পরিমাণ, দু’টি ক্ষেত্রেই পারদ ছিল ঊধ্বমুখী। শুধুই বিপিও নয়, ক্রমে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের অন্যান্য ক্ষেত্রও একে একে দখল করেছে ভারতীয়রা। কিন্তু সাফল্যের এই আলো ঝলমলে ছবিটা ফিকে হতে শুরু করে ২০০৮ সালের শেষ থেকে। তার আগে গত ২০০২ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত পাঁচ বছরে সফটওয়্যার ক্ষেত্রে রফতানি বৃদ্ধির হার ছিল ৩০%। মন্দার প্রকোপে তা এক ধাক্কায় প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল। ব্যবসা কমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমতে শুরু করেছিল কর্মসংস্থানের সুযোগও।
সেই মন্দার মেঘ কেটেছে। ব্যবসার পরিমাণও আবার বেড়েছে। কিন্তু ২০০৮ সালের মতো হাল না হলেও, কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে এখনও আগের মতো ঝুঁকি নিতে নারাজ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থারা। আগে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে লোক নেওয়ার ক্ষেত্রে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ত বড় সংস্থাগুলি। ভবিষ্যৎ ‘প্রজেক্ট’-এর কথা মাথায় রেখে আগেভাগেই কর্মী নিয়ে বসিয়ে রাখা হত। মন্দার জেরে এখন সেই ‘বেঞ্চ’-এ বসিয়ে রাখার প্রবণতা কেটেছে। তাই কর্মী নেওয়ায় ভেবেচিন্তে পা ফেলছে সংস্থারা। পাশাপাশি, বদলে গিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজের ধরনও। এখন অনেক বেশি মাত্রায় নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মী তৈরির দিকে নজর দিচ্ছে সংস্থাগুলি।
আর এই বদলে যাওয়া পরিস্থিতিই ‘সারভাইভাল অফ ফিটেস্ট’ বা যোগ্যতম ব্যক্তির টিঁকে থাকার জায়গা তৈরি করেছে।
ইনফিনিটি নলেজ ভেঞ্চার্স-এর কর্তা কল্যাণ কর জানান, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেই নতুন ধরনের চিন্তা ভাবনা করতে বাধ্য হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহল। বেশি করে কর্মী নিয়োগের বদলে সংস্থার মধ্যে থেকে দক্ষ লিডার তৈরির পথে হাঁটছে সংস্থাগুলি। কল্যাণবাবু বলেন, “এখন সংস্থাগুলির একটাই চিন্তা। কী ভাবে খরচ কমিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও ফলপ্রদ করে তোলা যায়। আর এ জন্য প্রয়োজন বিশেষ প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার। তাই কর্মী নিয়োগ ও মানবসম্পদ ১০০% কাজে লাগানোর জন্য কৌশল বদলাচ্ছে তারা।” |
• সফটওয়্যার টেস্টিং
• ডিজানিং ওয়েব ও গ্রাফিক্স
• সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন ইন্টারনেটে নিজেদের উপস্থিতি জোরদার করতে চায় সব সংস্থা। তার জন্য এই বিভাগটির চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে পিএইচপি, রুবি, পাইথন ও পার্ল-এর মতো বিশেষ প্রোগ্রামিং জানা জরুরি
• মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ফোনে ছবি তোলা, গান শোনা, ফিল্ম দেখা, নতুন শহরে এসে বই-এর দোকান বা রেস্তোঁরা খোঁজা, সবই নিমেষে নিখুঁত ভাবে করে ফেলা যায় বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপস)-এর মাধ্যমে
• সফটওয়্যার আর্কিটেকচার
• সফটওয়্যার অ্যানালিটিকস
• কনটেন্ট রাইটিং
• ডেটা ওয়্যারহাউজিং
সুপর্ণবাবুর মতে, যে বিষয়গুলির প্রাধান্য বাড়ছে, সেগুলিতে চাকরি পেতে দক্ষতাই বড় কথা। ডিগ্রি নয়। সেই সূত্রেই ইঞ্জিনিয়ারিং বা সংশ্লিষ্ট বিভাগের বাইরেও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের চাহিদা বাড়ছে। তাই সাধারণ স্নাতকও পারেন এই সব কাজের কাজের জন্য নিজেকে তৈরি করে নিতে।
দিশা দেখাবে ৩ ক্ষেত্র
মোবাইল কম্পিউটিং
হাতে ধরা মোবাইলে তথ্য আদানপ্রদান ও অন্যান্য কম্পিউটার-নির্ভর কাজকর্ম
ক্লাউড কম্পিউটিং
মোবাইল বা কম্পিউটারে না রেখে ইন্টারনেটেই ছড়িয়ে থাকা তথ্যের সম্ভার
সোশ্যাল মিডিয়া
ফেসবুক, অর্কুট, ট্যুইটার-সহ বিভিন্ন যোগাযোগের ‘অনলাইন’ মাধ্যম |