|
|
|
|
এ বার ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ |
অধ্যক্ষকে চড়, ফের কাঠগড়ায় তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
ফের কলেজ চত্বরেই অধ্যক্ষ নিগ্রহের অভিযোগ। এ বারে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) জেলা সহ-সভাপতি সৌমেন আচার্যের বিরুদ্ধে কলেজ চত্বরের মধ্যেই অধ্যক্ষের গালে সপাটে ‘চড়’ মারার অভিযোগ উঠল। অধ্যক্ষ কিশোরকুমার রাঢ়ীকে বাঁচাতে গিয়ে কলেজের এক শিক্ষক জখম হন। অভিযোগ পেয়েও পুলিশ সৌমেনকে গ্রেফতার না করায় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে।
অভিযুক্ত সৌমেন টিএমসিপি’র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সহ-সভাপতি। জেলা টিএমসিপি নেতৃত্ব সৌমেনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মারধর ও খুনের চেষ্টার পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন ওই ছাত্র নেতা। ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ কোনও মন্তব্য না করলেও জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।” শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে দেখব, সেখানে ঠিক কী হয়েছিল।”
ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে ‘অশান্তি’র অন্যতম কারণ দীর্ঘ দিন ছাত্র সংসদের নির্বাচন না হওয়া। এ দিনের গোলমালের পিছনেও সেই কলেজ নির্বাচনই। জঙ্গলমহলে অস্থিরতার জেরে ২০০৭-এর পর থেকে ওই কলেজে নির্বাচন হয়নি। গত বছর এসএফআই হাইকোর্টে আবেদন করলে আদালত ছাত্র সংসদ নির্বাচনে স্থগিতাদেশ দেয়। সম্প্রতি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুজোর আগে বিভিন্ন কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচন করার নির্দেশ দেন। |
|
রাজ কলেজের প্রহৃত অধ্যক্ষ কিশোরকুমার রাঢ়ী। —নিজস্ব চিত্র |
অধ্যক্ষের অভিযোগ, ওই নির্দেশের কথা জেনে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ অগ্রাহ্য করেই তাঁকে এ দিন নির্বাচনের জন্য সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে চাপ দেয় কিছু ছাত্র। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, যে সব কলেজে আদালতের স্থগিতাদেশ নেই, শুধু মাত্র সেখানেই পুজোর আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন শেষ করতে শিক্ষা দফতর নির্দেশ দিয়েছে।
রাজ কলেজের পরিস্থিতি তেতে ওঠে শুক্রবার। ছাত্রাবাসের ছাদ থেকে চাঙড় খসে পড়া নিয়ে কিছু আবাসিক কলেজের গেট আটকান। সেই সময় সৌমেনের নেতৃত্বে টিএমসিপি-র ছেলেরা তাঁদের মারধর করে সরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। এ নিয়ে অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ জানান আবাসিকেরা। এ দিন সকালে ওই আবাসিকেরা কলেজ চত্বরে জড়ো হতেই দলবল নিয়ে সৌমেন ফের তাঁদের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ দু’পক্ষের গোলমাল থামাতে যান অধ্যক্ষ। তাঁর অভিযোগ, “মারপিট থামাতে যেতেই সৌমেন গালিগালাজ করে সপাটে চড় মারে আমাকে। মুখেও ঘুষি মারে। ওর লোকেরা আমাকে লাঠিপেটা করে। বাঁ চোখে চোট পাই।” অধ্যক্ষের দাবি, তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে হামলাকারীদের লাঠির ঘায়ে বুকে আঘাত পান রসায়নের শিক্ষক শ্রীষ্ণু কুণ্ডু। মারামারিতে সৌমেনের মাথা ফাটে। জখম হন এক আবাসিক। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ক্ষোভ, “বৈঠকের জন্য পুলিশ আগে থেকেই কলেজ চত্বরে হাজির ছিল। কিন্তু তারা মারপিট থামায়নি!” |
বারবার আক্রান্ত |
৫ জানুয়ারি, ২০১২ |
রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজ।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের উপরে হামলা।
অভিযুক্ত স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা। |
|
৭ জানুয়ারি, ২০১২ |
|
মাজদিয়া সুধীরঞ্জন লাহিড়ী কলেজ।
পাঁচ ছাত্রের হাতে ‘নিগৃহীত’ হলেন
অধ্যক্ষ। অভিযুক্ত এসএফআই। |
১১ জানুয়ারি, ২০১২ |
রামপুরহাট কলেজ। ছাত্রদের বিক্ষোভে
অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান অধ্যক্ষ।
অভিযুক্ত টিএমসিপি ও ছাত্র পরিষদ। |
|
|
টিএমসিপি-র ‘তাণ্ডব’ অবশ্য এর পরেও থামেনি। কলেজে অ্যাম্বুল্যান্স এলে সৌমেনকে আগে হাসপাতালে পাঠাতে হবে, এই দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় তারা। পরে ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধ্যক্ষকে এ দিনই ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করতে হবে দাবি তুলে ফের বিক্ষোভ শুরু করে তারা। শেষ পর্যন্ত তাদের দাবি মেনে বৈঠকে বসেন অধ্যক্ষ। পরে তিনি জানান, ১৩ অক্টোবর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দিন স্থির করা হয়েছে। স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও অধ্যক্ষ কী ভাবে নির্বাচনের দিন ঠিক হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অধ্যক্ষের দাবি, ‘কিছু ছাত্রের’ চাপেই নির্বাচনের দিন ঠিক করতে হয়েছে তাঁকে। আদালতের স্থগিতাদেশের কথা অস্বীকার করে টিএমসিপি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা চেয়ারম্যান রমাপ্রসাদ গিরির দাবি, “হাইকোর্ট ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে স্থগিতাদেশ দেয়নি। নির্বাচন করার জন্য আমরা অধ্যক্ষকে কোনও চাপও দিইনি।”
অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ উড়িয়ে সৌমেনের পাল্টা দাবি, “অধ্যক্ষ আবাসিকদের দিয়ে আমাকে মারধর করিয়েছেন।” জেলা টিএমসিপি-সভাপতিও বলেন, “এসএফআই-সহ কিছু বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ও কিছু মাওবাদী সমর্থক পরিকল্পিত ভাবে সৌমেনের মাথা ফাটিয়ে দেয়। তারাই অধ্যক্ষকে মারধর করে।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডার কটাক্ষ, “তৃণমূল সব ক্ষেত্রেই গা-জোয়ারি করছে। এই কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়েও তা-ই করছে।” ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক তথা ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক দেবাশিস সরকার বলেন, “ঘটনাটা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে জানানো হবে। শিক্ষামন্ত্রীকেও জানানো হবে।”
এ বছরের গোড়া থেকেই রাজ্যের কলেজগুলিতে ‘অধ্যক্ষ-লাঞ্ছনা’ নিয়মিত ব্যবধানে ঘটছে। রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজে টিএমসিপি, রামপুরহাট কলেজে টিএমসিপি ও ছাত্র পরিষদ ও মাজদিয়া সুধীরঞ্জন লাহিড়ী কলেজে এসএফআই ছিল কাঠগড়ায়। এ দিন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “অসন্তোষ থাকলে আলোচনা করুন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করবেন না।” যদিও কী ভাবে এই ‘বিশৃঙ্খলা’ ঠেকানো সম্ভব, তা স্পষ্ট নয় অনেকের কাছেই। |
|
|
|
|
|