|
|
|
|
বেতন বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলনে অচল সুতোর কারখানা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মালদহ |
দাবি মতো শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি না করায় পুরাতন মালদহের নারায়ণপুরে রেশমের সুতো তৈরির কারখানার উৎপাদন প্রায় ৪৮ ঘণ্টা বন্ধ করে রেখেছে সিটু। ওই কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, অচলাবস্থা কাটিয়ে আগামি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কারখানা না খুললে ১০ লক্ষাধিক টাকার রেশমের সুতো নষ্ট হয়ে যাবে। সিটু অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, তাঁদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
মজুরি বাড়ানো নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে এই নিয়ে এই মাসেই রাজ্যের তিনটি লাভে চলা কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হল। সম্প্রতি ডানকুনির ভগবতী বিস্কুট কারখানা বন্ধই করে দিয়েছে মালিকপক্ষ। কারখানা কর্তৃপক্ষকে টানা ২৩ ঘণ্টা শ্রমিকেরা ঘেরাও করে রাখার পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে উলুবেড়িয়ার করোনেশন ইন্ডাস্ট্রিজও।
মালদহের রেশমের সুতো কারখানাটির মোট সাড়ে পাঁচশো শ্রমিকের পাঁচশো জনই সিটু নিয়ন্ত্রিত ইউনিয়নের সদস্য। সিটুর দাবি, তিন বছরে ধাপে ধাপে এই কারখানার সব শ্রমিকের বেতন ২৮০০ টাকা করে বাড়াতে হবে। এখন এই কারখানার শ্রমিকেরা ন্যূনতম ২১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পান। সিটুর দাবি, শ্রমিকেরা এখন যিনি যত টাকা পান, তাঁর মাইনে প্রথম বছরে ১৭০০ টাকা করে, দ্বিতীয় বছরে ৬০০ টাকা করে এবং তৃতীয় বছরে ৫০০ টাকা করে বাড়ানোর চুক্তি করতে হবে। |
|
নারায়ণপুরের কারখানায় সিটুর বিক্ষোভ। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায় |
কিন্তু কারখানার ম্যানেজার মনোজ জৈনের কথায়, “আমরা ২১০০ টাকা করে বেতন বৃদ্ধিতে রাজি ছিলাম। কিন্তু সিটু নেতারা ২৮০০ টাকার দাবিতেই অনড় থাকেন। এমনকি, ওই দাবিতে এক করণিককে শ্রমিকেরা মারধরও করেছেন। আর বুধবার থেকে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন শুরু করে দিয়েছেন।” তাঁর দাবি, “আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কারাখানা না খুললে ১০ লক্ষ টাকার সুতো নষ্ট হয়ে যাবে।” তবে নিজেদের দাবিতে অনড় সিটুর নেতৃত্বে শ্রমিকেরা। সিটুর জেলা সম্পাদক রূপম সেন বলেন, “মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির চুক্তি নিয়ে প্রায় ৬ মাস ধরে টালবাহানা করছেন। মালিকপক্ষ দাবি না মানা অবধি কারখানা খুলবে না। আন্দোলন চলবে।”
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, নারায়ণপুরের ওই কারখানায় প্রতি তিন বছর পর মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক সংগঠনের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি হয়। চলতি বছরের ৩১ মার্চ সেই চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ৬ মাস ধরে একাধিকবার বৈঠক করার পরেও এ বারের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে সমস্যা মেটেনি। জেলা শ্রম দফতরের সহকারী কমিশনার দেবু কর বলেন, “শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে মালিকপক্ষের কয়েকবার আমাদের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। বেতন নিয়ে প্রথমে দুই তরফে দাবি, পাল্টা বক্তব্যের প্রায় ২ হাজার টাকা পার্থক্য ছিল। পরে তা ৬০০-৭০০ টাকায় এসে দাঁড়ায়। আমাদের আশা ছিল, বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যা মিটবে। তার আগেই শ্রমিকেরা কারাখানা বন্ধ করে আন্দোলনে নেমে পড়েছেন।”
কারখানা সূত্রের খবর, বুধবার মালিকপক্ষের সঙ্গে সংগঠনের নেতৃত্বের বৈঠকের পরেই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ম্যানেজার ও অন্য কর্মীদের কারখানার মধ্যে আটকে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। গভীর রাতে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। তারপরে গেটে তালা ঝুলিয়ে শুরু হয় অবস্থান বিক্ষোভ। মালদহের জেলা পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “কারখানায় যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য পুলিশ নজর রাখছে। কারখানার সামনে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।”
রেশমের গুটি থেকে সুতো বার করার পর পরিত্যক্ত ঝুট আগে ফেলে দেওয়া হত। সেই পরিত্যক্ত ঝুট থেকেও সুতো তৈরি করতে এই কারখানাটি গড়া হয়। বর্তমানে কারখানার উৎপাদিত সুতো জাপান, ইতালি, ইংল্যান্ড, জার্মানি-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন এআইটিটিইউসি’র মালদহ জেলা সভাপতি মানব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “কারখানা খোলা রেখে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন করা যেতে পারত। কিন্তু সিটুর এ ভাবে আন্দোলনে লাভে চলা একটি কারখানা অচলাবস্থার মধ্যে পড়ল।” |
|
|
|
|
|