বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছিল বহতা নদী,
নুড়ি ঘেঁটে বলল কৌতূহল

প্রমাণ আগেও মিলেছিল। তবে এ বারে যা দেখা গেল, তা সম্ভবত প্রমাণের থেকেও বেশি।
মঙ্গলের বুক চিরে নদীখাতের স্পষ্ট চিহ্ন। নাসার মঙ্গলযান ‘কিউরিওসিটি’-র ক্যামেরায় ধরা পড়ল তারই ছবি। আর সেই সঙ্গে ফের উস্কে দিল পুরনো প্রশ্নটাই, “তবে কি প্রাণ ছিল মঙ্গলে?”
মাস দেড়েক হয়ে গেল মঙ্গলের ‘গেল ক্রেটার’-এ আস্তানা গেড়েছে ‘কিউরিওসিটি’। ৬ অগস্ট লাল গ্রহে পা রাখার পর থেকেই নাসার গবেষণাগারে একের পর এক ছবি পাঠিয়ে চলেছে সে পাথর, মাটি, পাহাড়। তবে এ মাসের শুরুতে কিউরিওসিটি-র পাঠানো কয়েকটা ছবি দেখে চমকে যান বিজ্ঞানীরা। লাল গ্রহের মাটিতে নদীখাতের স্পষ্ট চিহ্ন! মাউন্ট শার্পের পাদদেশে পাথরগুলোও যেন গ্রহের অন্যান্য অংশের পাথরের থেকে বেশ অন্য রকম।
রহস্য নিরসনে কোমর বেঁধে নেমে পড়ে নাসা। কিউরিওসিটির পাঠানো ছবি থেকে এমনই দুই পাথর ‘হট্টাহ’ এবং ‘লিঙ্ক’ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। বেশ কিছু পাথরকুচি একসঙ্গে জমাট বেঁধে যে চেহারা নেয়, পাথরগুলো দেখতে অনেকটা সেই রকম। ‘নদীখাতে’ মাটির উপর জেগে রয়েছে সেগুলি। এ ছবিটাই বেশ চেনা লেগেছিল গবেষকদের। পৃথিবীতে এমন দৃশ্যই তো দেখা যায়। জলের তোড়ে বয়ে যাওয়ার সময়, নদীর বুকে পাথরগুলো এই চেহারাই নেয়।
তফাত্ নেই
বলে না দিলে বোঝার উপায় নেই কোনটা মঙ্গলের, কোনটা এই পৃথিবীরই চেনা কোনও নদীর খাত। নাসার রোভার কিউরিওসিটির ক্যামেরায় মঙ্গলের নুড়ি-পাথর (নিচে)। উপরে পৃথিবীর। জলের ধারায় ক্ষয়ে ক্ষয়ে এখানে যেমন গোল আকার পায় নদীর পাথর, তৈরি হয় বালি-কাঁকর, ওখানেও রয়েছে তেমনটিই। তাই মঙ্গলেও ছিল খরস্রোতা নদী, বলছে কিউরিওসিটির চোখ। ছবি: রয়টার্স, এএফপি
তাই নদীখাতের চিহ্নের পাশাপাশি ‘হট্টাহ’ বা ‘লিঙ্কে’র উপস্থিতিও মঙ্গলের ইতিহাসে জলস্রোতের ‘পাল্লা ভারী’ করছে। এমন পাথর যখন রয়েছে, তখন কোনও এক সময়ে নিশ্চয় জলও ছিল।
পাথরগুলোর আকার দেখেও বিস্মিত গবেষকরা। এত বড় মাপের পাথর যদি জলের স্রোতে বয়ে যেতে পারে, তা হলে জলের গতিবেগও ভালই ছিল। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম ডেটরিচ বলেন, “পাথরগুলোর আকার দেখে মনে হচ্ছে সেকেন্ডে অন্তত ৩ ফুট বেগে ছুটত এই নদীর ধারা।” তাঁর আরও দাবি, “কোথাও গোড়ালি অবধি, কোথাও আবার জল ছিল কোমর পর্যন্ত।”
পাথরের গোলাকৃতি দেখে বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলের টানে অনেকটা পথ গড়িয়ে নেমেছে সেগুলো। পথে জলের ধাক্কা খেতে খেতেই ওই চেহারা নিয়েছে। এর পর গতি কমিয়ে নদীখাত ‘পিস ভালিস’ প্রবেশ করেছে ‘হাতপাখার’ মতো দেখতে বিশাল এক অংশে। যেখানে মাটির উপর ‘পাখার’ একাধিক ‘শিরায়’ নদীখাতের ছাপ স্পষ্ট। আর তা থেকেই বিজ্ঞানীদের দাবি, নিছক কয়েক বছরে তৈরি হয়নি এই দাগ। কয়েকশো বছর ধরে বয়ে চলা খরস্রোতেরই স্মৃতিচিহ্ন এটা।
কিউরিওসিটির অনেক উদ্দেশ্যের একটি হল, মঙ্গলের মাটিতে ‘বাসযোগ্য’ জায়গা খুঁজে বার করা। তাই ‘পিস ভালিস’-এর সন্ধান পেয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত বিজ্ঞানীরা। ডেটরিচ বলেন, “এত দীর্ঘ নদীখাত রয়েছে যেখানে, সে জায়গাটা বসবাসের পক্ষে নিশ্চয়ই ভাল।”
‘মিস কৌতূহল’ এখন গবেষণায় ব্যস্ত মাউন্ট শার্পের পায়ের কাছে। আর তার কাছ থেকে আরও চমকের অপেক্ষায় নাসা। এবং এই গ্রহের তাবৎ মানুষ।

টাইটান-যাত্রার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল বিজ্ঞানীদের
কিউরিওসিটির মঙ্গলযাত্রার পরে এ বার শনির উপগ্রহ টাইটানে যাওয়ার ভাবনা-চিন্তা শুরু করলেন বিজ্ঞানীরা। এই নতুন অভিযানে টাইটানের বৃহত্তম জলাশয়, ‘লাইজেইয়া মারে’কে নিয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চান বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি ‘সেনার’ নামে একটি বেসরকারি প্রযুক্তি ও কারিগরি গোষ্ঠীর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে স্পেনের একটি মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র এই অভিযানের পরিকল্পনা শুরু করেছে। ‘সেনার’ সূত্রে খবর, প্রকল্পটির নাম, “টাইটান লেক ইন-সিটু স্যাম্পলিং প্রোপেলড এক্সপ্লোরার” (ট্যালিস)। বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে, এই অভিযানে একটি বিশেষ ভাবে তৈরি নৌকা ভাসানো হবে লাইজেইয়া-মারের জলে। তার পর সব চেয়ে কাছের উপকূলের খোঁজে স্বয়ংক্রিয় ভাবেই চলতে থাকবে ওই নৌযান। এবং এই যাত্রাপথেই টাইটানের জল নিয়ে বিভিন্ন রকম তথ্য খুঁজবে যানটি। পেলেই পাঠিয়ে দেবে বিজ্ঞানীদের কাছে। বিশেষজ্ঞরা আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই তথ্য থেকে টাইটান পৃষ্ঠ সম্পর্কেও জানতে পারা যাবে। তবে আপাতত পুরো পরিকল্পনাটিই প্রাথমিক স্তরে রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.