উত্তরে উৎসব-আকাশে বাঘ-চিল-ট্রেন
ত্তরবঙ্গের আকাশ ঘুড়ি দেখেছে। কিন্তু তা নেহাতই এক ফুট বাই এক ফুটের চৌকো ছোট্ট ঘুড়ি। এ দিন যা দেখল তাতে শুধু আনন্দ নয়, উচ্ছ্বসিত শিশু-যুবা সকলেই। একবার মনে হচ্ছে একটা হলদে রংয়ের ডোরাকাটা ‘বাঘ’ আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবার একটি চিল ছুটছে একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে। একসঙ্গে উড়ছে ১০১টি ঘুড়ি। একজন দেবীও যেন আকাশে। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ক্রিকেট মাঠে ‘ঘুড়ি উৎসব’ অনুষ্ঠিত হল। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৯ জন তাঁদের বানানো ঘুড়ি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সেখানে। উৎসব সূচনা করেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী রচপাল সিংহ। তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গে পর্যটনের প্রসারে শিলিগুড়িতে ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। দার্জিলিং, ডুয়ার্স, তরাইয়ের প্রতি যাতে আরও বেশি সংখ্যক পর্যটকের আকর্ষণ বাড়ে সে চেষ্টা করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে প্রথমবারের উৎসবে ভাল সাড়া পড়েছে। উৎসব পর্যটকদের মন কাড়বে বলে আশা করছি।” উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। তিনি বলেন, “রং-বেরংয়ের ঘুড়ি দেখে খুব ভাল লাগছে। একটা উৎসবের আনন্দ সবাই উপভোগ করছেন। পরবর্তীতে উৎসব আরও আকারে করার ইচ্ছে আছে।”
—নিজস্ব চিত্র।
মহারাষ্ট্রের গোল্ডেন কাইট ক্লাবের ছয় সদস্য যোগ দেন ঘুড়ি উৎসবে। তাঁরা ‘ট্রেন’ ‘ডেল্টা’, ‘বক্স’, ‘কোবরা’-ঘুড়ি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। দলের সদস্য সেহেজাদা অব্বাস ১০১টি ঘুড়ির সমণ্বয়ে তৈরি রঙিন ‘ট্রেন কাইট’ প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে আকাশে উড়িয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দীপক কাপাড়িয়া, দিলীপ কাপাড়িয়া, আব্দুল রউফ। তাঁরা নানা ঘুড়ি উড়িয়েছেন। দিলীপবাবু জানান, তাঁদের একেকটি ঘুড়ি ১০ ফুটের উপরে। ২০-২৫ ফুটের ঘুড়িও রয়েছে। দিনয়েক আগে তাঁরা ফ্রান্সে ঘুড়ি ওড়ানো আন্তর্জাতিক প্রতিয়োগিতায় যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে ৬৬টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গে এই প্রথম ঘুড়ি ওড়াতে এসেছি। খুব সুন্দর মাঠ। আয়োজনও খুব ভাল। তবে আর একটু বাতাস থাকলে ভাল হত।” গুজরাটের আহমেদাবাদ থেকে ঘুড়ি উৎসবে যোগ দেন ভাবনা শৈলেশ মেহতা। তিনি লোক শিল্পীদের ছবি আকানো ঘুড়ি, দেবীর মুখ আঁকানো ঘুড়ি নিয়ে উৎসবে যোগ দেন। তিনি দাবি করেন, ভারতবর্ষে তিনিই প্রথম মহিলা যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুড়ি উড়িয়েছেন। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। মুম্বইয়ের ধানুয়া থেকে ‘টাইগার ঘুড়ি’ নিয়ে হাজির হন অশোক সা। তাঁর ঘুড়ি অনেকের নজর কেড়েছে। তিনি বলেন, “বাতাস কম থাকার জন্য কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।” ঘুড়ি উৎসবে উত্তরবঙ্গের একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন হাকিমপাড়ার রথীন পাল। তিনিও বিভিন্ন ধরণের ঘুড়ি নিয়ে যান। তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গের মানুষ ছোট ঘুড়ি দেখেছেন। এই ধরণের ঘুড়ি এবারেই প্রথম। আমি খুব আনন্দিত।” প্রথমবার ঘুড়ি উৎসবে অনেকটাই সফল বলে দাবি করেছেন ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সম্রাট সান্যাল। তিনি বলেন, “প্রথমবার ঘুড়ি উৎসব অনেকটাই সফল হয়েছে। এর থেকে একটা বার্তা আমরা পর্যটকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারব বলে মনে করছি। আর উত্তরবঙ্গের মানুষ তো এই ধরণের ঘুড়ি প্রথম দেখলেন। আশা করছি, পরবর্তীতে এই উৎসব আরও বড় আকারে হাজির হবে।”রাজ্য পর্যটন দফতর, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করেন। সহযোগিতায় ছিল ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন। এদিন সকাল ৮টা নাগাদ শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকা থেকে পদযাত্রার মাধ্যমে উৎসব শুরু হয়। পদযাত্রায় পর্যটন মন্ত্রী, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী অংশ নেন। অনুষ্ঠান মঞ্চে শিলিগুড়ির মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত উপস্থিত ছিলেন। ঘুড়ি উৎসবের মাঠে দিনভর আদিবাসী নৃত্য, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.