আরে, ছোট্ট মেয়েটা এলোচুলে ছুটে যাচ্ছে না? ওই তো ওখানে কেশর ফুলিয়ে পশুরাজ... মেঘের রাজ্যে এমন আকছারই হয়। চেনামুখের সারি মাঝেমধ্যেই ভিড় করে আকাশে। কিন্তু মেঘমুলুকে এমন ঢেউ কই আগে তো চোখে পড়েনি! আর তাতেই মেঘের ‘গায়ে’ সন্দেহজনক ‘টকটক গন্ধ’ পাচ্ছেন আবহবিদরা। অনেকেই বলছেন, এ মেঘ অচেনা, একেবারে স্বতন্ত্র গোত্রের। নাম দিয়েছেন ‘আনডুলেটাস অ্যাসপেরাটাস’। যার অর্থ ‘রাগি মেঘ’।
সালটা ২০০৬। সে বছরই প্রথম ‘নজরবন্দি’ করা হয় ‘আনডুলেটাস’কে। আমেরিকার আইওয়ার সেডার-র্যাপিড শহরের আকাশে মেঘের এমন অচেনা ভঙ্গি দেখে ছবি তুলে পাঠান এক ব্যক্তি। পুকুরের জলে ঢিল ছুড়লে যেমন স্রোত উঠে, মেঘের ধরনটা অনেকটা সে রকম। আকাশ জুড়ে একের পর এক বিশাল মেঘের ঢেউ। এর পর থেকে বিভিন্ন দেশে বহু বারই ক্যামেরাবন্দি হয়েছে ‘আনডুলেটাস’। কখনও ফ্রান্সে, কখনও নরওয়ে, কখনও আবার স্কটল্যান্ড, কিংবা ডেভনের স্যালকম শহরে।
আপাতত ‘আনডুলেটাস’-এর আলাদা পরিচিতির দাবিতে জেনিভায় ‘ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিকাল অর্গানাইজেশনে’র কাছে আবেদন জানিয়েছে ব্রিটেনের ‘ক্লাউড অ্যাপ্রিসিয়েশন সোসাইটি’ (ক্যাস)। তাদের আরও দাবি আন্তর্জাতিক মেঘ মানচিত্রে জায়গা দেওয়া হোক ‘আনডুলেটাস’কে। |
গবেষণা এখনও জোরকদমে চলছে। দাবি, পাল্টা দাবি। রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহবিদ গ্রেম অ্যান্ডারসনের বক্তব্য, এই মেঘটির চরিত্র অনেকটাই ‘মাম্মাটাস’ মেঘের মতো। এ ক্ষেত্রে, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার তারতম্যের জন্য স্তরে স্তরে মেঘ জমা হয়। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পরে আর্দ্র বাতাসের সঙ্গে শুকনো হাওয়া মিশে ‘আনডুলেটাস অ্যাসপেরাটাস’ তৈরি হয়। ‘মাম্মাটাস’-এর সঙ্গে এর তফাত, ‘আনডুলেটাস’-এ প্রচণ্ড হাওয়ায় মেঘের মধ্যে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। ক্যাসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট গেভিন পিটার-পেনির অবশ্য দাবি, ‘মাম্মাটাস’-এর তুলনায় এই মেঘ গরম। মেঘের উপরের দিকে ভিজে হাওয়ার স্রোত। নীচের দিকে হাওয়া অনেকটা শুকনো, বেশ ঠান্ডা। মেঘের মধ্যে দিয়ে দ্রুত গতিতে হাওয়া চলাচলের সময় তৈরি হয় একের পর এক ঢেউ।
গেভিনের আশা, “আনডুলেটাস-এর বিষয়ে ভাল করে খতিয়ে দেখলে, বিশ্ব উষ্ণায়ন বা আবহাওয়ার ক্রমশ বদলে যাওয়া চরিত্র সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য মিলতে পারে।” কলকাতার আবহবিদরা অবশ্য জানাচ্ছেন, এ ধরনের মেঘ ভারতীয় আবহাওয়ায় তৈরি হয় না। সাধারণত ইউরোপের দেশেই দেখা যায়।
লড়াইয়ে জিততে আপাতত ক্যাস বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ‘রাগি’ মেঘের ছবি সংগ্রহে ব্যস্ত। গবেষণার বেশির ভাগ কাজই চলছে রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইতিমধ্যেই তাঁদের গবেষণাপত্রটি ‘রয়্যাল মেটেরোলজিক্যাল সোসাইটি’-র কাছে জমা দিয়েছেন গবেষকেরা।
১৯৫১ সালে মেঘ মানচিত্রে শেষ বার নাম উঠেছিল ‘সিরাস ইনটরটাস’-এর। ৬১ বছর পরে নিজেদের ‘রাগি’ মেঘের পরিচিতি নিয়ে তাই রীতিমতো উত্তেজিত ক্যাসের ৩০ হাজার সদস্য। ‘মেঘমুদ্ধ’রা এখন অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন জেনিভার দিকে। |